প্রথম ওয়েব সিরিজ় ‘ইন্দুবালা ভাতের হোটেল’ নিয়ে আড্ডায় অভিনেত্রী শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
বড় পর্দা ছেড়ে এ বার মুঠোফোনের গণ্ডিতে শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়। ওয়েব সিরিজ়ে অভিষেক হতে চলেছে নায়িকার। ৮ মার্চ মুক্তি পাবে তাঁর অভিনীত প্রথম সিরিজ় ‘ইন্দুবালা ভাতের হোটেল’। সিরি়জ় মু্ক্তির আগে আনন্দবাজার অনলাইনের মুখোমুখি পর্দার ইন্দুবালা।
প্রশ্ন: বড় পর্দায় পর পর কাজের পাশাপাশি ‘ইন্দুবালা’র মতো চরিত্রের মাধ্যমে ওটিটি-তে অভিষেক। ব্যক্তিগত জীবনের চাকাও সমান গতিতে এগিয়ে চলেছে। জীবনকে কি এই ভাবেই সাজাতে চেয়েছিলেন?
শুভশ্রী: একদমই। এই ভাবেই নিজের জীবনটাকে দেখতে চেয়েছিলাম। ব্যক্তিগত জীবনে তো অবশ্যই এই ভাবে। পেশাদার জীবনের ক্ষেত্রে আমি বলব, সবটাই ভগবানের দান। ঈশ্বরের কাছে নিজের কাজের জন্য কখনও কিছু চাইনি। কখনও ঈশ্বরের কাছে এমন প্রার্থনা করি না যে আমি বিশাল বড় বড় কাজ করতে চাই। জাতীয় পুরস্কার পেতে চাই। যেটুকু সাফল্য পেয়েছি পুরোটাই ভগবানের দেখিয়ে দেওয়া পথ।
প্রশ্ন: আপনি পুরস্কার চান না! পুরস্কার না পারিশ্রমিক, কোনটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ শুভশ্রীর জীবনে?
শুভশ্রী: দুটোই গুরুত্বপূর্ণ। ‘রিওয়ার্ড’ অর্থাৎ পারিশ্রমিক না থাকলে তো আমাদের পেট চলবে না। এটা আমাদের জীবিকা। তবে পুরস্কার প্রেরণা জোগায় আগামী দিনে ভাল কাজ করার জন্য। আমি বলব ‘অ্যাওয়ার্ড’ এবং ‘রিওয়ার্ড’ এরা দুই যমজ।
প্রশ্ন: ১১ বছর পর আবার সেই প্রযোজনা সংস্থার সঙ্গে কাজ করা, যাঁদের প্রযোজিত ছবির মাধ্যমে শুভশ্রী সফল অভিনেত্রী হয়ে ওঠেন। এক জায়গায় ফিরে এসে কোনও পরিবর্তন লক্ষ করলেন?
শুভশ্রী: প্রচুর পার্থক্য। এই অফিসটার কথাই বলব। প্রথমে আমরা ‘ওয়াটার লু’ স্ট্রিটের অফিসে দেখা করতে যেতাম। ওখানে শ্রীকান্তদা (শ্রীকান্ত মোহতা) বসতেন। তার পর ওরা চলে আসে আনোয়ার শাহ রোডের কাছে একটা জায়গায়। তার পর অফিস হয় সাদার্ন অ্যাভিনিউয়ে। সব জায়গায় আমি গিয়েছি। ওয়াটার লু স্ট্রিটের অফিস থেকে বর্তমানে এই বহুতলের বিলাসবহুল অফিস— পুরো যাত্রার সাক্ষী থেকেছি আমি। এত বছর পরে কাজ করছি, ইন্দুবালার মতো চরিত্রের জন্য আমায় ভাবা হয়েছে। বেশ ভাল লাগছে।
প্রশ্ন: ‘ইন্দুবালা ভাতের হোটেল’ প্রথম সিরিজ়। আপনি নিজে কখনও এমন ভাতের হোটেলে খেয়েছেন?
শুভশ্রী: ছোটবেলা থেকে আমরা যেখানেই যেতাম, বাড়ি থেকে খাবার তৈরি করে নিয়ে যাওয়া হত। ঠাম্মার নিয়ম ছিল। ঠাম্মাই রান্না করে দিতেন। এখনও আমি বাড়ির তৈরি খাবারই শুটিংয়ে নিয়ে আসি।
প্রশ্ন: এখন যদি কেউ বলে আপনি ভাতের হোটেলে গিয়ে খেতে পারবেন?
শুভশ্রী: হ্যাঁ, আমিই খেতেই পারি। আমার তেমন কোনও সমস্যা নেই।
প্রশ্ন: এই চরিত্রটা শুনে আপনার কেন মনে হয়েছিল এই কাজটা করা উচিত?
শুভশ্রী: ‘ইন্দুবালা’ চরিত্রটা যদি আমি ছেড়ে দিতাম, তা হলে আমার থেকে বোকা কেউ হত না। এমন চরিত্রই আমি করতে চাই। যা সারা জীবন আমার সঙ্গে থেকে যাবে। শিল্পী হিসাবে আমায় তৃপ্তি দিয়েছে, ইন্দুবালা।
প্রশ্ন: প্রচার ঝলক দেখে অনেকেই ভাল বলছেন। কিন্তু সিরিজ়টি মুক্তির পর যদি আশানুরূপ প্রতিক্রিয়া না পান, তা হলে কী করবেন?
শুভশ্রী: শুধু ইতিবাচক নয়, নেতিবাচক প্রতিক্রিয়াও সমান মান্যতা পাবে। সবার মানসিকতা এক হতে পারে না। সবার পছন্দ হবে, তা তো নয়। সবটাই মাথা পেতে নেব।
প্রশ্ন: ৭৫ বছরের শুভশ্রীকে পর্দায় দেখে ইউভান কি নিজের মাকে চিনতে পারল?
শুভশ্রী: হ্যাঁ। লুক সেট করে আমি প্রথম ভিডিয়ো কল করি ইউভানকে। দু’সেকেণ্ডও সময় নেয়নি। আর এখন তো সিরিজ়ের ট্রেলারও দেখে ফেলেছে। বলে, ‘মাম্মাজি আগে দুর্গা সাজিলি, এখন ঠাম্মা সাজিলি’।
প্রশ্ন: ‘ইন্দুবালা’ চরিত্রে আপনি যদি অভিনয় না করতেন, তা হলে কোন অভিনেত্রীকে এই চরিত্রে দেখতে ভাল লাগত বলে আপনার মনে হয়?
শুভশ্রী: নিজেকে ছাড়া এই চরিত্রে আমি আর অন্য কোনও অভিনেত্রীকেই ভাবতে পারছি না এই মুহূর্তে। কারণ আমার পরিচালকও আমায় এটাই বলেছিলেন যে, এই চরিত্রে তোমায় ছাড়া আর কাউকে ভাবতে পারছি না। ইন্দুবালা শুধু আমিই।
প্রশ্ন: শেষ কয়েক বছরে আপনি চরিত্র বাছার ক্ষেত্রে অনেক বেশি সংযমী হয়ে উঠেছেন। বর্তমানে অনেকেরই ধারণা, মূলধারার বাণিজ্যিক ছবিতে অভিনয়ের তেমন আর ইচ্ছে নেই আপনার। এটা কি সত্যি?
শুভশ্রী: দেখুন, আগে অনেকেরই ধারণা ছিল তো শুভশ্রী অভিনয় পারে না, তাই সুযোগও দেয়নি। মানুষের ধারণা ভাঙার জন্য আমি কাজ করতে পারব না। মানুষকে একটু সাহস দেখাতে হবে, যে সাহসটা রাজ চক্রবর্তী দেখিয়েছিল, এই মেয়েটা অভিনয় পারে। ‘পাঠান’-এ দীপিকার (পাড়ুকোন) মতো চরিত্রের জন্য আমায় যদি কেউ বলে, নিশ্চয়ই করব। আমার চরিত্রের গভীরতা কতটা সেটা তো জানা প্রয়োজন।
প্রশ্ন: তা হলে মূলধারার বাণিজ্যিক ছবিতে আবারও দেখা যাবে শুভশ্রীকে, যেখানে নাচ থাকবে গান থাকবে, অ্যাকশন থাকবে?
শুভশ্রী: আমি একটা প্রেমের ছবি করতে চাই। রগরগে প্রেমের গল্প। অনেকটা ‘কবীর সিংহ’-এর মতো প্রেমের গল্প।