২৮ বছর পরেও বলি অভিনেত্রী দিব্যা ভারতীর মৃত্যুর কারণ অজানা। ১৯ বছর বয়সে পাঁচ তলা থেকে পড়ে মৃত্যু। হত্যা, আত্মহত্যা নাকি দুর্ঘটনা? সেই দিব্যার সম্পর্কে জেনে নিন কিছু তথ্য।
১৯৭৪ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি মুম্বইয়ে জন্ম। নবম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা। তারপর অভিনয়ে। তেলুগু ছবিতে দাগ্গুবাতি ভেঙ্কটেশের বিপরীতে শুরু। প্রথম হিন্দি ছবি ‘বিশ্বাত্মা’। ‘শোলা অউর শবনম’, ‘দিওয়ানা’ সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছে দেয়। ‘দিওয়ানা’-তে শাহরুখ খানের বিপরীতে। সঙ্গে ছিলেন প্রয়াত অভিনেতা ঋষি কপূরও।
‘শোলা অউর শবনম’-এ অভিনয়ের সময় গোবিন্দর সঙ্গে আলাপ। জানা যায়, তাঁদের মধ্যেও সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। দিব্যার সম্পর্কে গোবিন্দ বলেছিলেন, ‘‘দিব্যাকে আমার ভাল লাগে। এত মোহময়ী যে তাঁর সামনে পুরুষরা নিজেকে সামলাতে পারে না। কিন্তু দিব্যার মোহে পা দিইনি আমি এখনও।’’
গোবিন্দর মাধ্যমে পরিচয় প্রযোজক সাজিদ নাদিওয়াদওয়ালার সঙ্গে। তার পর বন্ধুত্ব, প্রেম। ১৯৯২ সালের ১০ মে বিয়ে। তারপর ইসলাম ধর্ম গ্রহণ। নতুন নাম সানা নাদিওয়াদওয়ালা। অভিনয়ে যাতে প্রভাব না পড়ে, বিয়ের কথা লুকিয়ে রাখা হয়েছিল।
১৯৯৩ সালের ৫ এপ্রিল পাঁচ তলা থেকে পড়ে গিয়ে প্রয়াত হন দিব্যা। যখন সবাই টের পান, দেরি হয়ে গিয়েছে। হাসপাতালে নিয়ে গেলেও বাঁচানো যায়নি ১৯ বছরের অভিনেত্রীকে।
দিব্যার রহস্যমৃত্যু নিয়ে বই লিখেছিলেন ট্রয় রিবেইরো। ঘটনাস্থলে যাঁরা ছিলেন, তাঁদের সঙ্গে কথা বলে অনেক অজানা তথ্য প্রকাশ করেছিলেন। রিবেইরো নিজেও এক জন সাক্ষী।
ট্রয়ের বই অনুযায়ী দিব্যা মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন বহু দিন ধরে। মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা আগে মদ্যপান করেছিলেন। বাড়িতে একাধিক অতিথি এসেছিলেন। দিব্যা নিজের গ্লাস ভর্তি করে বারান্দায় একা সময় কাটাচ্ছিলেন। পড়ে যাওয়ার আওয়াজ শুনে সবাই ছুটে যান। ট্রয় জানিয়েছেন, অতিথিরাই হাসপাতালে নিয়ে যান। চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।
ট্রয়ের লেখা থেকে জানা যায়, দিব্যার বাবা ও ভাইকে সামলানো যাচ্ছিল না। বাবা কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন, ‘‘ওরা আমার মেয়েকে মেরে ফেলল!’’ ভোর বেলা দিব্যার মা হাসপাতালে পৌঁছন। তিনি বিশ্বাসই করছিলেন না। তবে হাসপাতালেই দিব্যার বাবা ও ভাই মাকে দোষারোপ করছিলেন। যার কারণ আজও অজানা।
সাজিদ হাসপাতালে পৌঁছেছিলেন মৃত্যুর ঘণ্টা খানেক পরে। দিব্যার মৃতদেহ দেখে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েন বলে জানিয়েছেন ট্রয়। তাঁকে আইসিসিইউ-তে ভর্তি করা হয়। জ্ঞান ফেরার পর স্ত্রীর মৃত্যু মেনে নিতে পারছিলেন না। ফের তাঁকে ওষুধ দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেন চিকিৎসকরা।
দিব্যার এক অতিথি (ডিজাইনার নীতা লুল্লা) পুলিশকে জানান, কয়েক মুহূর্তের মধ্যে সব কিছু ঘটেছে। তাই তিনি স্পষ্ট করে জানেন না যে দিব্যা আত্মহত্যা করেছিলেন, নাকি পা পিছলে পড়ে গিয়েছিলেন।
দিব্যার বন্ধু পুলিশকে জানান, মৃত্যুর সময়ে নীতা তাঁর সঙ্গেই ছিলেন। দিব্যা বারান্দার রেলিংয়ের ধারে দাঁড়িয়ে আত্মহত্যার হুমকি দিচ্ছিলেন। নীতা বাঁচানোর জন্য এগোতে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে দিব্যার ঝাঁপ। সে দিন সন্ধেবেলা সাজিদের সঙ্গে বিবাদ হয়। সাজিদ বা়ড়ি থেকে বেরিয়ে যান। দিব্যা হুমকি দিয়েছিলেন, ‘‘তুমি যদি ১০ মিনিটে ঘরে না ঢোকো, আমাকে আর দেখতে পাবে না।’’ দিব্যার বন্ধু জনায়, সাজিদ হুমকিকে পাত্তা দেননি।
দিব্যার আর এক প্রতিবেশী বলেন, সে দিন সাজিদের সঙ্গে ঝগড়ার পর অনেকগুলি ঘুমের ওষুধ খান দিব্যা। সাজিদ ভয় পেয়ে তাঁদের প্রতিবেশী নীতা লুল্লা ও তাঁর স্বামীকে ডাকেন। তাঁরা এসে দিব্যার ভাই (সেই সময়ে দিব্যার ভাই তাঁর বাড়িতেই ছিলেন) এবং সাজিদকে বের করে দেন। বলেন, তিনি দিব্যার সঙ্গে আলাদা কথা বলবেন। পরিচারিকাকে থাকতে বলা হয়। তিনি ছিলেন রান্নাঘরে। দিব্যা রান্নাঘরে আরও মদ্যপান করে সবার অলক্ষ্যে বারান্দায় চলে যান। কয়েক মুহূর্ত পরেই সব শেষ হয়।
বোঝা যায়, ট্রয় তাঁর সন্দেহের তালিকা থেকে বাদ দিতে চাননি পরিচারিকাকেও। তাঁর বক্তব্য, মৃত্যুর আগে পরিচারিকাই শেষ বার দেখেছিলেন দিব্যাকে। কিন্তু ট্রয়ের আক্ষেপ, পুলিশ এক বারও তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করেনি।
দিব্যার মৃত্যুর খবর পেয়েই হাসপাতালে গিয়েছিলেন বনি কপূর, গোবিন্দ, সঞ্জয় কপূর, সইফ আলি খান প্রমুখ।