ভিকি কৌশল
প্র: সর্দার উধম সিংহ হয়ে উঠতে নিজের চেহারা অনেকটাই ভাঙতে হয়েছিল আপনাকে। কতটা চ্যালেঞ্জিং ছিল সেটা?
উ: শুধু শারীরিক ভাবে নয়, মানসিক ভাবেও নিজেকে প্রস্তুত করতে হয়েছিল চরিত্রটার জন্য। ওঁর ২০ থেকে ৪০ বছর পর্যন্ত বয়স ধরা হয়েছে ছবিতে। মাত্র দু’মাসের মধ্যে ১৪-১৫ কেজি ওজন কমিয়েছিলাম কমবয়সি লুকের জন্য। তার ২৫ দিনের মধ্যেই আবার শুটিং শুরু হয়ে গিয়েছিল, যেখানে সর্দার উধমের ৪০ বছর বয়সের অংশটি দেখানো হচ্ছে। সে দিক থেকে একটু কষ্টকর ছিল পুরো জার্নিটা। তবে তার চেয়েও অনেক বেশি মন দিয়েছিলাম চরিত্রটাকে আত্মস্থ করতে।
প্র: সুজিত সরকারের পরিচালনায় প্রথম বার কাজ করে কেমন লাগল?
উ: অসাধারণ। ওঁর টিম গত চার বছর ধরে এই ছবিটার জন্য রিসার্চ করেছে। আর সুজিতদা প্রায় গত ২০ বছর ধরে সর্দার উধমকে নিয়ে ছবি করার কথা ভেবেছেন। বিভিন্ন আর্কাইভ, ইতিহাস বই ঘেঁটে প্রচুর তথ্য জোগাড় করা হয়েছিল। তবে সুজিতদা আমাকে একটাই কথা বলেছিলেন, ‘ভিকি, আমি চাই দর্শক বুঝতে পারুক, সর্দার উধম সিংহের মানসিক অবস্থা ঠিক কী রকম ছিল। তার জন্য চরিত্রটার সঙ্গে একাত্ম হতে হবে।’ এ ধরনের চরিত্র সম্পর্কে খুব বেশি তথ্য না থাকার কারণে অনেক সময়েই চরিত্র নির্মাণে নিজেদের কল্পনা মিশে যায়। সারাক্ষণই সুজিতদাকে প্রশ্ন করতাম এ ব্যাপারে। ওঁর কাজের ধরনে একটা থিয়েটারের মতো অ্যাপ্রোচ আছে। ওঁর থিয়েটার ব্যাকগ্রাউন্ড দিল্লির, আর আমার মুম্বইয়ের।
প্র: পরিচালক আপনাকে কবে বলেছিলেন যে এই চরিত্রটা ইরফান খানের করার কথা ছিল?
উ: ইরফান খানকে নিয়ে ছবিটা করার কথা আগেই ঘোষণা করা হয়েছিল। তাই আগে থেকেই জানতাম। তার জন্য অবশ্য আলাদা করে চাপ নিইনি। কারণ চাপ তখনই থাকবে, যখন ওঁর জুতোয় পা গলানোর চেষ্টা করব। আর জানি, সেটা আমি কখনওই পারব না। অভিনেতা হিসেবে নিজের সেরাটা দিতে পারি, কিন্তু ইরফান খানকে রিপ্লেস করা কারও পক্ষেই সম্ভব নয়। ইরফানের সাবের পরে আমাকে ভরসা করা হয়েছে বলে আমি সম্মানিত।
প্র: ছবির আউটডোরে রাশিয়ার মাইনাস তাপমাত্রায় শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা কী রকম ছিল?
উ: ঠান্ডা হাওয়ার কাঁপুনিতে যখন দাঁতে-দাঁত লেগে যেত, তখন শুধু মনে হত এটা যেন ক্যামেরায় দেখা না যায়। কারণ সে সময়ে হয়তো পরে আছি শুধু একটা শার্ট, তিনটে বোতাম খোলা। তাপমাত্রা ৫ থেকে মাইনাস ২৫ ডিগ্রির মধ্যে ঘোরাফেরা করত। সঙ্গে কনকনে ঠান্ডা হাওয়া। তবে চরিত্রে একবার ঢুকে পড়লে এ সব আর খেয়াল থাকত না। কতটা বিশ্বাসযোগ্য ভাবে শটটা দিতে পারছি, সেটাই প্রাধান্য পেত। আবেগের দৃশ্যে চোখে জল এল কি না, সেটা সুজিতদার কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়। ৭-৮ বছরের একটি ছেলের সঙ্গে আমার ছোট একটা দৃশ্য ছিল। কয়েকটা ইমোশনাল সংলাপ বলতে হবে। কিছুতেই শট ‘ওকে’ হচ্ছে না। সুজিতদা এসে আমার কানে কানে বলে গেল, ‘ভিকি, ভাবো তুমি তোমার নিজের আট বছরের সত্তার সঙ্গে কথা বলছ।’ সর্দার উধমের জগৎটা আমার কাছে ভীষণ জীবন্ত করে তুলেছিলেন সুজিতদা। যে কারণে আমার কাছেও সবটা সহজ হয়ে গিয়েছিল।
প্র: এর পরে আপনাকে আরও এক ইতিহাস-নির্ভর চরিত্র স্যাম মানেকশ-র ভূমিকায় দেখা যাবে...
উ: হ্যাঁ। লুক সেট হওয়ার পরেই কোভিডের কারণে পিছিয়ে গেল ছবিটা। ‘স্যাম বাহাদুর’-এর শুটিং শুরু করব আগামী বছরই। সে দিক থেকে সর্দার উধমই আমার করা প্রথম ঐতিহাসিক চরিত্র।
প্র: ছবিটা সিনেমা হলে মুক্তি পেলে কি বেশি খুশি হতেন?
উ: থিয়েট্রিক্যাল রিলিজ় সব সময়েই রোম্যান্টিক। দর্শকের কাছেও, অভিনেতার কাছেও। তবে কোথায় রিলিজ় করলে তা ছবির পক্ষে ভাল, সেটা প্রযোজক-পরিচালকের সিদ্ধান্ত। এটাও ঠিক, গত দেড় বছরে ওটিটির উপরে এতটাই নির্ভরশীল হয়ে পড়েছি যে, এখন বড় পর্দার সঙ্গে এর ফারাকটা কমে এসেছে। ‘সর্দার উধম’ আন্তর্জাতিক দর্শকের কাছে পৌঁছে যাক, এটা আমরা সকলেই চেয়েছিলাম। জালিয়ানওয়ালাবাগে কী হয়েছিল, সেটা আমাদের দেশের বাইরের মানুষেরও জানা উচিত। অ্যামাজন প্রাইমে ২৪০টি দেশে একসঙ্গে মুক্তি পেয়েছে ছবিটা।
প্র: আপনি ওয়েব সিরিজ় করবেন না?
উ: আমার টাইমলাইনের সঙ্গে মিলে গেলে নিশ্চয়ই করব। ভাল প্রস্তাব পেলে কেন নয়?
প্র: বড় ব্যানারের বেশ কয়েকটি ছবি রয়েছে হাতে। এর পরের পরিকল্পনা কী?
উ: এ বছর ধর্মা প্রোডাকশনস আর যশ রাজ ফিল্মসের দু’টি ছবি করেছি। তবে ঘোষণা হওয়ার আগে এ নিয়ে বিশদে কথা বলতে পারব না। এর পরে ‘স্যাম বাহাদুর’ শুরু করব, মেঘনা গুলজ়ারের নির্দেশনায়।