(ডান দিকে) ‘জওয়ান’ ছবিতে শাহরুখের লুকে অনুরাগীরা। অনুরাগীর হাতে ‘জওয়ান’ ছবির পোস্টার (ডান দিকে)। —নিজস্ব চিত্র।
বছরের শুরুতে ‘পাঠান’ মুক্তির আগে ছবি ঘিরে তৈরি হয়েছিল বিতর্ক। ‘বয়কট গ্যাং’ সক্রিয় হলেও দেশ জুড়ে অনুরাগীদের শাহরুখ-যাপনে কোনও ভাটা পড়েনি। সাত মাস পর বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শহরে একই চিত্রের পুনরাবৃত্তি চোখে পড়ল। উত্তর থেকে দক্ষিণ, মাল্টিপ্লেক্স থেকে শুরু করে সিঙ্গল স্ক্রিনে অনুরাগীদের মুখে একটাই শব্দবন্ধ— ‘আজ জওয়ান দিবস’।
বৃহস্পতিবার শহরে ভোর পাঁচটায় ‘জওয়ান’-এর প্রথম শো হাউসফুল। দিন যত এগিয়েছে, পাল্লা দিয়ে একের পর এক প্রেক্ষাগৃহে ভিড় করেছেন শাহরুখ অনুরাগীরা। জায়গায় জায়গায় মিছিল করে তাঁরা সিনেমা হলে পৌঁছলেন। স্পিকারে বাজল ‘জওয়ান’-এর গান। স্লোগান উঠল, ‘‘উই লাভ ইউ শাহরুখ।’’ ছবিমুক্তির প্রথম দিনে শহরের প্রেক্ষাগৃহে যেন শাহরুখ-জ্বরের উত্তাপ। প্রথম শো-এর পর থেকেই সমাজমাধ্যমে ‘পাঠান’ এবং ‘জওয়ান’-এর তুলনা শুরু হয়ে গিয়েছে। প্রথম শোয়ে জওয়ান দেখে বেরিয়ে এক অনুরাগীর স্পষ্ট উত্তর, ‘‘তুলনা করে লাভ নেই। মা-বাবার মধ্যে যেমন তুলনা চলে না। তেমনই এই দুটো ছবি নিয়ে তুলনায় যেতে চাই না।’’
বৃহস্পতিবার শহরের বিভিন্ন প্রান্তে বিভিন্ন ফ্যানক্লাবের তরফে নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছিল। সকাল ন’টার দিকে ভবানীপুরের বিজলী সিনেমা হলের সামনে পৌঁছে দেখা গেল প্রেক্ষাগৃহের বাইরে ‘জওয়ান’ ছবির পোস্টার ফুল-মালায় সুসজ্জিত। সেখানে দুই ফ্যান ক্লাব একজোটে ছবির প্রথম শো দেখার তোড়জোড় করছে। ‘পাঠান’ মুক্তির দিন ‘এসআরকিয়ান স্কোয়াড’ প্রিয়া সিনেমায় ছবির উদ্যাপনে মেতেছিল। এ বার প্রিয়ায় ‘জওয়ান’ না থাকা নিয়ে ইতিমধ্যেই টলিপাড়ায় বিতর্ক দানা বেঁধেছে। এই প্রসঙ্গে ফ্যান ক্লাব কোনও মন্তব্য করতে নারাজ। ফ্যান ক্লাবের তরফে অর্ণব দাশগুপ্ত বললেন, ‘‘আমরা কাউকে দোষ দিতে চাই না। বিতর্ক চাই না। শাহরুখের ছবি বড় পর্দায় দেখতে পারছি। আর কিছু চাই না।’’
শাহরুখের বড় হোর্ডিংয়ে কেউ দুধ ঢেলে স্নান করালেন। কেউ আবার কেক কেটে এক টুকরো বাদশার কাটআউটে ছোঁয়ালেন। প্রথম শোয়ের আগে বক্স অফিসে ছবির মঙ্গলকামনায় আরতি হল। পাশাপাশি চলল ‘জওয়ান’ গানের ছন্দে পা মেলানো। ইতিমধ্যে রাস্তা দিয়ে মিছিল করে অনুরাগীদের এগিয়ে আসতে দেখা গেল। হাতে শাহরুখের পোস্টার। মহিলা-পুরুষ নির্বিশেষে ‘শাহরুখ’ ধ্বনি তুলে গলা ফাটালেন তাঁরা। ট্রেলার প্রকাশের পর থেকেই ছবিতে শাহরুখের গায়ে ব্যান্ডেজ বা টাকা মাথা লুকে বুঁদ অনুরাগীরা। মিছিলে সারা গায়ে ব্যান্ডেজ জড়িয়েও কয়েক জন হাজির হয়েছেন। এক জন বললেন, ‘‘প্রত্যেক বারেই গুরুদেবের ছবির লুক জনপ্রিয় হয়। আমরাও চেষ্টা করি এই দিনে তাঁর মতো সেজে কিং খানকে শ্রদ্ধা জানাতে।’’
ও দিকে বেলা গড়াতেই বেহালার অশোকা সিনেমা হলের সামনেও একই চিত্র ধরা পড়ল। সেখানে তখন ‘জওয়ান’-এর প্রথম দিনের প্রথম শো দেখার প্রস্তুতি নিচ্ছেন শাহরুখ খানের বেহালা ফ্যান ক্লাবের সদস্যেরা। বিগত ২৩ বছর ধরে শাহরুখের সিনেমা মুক্তির দিনে উৎসব করে আসছেন তাঁরা। ঢোলের তালে প্রিয় তারকাকে বরণ করতে দেখা গেল তাঁদের। শাহরুখের ছবিতে প্রণাম করে কারও প্রার্থনা, ‘জওয়ান’-এর পর ‘ডাঙ্কি’ যেন আরও ভাল হয়। ক্লাবের তরফে সুর্যেন্দ্র বাগচী বললেন, ‘‘আমাদের এখানে উন্মাদনা বেশি। কারণ কলকাতা ছাড়াও দক্ষিণ ২৪ পরগনা থেকেও প্রচুর অনুরাগী এসেছেন। পাশাপাশি, শাহরুখ খান আমাদের ক্লাবকে টুইটারে উত্তর দিয়েছেন। সেটাও আমাদের কাছে উপরি পাওনা।’’
বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত খোঁজ নিয়ে জানা গেল, শহরের অধিকাংশ প্রেক্ষাগৃহে ‘জওয়ান’-এর শোয়ের টিকিট বিক্রির হার ক্রমশ বেড়েছে। সিংহভাগ প্রেক্ষাগৃহে শো হাউসফুলও হয়েছে। হলমালিকেরা খুশি। খুশি অনুরাগীরা। এখন প্রথম দিনের ব্যবসার নিরিখে ‘পাঠান’কে ‘জওয়ান’ টপকে যেতে পারে কি না, সেটাই দেখার।