রিয়্যালিটি শো ‘সারেগামাপা’-র মঞ্চে রথীজিৎ ভট্টাচার্য, কুমার শানু। নিজস্ব চিত্র।
মঞ্চের এক দিকে প্রমাণ আকারের কাটআউট। মাইক হাতে চেনা ভঙ্গিমায় তিনি গাইছেন। আচমকা দেখলে যে কেউ ভুল করবে আসল কুমার শানু ভেবে! সামনে বড় বড় করে লেখা ‘মেলোডি কিং’। আর এক দিকে ‘আশিকী’র চেনা পোস্টার। মঞ্চ জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রঙিন কাগজ, রাংতার টুকরো। একটা করে গান ফুরোচ্ছে। বিচারকেরা ‘আহা’ ‘আহা’ বলতে বলতে বলতে পপ-আপ ব্লাস্টারে চাপ দিচ্ছেন। এক পাশে বসে ‘মেলোডি কিং’। মৃদু হাসি ছড়িয়ে প্রত্যেক প্রতিযোগীর গান মন দিয়ে শুনছেন। ভালমন্দ মতামত দিচ্ছেন।
বাইরে আকাশ আংশিক মেঘলা। এমন দিনে কুমার শানুর গাওয়া ‘তোমার হাসিতে বঁধু’ যেন পড়ে পাওয়া চোদ্দো আনা!
এই গানটাই শোনাচ্ছিলেন এক প্রতিযোগী। গান থামতেই কুমার শানু উচ্ছ্বসিত। গানের যে অংশ তাঁর ভাল লেগেছে সেটা আরও একবার শুনতে চাইলেন। তার পর প্রশংসায় পঞ্চমুখ। প্রতিযোগী আনন্দের চোটে বাক্রুদ্ধ। মুঠোফোনের ঘড়িতে তখন বিকেল পাঁচটা। আনন্দবাজার অনলাইন রাজারহাট ডিআরডি স্টুডিয়োয়, ‘সারেগামাপা’র সেটে। প্রতি বছর পরিচালক অভিজিৎ সেন রিয়্যালিটি শো-তে গানের জগতের নক্ষত্রদের নিয়ে বিশেষ পর্ব উপহার দেন। এ বছর সেই তালিকায় প্রথম শিল্পী কুমার শানু।
পিসিআর-এ পা রাখতেই শো-এর ঝলক। সারিবদ্ধ পর্দায় নানা কোণ থেকে ক্যামেরায় ধরে রাখা শুটিংয়ের মুহূর্ত উঠে আসছে। পরিচালক কখনও চেঁচিয়ে উঠছেন, ‘‘হাততালি দিতে বলুন!’’ কখনও দৃশ্য শেষ হতে খুশির হাসি হাসছেন। আপনি নব্বইয়ের দশকের গান পছন্দ করেন? প্রশ্ন রাখতেই স্মিত হেসে জবাব দিলেন, ‘‘আমি তো করিই। আমার দর্শক-শ্রোতারাও করেন। অধীর অপেক্ষায় থাকেন তাঁরা, কবে সেই সময়ের শিল্পীদের নিয়ে বিশেষ পর্ব দেখাব।’’ তাঁদেরই অন্যতম কুমার শানু। প্রতিযোগীদের গান গায়ক বেছে দিয়েছেন? অভিজিৎ জানিয়েছেন, গান তোলানোর দায়িত্বে যে সব শিল্পী আছেন, পুরোটাই তাঁদের পছন্দ। তাঁরা প্রতিযোগীদের গলা শুনে ঠিক করেছেন, কার কণ্ঠে কোন গান ভাল খেলবে। পরিচালকের খুব ইচ্ছে, আগামী দিনে আশা ভোঁসলে, হরিহরণ, কবিতা কৃষ্ণমূর্তিকে নিয়ে বিশেষ পর্ব করার। কুমার শানুর মতো তাঁরাও সেই পর্বে বিশেষ অতিথির চেয়ারে বসবেন। গান শুনবেন, শোনাবেনও।
পিসিআর থেকে জাম্পকাট সেটের ভিতরে। সদ্য একপ্রস্ত শুটিং শেষ হয়েছে। পরের দৃশ্যে যাওয়ার তোড়জোড়। তার ফাঁকে শো-এর অন্যতম বিচারক শান্তনু মৈত্র জানালেন, যাঁদের গান শুনে বড় হয়েছেন তাঁদের মধ্যে এক জন কুমার শানু। তাঁর পাশে বসে তাঁরই গান শুনতে শুনতে গায়ে কাঁটা দিচ্ছে। একই কথা জোজোর মুখে। ইশারায় ইন্দ্রদীপ জানিয়েছেন, দারুন উপভোগ করছেন। নেপথ্যে গানের সুর বেজে উঠতেই নিজেকে আর সামলাতে পারলেন না রাঘব চট্টোপাধ্যায়। বিচারকের তকমা সরিয়ে মঞ্চের মাঝখানে এসে নেচে নিলেন! কাণ্ড দেখে দূরে দাঁড়িয়ে মিটিমিটি হাসছেন সঞ্চালক আবীর চট্টোপাধ্যায়।
যাঁকে ঘিরে এত আনন্দ আয়োজন, তিনি কী করছেন? মঞ্চের আর এক পাশে সিংহাসনের মতো গদি আঁটা চেয়ার। সেখানে রাজার মতো বসে কুমার শানু। কালো সিক্যুইনের জ্যাকেটে আলো পড়ে ঠিকরে যাচ্ছে। তার আভায় বাড়তি জৌলুস সারা মুখে। জানালেন, গানের টানে ভালবাসার আকর্ষণে আবারও নিজের শহরে। সেটের আবহ তাঁকে মনে করিয়ে দিচ্ছে, তিনি নিজের বাড়িতে এসেছেন। এই অনুভূতি কেবল কলকাতা আর সেখানকার মানুষেরাই দিতে পারেন।
কথা ফুরোতেই ক্যামেরা চালু। প্যান করে গায়কের মুখের উপরে। তিনি ইশারা করতেই শুটিং শুরু। মঞ্চে প্রতিযোগীর গানে নব্বইয়ের ঝোড়ো ইনিংস! উপস্থিত প্রত্যেকে সব ভুলে কান পেতেছেন, ‘এক সনম চাহিয়ে আশিকী কে লিয়ে’ গানে।