শুভশ্রী
প্র: মাতৃত্ব যে চুটিয়ে উপভোগ করছেন, আপনার সোশ্যাল মিডিয়াই তার সাক্ষী। ছবির শুটিং ফ্লোরে ফিরছেন কবে?
উ: রিয়্যালিটি শো তো শুরু করে দিয়েছি। তবে ছবির শুটিংয়ের পরিকল্পনা এই মুহূর্তে নেই। বাবা যাদবের ছবির কিছু অংশের শুট করা বাকি আছে। বেশ কিছু চিত্রনাট্য পড়েছি এর মধ্যে। পরিস্থিতি এমনই যে, ছবির ব্যাপারে পাকাপোক্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া যাচ্ছে না।
প্র: আপনার বেশ কয়েকটি ছবি মুক্তির অপেক্ষায়। এ বছর কি কোনওটা আসতে পারে?
উ: এ বছরের মাঝামাঝি ‘হাবজি গাবজি’ মুক্তির পরিকল্পনা ছিল। আর স্বাধীনতা দিবসের সময়ে ‘ধর্মযুদ্ধ’। তবে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ সব গোলমাল করে দিল। এ ছাড়া ‘বিসমিল্লা’ আর বাবা যাদবের ছবিটাও রয়েছে। অর্থাৎ আগামী চার বছর আর ছবি না করলেও আমার ছবি রিলিজ় করতে থাকবে (হাসি)। আসলে এই অতিমারির জন্য হলে গিয়ে সিনেমা দেখার অভ্যেসটা চলে যাচ্ছে। অনেক বড় ছবিও ওটিটি-তে চলে আসছে এখন। তবে পরিস্থিতি ঠিক হলে আমার মতো ছবিপ্রেমীরা নিশ্চয়ই হলে গিয়ে ছবি দেখবেন।
প্র: আপনি নিজে কী ধরনের কনটেন্ট দেখতে পছন্দ করেন?
উ: লকডাউনে হালিশহরে যখন ছিলাম, তখন তেমন কিছু দেখা হয়নি। এখন কলকাতায় ফিরে এসেছি। সাম্প্রতিক সময়ে দেখা কনটেন্টগুলোর মধ্যে ‘দ্য সার্পেন্ট’-এর নাম মনে পড়ছে। চার্লস শোভরাজকে নিয়ে দারুণ একটা সিরিজ়। এখন খুব একটা দেখা হচ্ছে না কারণ, শুটিং ছাড়া বাকি সময়টা ইউভানকে নিয়েই কেটে যায়। সারা দিন এনটারটেনমেন্ট! হালিশহরের বাড়িতে ইউভান খেলে বেড়ানোর জন্য অনেকটা জায়গা পেয়েছিল। ফুল, পাতা দেখে রং চিনতে শিখেছে। পাখি, পুকুরের মাছ দেখে খুশি হয়ে যেত।
প্র: ইউভানকে ছেড়ে শুটিংয়ে যেতে কষ্ট হয়?
উ: মা হওয়ার সঙ্গেই অপরাধবোধের জন্ম হয়। নিজের সঙ্গে একটু ‘মি টাইম’ কাটিয়ে ফেললেই অপরাধবোধে ভুগি আমি। শুটিংয়ে যখন যাই, ওকে নিয়েই চিন্তা হয়। যদিও যৌথ পরিবারে থাকি বলে সকলে ওকে আদরে রাখেন। দিনকয়েক আগে শুটিংয়ের ফাঁকে ভিডিয়ো কল করেছিলাম, আমাকে দেখেই কাঁদতে শুরু করল। সেই প্রথম বার। খুব মন খারাপ হয়েছিল তখন।
প্র: মা হওয়ার পরে চেহারার পরিবর্তন স্বাভাবিক। ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানোটা কি কঠিন ছিল?
উ: অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় পরপর ছবির শুট করেছিলাম। দ্রুত কাজে ফেরার পরিকল্পনাও ছিল। ক্যামেরার সামনে নিজেকে প্রেজ়েন্টেবল দেখানো জরুরি। কিন্তু ওজন ঝরানোর তাড়া নেই আমার। ক্র্যাশ ডায়েট করে, জিম করে মাসদুয়েকের মধ্যে ওজন ঝরিয়েছি— মা হওয়ার আগে এমন অনেক বার হয়েছে। কিন্তু এখন সেই ঝুঁকি নেব না। সিজ়ারিয়ান সার্জারির পরে একটু সময় নিয়েই এক্সারসাইজ় শুরু করেছিলাম। ইউভান ব্রেস্টফিড করেছে যত দিন, নির্দিষ্ট ডায়েটে ছিলাম। ফিট থাকা দরকারি। কিন্তু শেপে ফিরতে তাড়াহুড়ো করতে চাই না।
প্র: মাঝে কোভিডেও আক্রান্ত হয়েছিলেন। নিজেকে পজ়িটিভ রাখতেন কী ভাবে?
উ: প্রথমেই মনে হয়েছিল, ইউভানকে ছেড়ে এত দিন কী করে থাকব! রাজ সে সময়ে নির্বাচনের কাজে ব্যারাকপুরে থাকত বেশিরভাগ সময়ে। বাড়িতে তখন দু’জন বাচ্চা। আমার শাশুড়ি মাকেও বাচ্চার মতোই ট্রিট করি আমরা (হাসি)। হাসিমুখে থাকতাম যাতে আমাকে দেখে বাকিরাও পজ়িটিভ থাকে। আইসোলেশনের সময়ে মাঝে মাঝে মনে হত, ছুটে চলে যাই ইউভানের কাছে। সে সময়ে ধ্যান করে, নিজের সঙ্গে কথা বলে মন শান্ত রাখতাম।
প্র: সোশ্যাল মিডিয়ায় ইউভানের জনপ্রিয়তা কি ওর উপরে বাড়তি চাপ তৈরি করতে পারে পরবর্তীকালে?
উ: আমরা চাই, ইউভান সব রকম পরিস্থিতিতে মানিয়ে নিতে শিখুক। আর পাঁচজন মা-বাবার মতোই আমি আর রাজ (চক্রবর্তী) সন্তানের সঙ্গে কাটানো মুহূর্তগুলো সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করি। ওকে জনপ্রিয় করে তুলতে হবে বলে কিন্তু করি না। যদি ইউভানকে আমরা এখন আড়াল করে রাখতাম, বড় হয়ে ওকে মিডিয়া অ্যাটেনশনের মুখোমুখি হতেই হত। সেটা করিনি বলেই আশা করি এ সবে ও অভ্যস্ত হয়ে যাবে।
প্র: নির্বাচিত বিধায়ক হওয়ার পাশাপাশি রাজ্যের সাংস্কৃতিক দফতরের গুরুদায়িত্বে রাজ। রাজনৈতিক দায়িত্ব কি পরিচালক রাজের উপরে চাপ তৈরি করবে?
উ: রাজের মধ্যে নেতৃত্ব দেওয়ার সহজাত ক্ষমতা আছে। সকলকে নিয়ে ব্যালান্স করে চলতে পারে। কোনও অভিযোগের জায়গা রাখে না। আর যে কোনও কাজই খুব আগ্রাসী মনোভাব নিয়ে করে। সেটা ওর ছবির ক্ষেত্রেই হোক, বা ওকে কোনও পদ রাঁধতে দিলেও। যতক্ষণ না সেরাটা বার করে আনছে, ছাড়বে না। তাই আমার মনে হয়, নতুন দায়িত্ব আর ছবি পরিচালনা দুটোই সুন্দর ব্যালান্স করতে পারবে ও। রাজ্যের সংস্কৃতির মান কী করে আরও উঁচুতে নিয়ে যাওয়া যায়, সেটা নিয়ে পরিকল্পনা চলছে ওর।
প্র: এখন রাজনীতিক রাজ কি পরিবারে একটু কম সময় দিচ্ছেন?
উ: সত্যিই ও এত ব্যস্ত যে, আমাদেরই সময় দিতে পারে না। সকাল ১০টায় বেরিয়ে যায়, রাত ৯-৯.৩০টায় ফেরে। ইউভানকেও সময় দিতে পারে না এখন ঠিক মতো। মানুষ ওকে বিশ্বাস করেছেন, সেই দায়িত্ব মাথায় রয়েছে। তাঁদের দেওয়া কথা রাখতেই দিনরাত কাজ করছে। এ ধরনের কাজ করতে ও নিজেও খুব ভালবাসে।
প্র: ভোটপর্ব শেষে রুদ্রনীলের সঙ্গে কথা হয়েছিল? রাজনৈতিক অবস্থান বদল নিয়ে ওঁকে যে ধরনের কথা শুনতে হয়েছে, বন্ধু হিসেবে খারাপ লেগেছিল?
উ: বন্ধুর সম্পর্কে খারাপ কথা শুনতে ভাল লাগে না। তবে আমরা নেগেটিভিটি এড়িয়ে চলি। নির্বাচনের ফলাফলের পরে আর কথা হয়নি। কারও সঙ্গে দেখাও হচ্ছে না অনেক দিন। তবে বন্ধুত্বের জায়গায় রাজনীতিকে আনব না কখনওই। টিভির প্যানেল ডিসকাশনে রাজ-রুদ্রর ঝগড়া দেখেছেন সকলে, ঘরোয়া আড্ডাতেও তো এমন কতই হয়। আড্ডা, তর্ক ছাড়া বাঙালি হয় নাকি!