Kanchan Mullick

এখন তিনি কোটিপতি, কিন্তু বাবার চাকরি যাওয়ার পর মদের দোকানের সামনে রোজ কী করতেন কাঞ্চন?

সঞ্চালক হয়ে টিভির পর্দায় আত্মপ্রকাশ। তার পর ধীরে ধীরে অভিনেতা, বিধায়ক। বর্তমানে কোটিপতি এই অভিনেতাকে, কেরিয়ারের শুরুতে নানা ধরনের কাজ করতে হয়েছে। শুনলে বিস্মিত হতে বাধ্য।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০২২ ১১:০০
কাঞ্চনের স্বীকারোক্তি।

কাঞ্চনের স্বীকারোক্তি। ফাইল চিত্র।

অভিনয়ের জন্য বরাবরই তিনি চর্চায়। যদিও শুরুটা হয়েছিল টিভির সঞ্চালক হয়ে। ছোট থেকেই অভিনয়ের প্রতি অনুরাগ। এগিয়ে চলার পথে কাঞ্চন মল্লিকের জীবনে প্রতিটা মোড়েই রয়েছে মোচড়। সংসারে অনেক অভাব-অনটন দেখেছেন তিনি। সে সব কাটিয়ে প্রতিটি লড়াইয়েই জয় ছিনিয়ে নিয়েছেন। সঞ্চালক-অভিনেতা থেকে এখন তিনি বিধায়ক। রোড শো সঞ্চালক থেকে অভিনেতা কাঞ্চনের যাত্রাপথ খুব যে মসৃণ ছিল তেমনটা নয়।

Advertisement

১৯৭০ সালে কলকাতার কালীঘাট এলাকায় জন্ম। মিত্র ইনস্টিটিউশনের ছাত্র ছিলেন কাঞ্চন। বাবা ছিলেন কারখানার কর্মী। সামান্য রোজগারেই চলছিল সংসার। কিন্তু কাঞ্চন যখন তৃতীয় শ্রেণিতে, বাবার কারখানার গেটের বাইরে পড়ল তালা। দিন কাটছিল সে ভাবেই। সংসারে টানাটানি তখন নিত্যসঙ্গী। অভিনেতা যখন মাধ্যমিক দেবেন আচমকাই ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরে গেল জীবন। এক ধাক্কায় বয়সটা যেন পাঁচ বছর বেড়ে গেল। বাবা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লেন, হারালেন কর্মক্ষমতা। সংসার চালাতে প্রয়োজন মাসিক ১২০০ টাকা। বড় ছেলে হওয়ায় পরিবারের হাল ধরতে অনেক কিছুই করতে হয়েছে তাঁকে। কষ্টের সংসার, তাই সেলসম্যান, পার্লারের ম্যানেজার— কী না করেছেন একটা সময়ে! কিন্তু অনেকেই জানেন না যে দশম শ্রেণিতে পড়ার সময় মদের দোকানের বাইরে সেলসম্যানের কাজ করতে হয়েছে তাঁকে। কাঞ্চনের কথায়, ‘‘তখন দশম শ্রেণিতে পড়ি, আচমকা বয়সটা যেন পাঁচ বছর বেড়ে গেল। কারণ বাবার সেরিব্রাল। মাসে ১২০০ টাকা প্রয়োজন সংসারে চালাতে, বাড়িতে সদস্য তখন সাড়ে পাঁচ জন। তাই সে দিনের সেই ছোট্ট ছেলেটাকে বেচুবাবুর চাকরি নিতে হল। তা-ও আবার মদের দোকানের বাইরে কোলা বিক্রির চাকরি। সেই দেখে এক জন সেই সময় বলেছিলেন ‘এত ছোট বয়সে মদের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে কোলা বিক্রি করছ, লজ্জা লাগে না?’ তখনই ওই লোককে জবাব দিই, সংসার চালাতে মাসে ১২০০ টাকার প্রয়োজন ১০০০ টাকা পেলেও চালিয়ে নেব, তিনি দিয়ে দিলে কাজটা ছেড়ে দেব।’’

সম্প্রতি অভিনেতা এক ডিজিটাল প্ল্যার্টফমে নিজের জীবন সফরের কথা তুলে ধরেছেন একটি অনুষ্ঠানে। অভিনেতা জানান, মদের দোকানের বাইরে ঠান্ডা পানীয় বিক্রির কাজ করতে হয়েছে তাঁকে। সেই সময় নানা ধরনের তির্যক মন্তব্য, সমালোচনা, তাচ্ছিল্য সহ্য করতে হয়েছে তাঁকে। আবার অভিনয় জীবনেও জায়গা করে নিতে বহু দিন সংগ্রাম করতে হয়েছে। দীর্ঘ সময় পর নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে পেয়েছেন। কলকাতায় ‘চেতনা’, ‘স্বপ্নসন্ধানী’র মতো একাধিক দলে নাটক করেছেন। প্রথম মঞ্চাভিনয় নব্বইয়ের দশকে ‘অচলায়তন’ নাটকে। টলিউডে তাঁর অভিষেক হয় ‘সাথী’ ছবির হাত ধরে। দেখতে দেখতে প্রায় ১৫০ ছবি করে ফেলেছেন। একাধিক টিভি সিরিয়ালেও কাজ করেছেন। কিন্তু প্রতিষ্ঠা, খ্যাতি পেয়েছেন ঠিকই, কিন্তু বির্তকও হয়েছে তাঁর দাম্পত্যজীবন নিয়ে। তবে সে সবের বাইরে গিয়ে কাঞ্চনের অভিনয় ও তাঁর হাস্যরস বার বার জয় করেছে দর্শকের মন।

Advertisement
আরও পড়ুন