‘গোরা’ নিয়ে অকপট ঋত্বিক চক্রবর্তী।
প্রশ্ন: কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘ছায়া ও ছবি’তে কোয়েল মল্লিকের বিপরীতে অভিনয়ের মতোই বড় চমক সায়ন্তন ঘোষালের গোয়েন্দা ‘গোরা’...
ঋত্বিক: (হাসি) হ্যাঁ, দর্শকেরা চমকে গিয়েছেন। তার পরে প্রায় সবাই ভালবেসেছেন ‘গোরা’কে।
প্রশ্ন: কখনও খোলা লম্বা চুল, কখনও তুলে পনি টেল! ছিপছিপে ঋত্বিক চক্রবর্তী যেন মাত্র ৩৫!
ঋত্বিক: (জোরে হাসি) তাই নাকি? আমি সে রকম কিছুই বুঝতে পারছি না। দর্শকেরা যদি এ রকমই কিছু ভেবে থাকেন বা এই নজরে দেখে থাকেন তা হলে অবশ্যই দুর্দান্ত ব্যাপার।
প্রশ্ন: এই বিশেষ সাজ, ধূসর চরিত্রের একে বারে বিপরীতে হেঁটে অন্য স্বাদের চরিত্র বলেই ঋত্বিক গোয়েন্দা?
ঋত্বিক: ‘গোরা’ চরিত্রটি যে কোনও অভিনেতার কাছেই ভীষণ লোভনীয়। ছকে বাঁধা গোয়েন্দা বা তার গোয়েন্দাগিরির বাইরে গিয়ে অন্য রকম সব কিছু। এমন চরিত্র কে না করতে চায় বলুন? আমিও তাই সায়ন্তন প্রস্তাব দিতেই লুফে নিয়েছি। তা ছাড়া, চিত্রনাট্যকার সাহানা দত্তও আমার মতোই কাউকে খুঁজছিলেন বোধহয় (হাসি)। একটু লম্বা, বড় চুল থাকবে। তখন অতিমারি-লকডাউন। কাজ করছি না। ফলে, চুল কাটার প্রশ্নও ছিল না। আমিও কখনও খোলা লম্বা চুলে, কখনও পনি টেলে। মাঝে মধ্যে যদিও চুল কাটার কথাও ভাবছিলাম। এমন সময়ে ‘গোরা’র জন্য ডাক। ওঁরা চুল বড় করতে বলেছিলেন। মুখোমুখি হয়ে একটু থমকে গিয়েছিলেন সবাই। যতটা লম্বা ওঁরা চেয়েছিলেন তত দিন আমার চুল তার থেকেও বড় হয়ে গিয়েছে। শ্যুট করতে করতে মুখে দাড়ি-গোঁফের জঙ্গল! সব মিলিয়ে আমি নিখুঁত ‘গোরা’!
প্রশ্ন: ভুলো গিন্নি বা ভুলো কর্তা হয়, ভুলো গোয়েন্দার কথা কখনও শুনেছেন?
ঋত্বিক: সত্যিই খুবই ‘ইউনিক কনসেপ্ট’। গোয়েন্দা নামধাম ভুলে যাচ্ছেন! তবে শ্যুট করতে করতে বুঝেছি, গোরা আসল জিনিসগুলো কিন্তু মোটেই ভোলে না। ফলে, ধারাবাহিক খুনগুলো সে কিন্তু অনায়াসে সমাধান করে দিচ্ছে। সবটাই বেশ সামলে নেয়। নাম মনে রাখার জন্য তার সহকারী সারথি আছেই। তা ছাড়া গোরার ট্যাগলাইনই তো ‘ডিফেকটিভ ডিটেকটিভ’। খুঁত আছে বলেই না এই পরিচিতি তার!
প্রশ্ন: মনোযোগে যাতে ব্যাঘাত না ঘটে তার জন্যই সে ইচ্ছে করে ভোলে?
ঋত্বিক: ঠিক বলেছেন। মাঝেমাঝে বদমায়েশি করে ভোলার ভাণ করে গোরা। আদতে সে কিছুই ভোলে না। কখনও হয়তো সত্যিই নাম ভুলে যায়। কখনও ভুলে গিয়েছে বুঝেও ইচ্ছে করে উলটো পালটা নাম বলতে থাকে। আসলে, গোরা বেশ দুষ্টুও! সুযোগ পেলেই দুষ্টুমি করে।
প্রশ্ন: অভিনয়ে ‘ফোকাসড’ থাকতে আপনিও কি গোরার মতোই ইচ্ছে করে অনেক কিছু ভোলেন?
ঋত্বিক: অভিনয়ের সময়ে আমি এমনিতেই সব ভুলে যাই। আর চেষ্টা করে কিছু ভুলতে হয় না। তখন কাউকে চিনি না। কিচ্ছু জানি না। দৃশ্য থেকে বা চরিত্র থেকে বেরিয়ে আসার পরে ধাতস্থ হই। তখন আবার আগের মতো। আমার মনে হয়, এটা শুধুই আমি নই কম বেশি সব শিল্পীরই হয়। এই জন্যই আমরা অভিনেতা।
প্রশ্ন: এই ভুলো মনের জন্যই কিন্তু গোয়েন্দা গোরা নন্দিত আবার নিন্দিতও, শুনে খারাপ লেগেছে?
ঋত্বিক: খারাপ লাগবে কেন! নিন্দা-প্রশংসা দুটোই থাকবে। আমি চরিত্রটি করে দারুণ খুশি। দর্শকদেরও তো কোনও প্রতিক্রিয়া হবে! কারওর খুব ভাল লাগবে। কারওর খারাপ। সবগুলোই আমাদের মেনে নিতে হয়। আমিও তাইই করি। নইলে কাজ করতে পারব না। সবার সব ভাল লাগবে এমন কোনও কথা নেই। প্রত্যেকে কিন্তু নিজের যুক্তি দিয়ে ভাল বা মন্দ লাগা জানায়। তাই যাঁরা নিন্দা করেছেন তাঁদেরও নিশ্চয়ই কিছু জোরালো বক্তব্য আছে।
প্রশ্ন: সাহিত্যের গোয়েন্দা যেমন ফেলুদা, ব্যোমকেশ, কিরীটির সঙ্গে গোরা পাল্লা দিতে পারবে?
ঋত্বিক: কেন পারবে না? ইতিমধ্যেই পর্দায় নতুন গোয়েন্দারা ভালই আসর জমিয়ে নিয়েছেন। যেমন সোনাদা। তার জনপ্রিয়তা অগ্রাহ্য করার মতো নয়। একই ভাবে গোরাও। ভুলো মন নিয়ে ইতিমধ্যেই ভাল সাড়া ফেলে দিয়েছে। এর একাধিক পর্বও হবে। ফলে, গোরা সাহিত্যের গোয়েন্দাদের সঙ্গে পাল্লা দিতে তৈরি।
প্রশ্ন: এ ভাবেই আপনি একের পর এক লোভনীয় চরিত্র করবেন আর স্ত্রী অপরাজিতা ঘোষ দাস সংসার সামলাবেন?
ঋত্বিক: অতিমারিতে আমি বা অপরাজিতা কেউই কাজ করিনি। ছেলের কারণে। ও এখনও অনেকটাই ছোট। তাও একটি ছবির শ্যুটের সময়ে স্থানীয় একটি জায়গায় থেকেছি। পরিবার যাতে সংক্রমিত না হয়। কিন্তু নিজেকে সংক্রমণ থেকে দূরে রাখতে পারিনি। আমি কোভিড পজিটিভ হয়েছিলাম। তার পর শ্যুট শেষে নতুন কাজ আর ধরিনি। আগের তুলনায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক। আস্তে আস্তে কাজ শুরু করছি আমি। কিছু দিন পর থেকে অপরাজিতাও শুরু করবে। তবে শ্যুট না করলেও ও নানা অন্য কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকে। সেগুলো বন্ধ রাখেনি।
প্রশ্ন: গোরার মতো আপনিও বাস্তবে ‘ডিফেক্টিভ’? ভুলে যান সব কিছু?
ঋত্বিক: (হেসে ফেলে) না না, গোরার মতো আমি অতটাও ভুলো নই। সাধারণ মানুষ যেমন ভোলেন আমিও তেমনই। ভোলা নিয়ে বাড়াবাড়ি নেই আমার। তবে খুঁত বা ‘ডিফেক্ট’ আমার প্রচুর। সে সব সংবাদমাধ্যমে ফাঁস করার মতো বোকামি কেউ করে? (দরাজ হাসি)
প্রশ্ন: গোরা নারী-তে ভয়ানক গোঁড়া! আপনাকে নিয়েও সে রকম গুঞ্জন নেই... আপনিও নারীবিদ্বেষী?
ঋত্বিক: (অট্টহাসি) তা হলে আপনারা জানেনই না, নারী আমার পরম প্রিয়! নারীতে কোনও আপত্তি বা অ্যালার্জি নেই আমার।