আনন্দবাজার অনলাইনে অকপট ডোনা গঙ্গোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র।
প্রশ্ন: আপনার শরীর এখন কেমন আছে?
ডোনা: আগের থেকে এখন একটু ভাল আছি। তবে অনুষ্ঠান এখন একটু কম করছি। ডাক্তার এখনও আমাকে দু’সপ্তাহ নাচতে বারণ করেছেন। জ্বরের পরে শরীরের ব্যথা ভিতর থেকে দুর্বল করে দেয়। পুরোপুরি সেরে উঠতে এখনও দু’-তিন সপ্তাহ লাগবে।
প্রশ্ন: পুজোর আগে তো বিদেশে শো করে এলেন।
ডোনা: ওটা সরকারি ট্যুর ছিল। স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তি উদ্যাপনে ভারত সরকার বিদেশে একাধিক অনুষ্ঠান করছে। আমরা লন্ডন, ডাবলিন এবং স্যুইৎজারল্যান্ডে শো করেছিলাম।
প্রশ্ন: আচ্ছা, দেশ-বিদেশে চূড়ান্ত ব্যস্ততা। তার মধ্যে আবার রিয়্যালিটি শোয়ের মঞ্চেও আসছেন। সবটা সামাল দেন কী করে?
ডোনা: (হেসে) প্রথমে তো শুভঙ্করদা (শোয়ের পরিচালক) আমাকে দুটো পর্বেই থাকতে বলেছিলেন। কিন্তু কাজের ব্যস্ততায় সময় বার করতে পারছিলাম না। এ দিকে মহারাজের রিয়্যালিটি শোয়ের সুবাদে শুভঙ্করদার সঙ্গে আমাদের খুব ভাল সম্পর্ক। তাই শেষ পর্যন্ত সময় বার করতেই হল।
প্রশ্ন: এটা তো একটা বিশেষ পর্ব। পুরোপুরি কোনও রিয়্যালিটি শোয়ের অংশ হওয়ার ইচ্ছা নেই?
ডোনা: দেখুন, পুরোপুরি রিয়্যালিটি শোয়ে সময় দেওয়া একটু কঠিন। তা-ও এখন আমি অনেকটাই ফাঁকা থাকি। কারণ সানা এখন বিদেশে। আগে ওকে স্কুলে পাঠানো, টিউশন থেকে নিয়ে আসা, খাওয়ানো— সবটাই করতে হত। এই দেখাশোনার দায়িত্বটা এখন আর নেই। বাড়ির সব কাজ সেরে বিকেলবেলায় এক-দু’ঘণ্টা একটু ছাত্রছাত্রীদের শেখাই। এ রকম নয় যে আমি প্রতি দিন নাচের উৎসবে অংশগ্রহণ করছি। কিন্তু অন্য দিকে আমার বাবা-মা রয়েছেন। শাশুড়ি রয়েছেন। মহারাজের কাজের ব্যস্ততা সকলেই জানেন। তাই পরিবারের সকলের দেখাশোনা করে সময় বার করা খুবই কঠিন।
প্রশ্ন: ‘ডান্স ডান্স জুনিয়র ৩’-এ বিশেষ অতিথি বিচারকের ভূমিকায় কী রকম অভিজ্ঞতা হল?
ডোনা: খুবই ভাল। ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা কী সুন্দর পারফর্ম করল। ছোট থেকেই তো নাচ করছি, যাতে নাচকে আরও বেশি সংখ্যক মানুষের কাছে ছড়িয়ে দিতে পারি। তাই নাচ নিয়ে কোনও উদ্যোগের অংশ হতে পারলে আমার তো ভালই লাগে।
প্রশ্ন: শোয়ের বিচারকের আসনে দেব, রুক্মিণী, মনামীরাও রয়েছেন। শুটিংয়ের ফাঁকে তাঁদের সঙ্গে আড্ডা গল্পের সুযোগ পেয়েছিলেন?
ডোনা: সত্যি বলতে শুটিংয়ের ব্যস্ততায় আলাদা করে আড্ডা দেওয়ার সুযোগ পাইনি। তবে প্রতিযোগীদের আমি নাচ না ছাড়ার পরামর্শ দিয়েছি। কারণ আগের তুলনায় এখন তো শিল্পীদের সুযোগ-সুবিধাও বেড়েছে। এখন বেশির ভাগ স্কুলেই নৃত্য প্রশিক্ষক, সঙ্গীতের প্রশিক্ষক থাকেন। রিয়্যালিটি শোয়ে এখন ব্যাকগ্রাউন্ড ডান্সারেরও প্রয়োজন হয়।
প্রশ্ন: প্রথাগত কোনও নৃত্যশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে রিয়্যালিটি শোয়ের মঞ্চের কী কী পার্থক্য রয়েছে বলে মনে করেন?
ডোনা: রিয়্যালিটি শো অবশ্যই নতুনদের কাছে একটি বড় সুযোগ। এ ধরনের কোনও অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করলে প্রতিযোগীরা আগামী দিনে নাচকে পেশা হিসাবে বেছে নিতে চান কি না, তা নিয়ে খানিকটা ধারণা পাওয়া যায়। তবে রিয়্যালিটি শোয়ে প্রথম বা দ্বিতীয় স্থান দখল করে কেউ যদি ভেবে নেয় যে, সে পণ্ডিত বিরজু মহারাজ হয়ে গিয়েছে, তা হলে ভুল করবে! সেটা সম্ভব নয়। জেতার পর প্রতি দিন নিষ্ঠাভরে রেওয়াজ করলে তা হলেই বিরজু মহারাজের মতো হতে পারবে। রিয়্যালিটি শো প্রতিভাকে চিহ্নিত করতে সাহায্য করে।
প্রশ্ন: নৃত্যশিল্পকে নিয়ে নতুন কিছু করার স্বপ্ন রয়েছে?
ডোনা: দেখুন, মানুষের স্বপ্নগুলো সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পাল্টে যায়। তাই নাচ-গানের মধ্যেই থাকতে চাই। আগে একটা সময় ছিল যখন কোনারক, মুক্তেশ্বর বা তাজ মহোৎসবের মতো বড় বড় উৎসবগুলোতে নাচতাম। অনেক বারই সেখানে আমার পারফর্ম করা হয়ে গিয়েছে। এখন আমাদের দেশের সংস্কৃতিকে বিদেশে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য আইসিসিআর নানা রকম অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে। এ বারও আমরা গেলাম। ভবিষ্যতেও এই ভাবেই বিশ্বমঞ্চে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করতে পারলে ভাল লাগবে।
প্রশ্ন: এ ধরনের অনুষ্ঠান কেন গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন?
ডোনা: আসলে আমাদের দেশের সংস্কৃতিকে নিয়ে প্রত্যেকের গর্ব বোধ করা উচিত। কেউ শিল্পী না-ও হতে পারেন, কিন্তু তিনি যদি শিক্ষিত হন, তা হলে অবশ্যই আমাদের এই বিশাল সংস্কৃতিকে আরও বেশি ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা উচিত। কারণ, কেউ বাংলা বা কর্নাটকের হয়ে ক্রিকেট খেলতেই পারেন। কিন্তু পাকিস্তান বা অস্ট্রেলিয়াকে হারানোর তো একটা অলাদা আনন্দ রয়েছে। সেটাকে অস্বীকার করি কী ভাবে!
প্রশ্ন: এ বারের বিদেশ সফরে অনুষ্ঠানকে কী ভাবে সাজিয়েছিলেন?
ডোনা: এ বার আমরা রবীন্দ্রনাথের ‘মায়ার খেলা’ নিয়ে গিয়েছিলাম। তবে স্বাধীনতার ৭৫ বছরকে মাথায় রেখে ছিল দেশাত্মবোধক গানের ব্যবহারও। হালেই আমাদের দুর্গাপুজো হেরিটেজ স্বীকৃতি পেয়েছে। তাই মা দুর্গাও এই ৪৫ মিনিটের অনুষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিলেন।
প্রশ্ন: আপনি আর সৌরভ বাংলার অন্যতম আইকন। দু’জনের স্বতন্ত্র পরিচিতি। যে নারীরা সমাজে নিজের পরিচয়ে পায়ের নীচের জমি শক্ত করতে চান, তাঁদের কিছু বলতে চান?
ডোনা: আমি মহারাজের স্ত্রী হিসাবে অত্যন্ত গর্বিত। যাঁরা গৃহবধূ এবং সংসার সামলাচ্ছেন বা সন্তানকে মানুষ করছেন, তাঁদের আমি আমার তরফ থেকে ‘পদ্মশ্রী’ দিতে চাই। কারণ চাকরিতে ছুটি পাওয়া যায়। কিন্তু যা-ই হোক না কেন, বাড়ির মহিলাদের প্রতি দিন এই একই কাজ করে যেতে হয়। ছুটি নেই। দেখেছি, গৃহস্থালীর কাজকে অনেকে কোনও কাজ হিসাবেই মনে করেন না। কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না, মায়েরা বাড়ির হাল ধরে রেখেছেন বলেই বাকিরা বাড়ির বাইরে পা রাখতে পারছেন। তাঁদের এই স্বার্থত্যাগ অনেক সময়েই অগোচরে রয়ে যায়। আবার দেখেছি, হয়তো বাচ্চার মা মারা গিয়েছেন বা মা চাকরির সূত্রে বাইরে থাকেন। সেই সব শিশুদের কী সুন্দর ভাবে বাবা একার হাতেই মানুষ করছেন। আসলে মানুষের পরিবারই তো শেষ কথা। তাই পরিবারকে আগলে রাখতে রাখতেই নিজের স্বপ্নকে ধাওয়া করতে হবে। দেখবেন ঠিক সাফল্য আসবে।