(বাঁ দিকে) পুনম পাণ্ডে এবং (ডান দিকে) সংস্থার তরফে পোস্ট। —ছবি: ইনস্টাগ্রাম।
শুক্রবার সকালে সমাজমাধ্যমে পোস্ট— জরায়ু-মুখের ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে পুনম পাণ্ডে মারা গিয়েছেন। তার পরের ২৪ ঘণ্টা বেশ উত্তেজনাময়। এই সময় জুড়ে ছিল নিস্তব্ধতা। কিন্তু তোলপাড় শুরু হয়ে বলিউড এবং সমাজমাধ্যমে । ২৪ ঘণ্টা পর শনিবার মডেল-অভিনেত্রী নিজেই প্রকাশ্যে আসেন। জানান, তিনি বেঁচে রয়েছেন। পাশাপাশি জানালেন, ২৪ ঘণ্টার জন্য তাঁর ‘নিখোঁজ’ হওয়ার কারণও। জরায়ু-মুখের ক্যানসার নিয়ে মহিলাদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি ছিল তাঁর উদ্দেশ্য। তবে এই ঘটনায় পুনমের প্রতি রুষ্ট হয়ে যান অনেকেই। এমনকি মৃত্যুর ভুয়ো খবর ছড়ানোর জন্য মুম্বই পুলিশের কাছে অভিযোগ জানান মহারাষ্ট্রের বিধায়ক সত্যজিৎ তাম্বে। তাঁর মতে, মৃত্যুর ভুয়ো খবর ছড়িয়ে পুনম যা করেছেন তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। নেটব্যবহারকারীদের একাংশ দাবি করেন যে, পুনম নজর কাড়ার জন্য এ সব করেছেন। আবার নেটব্যবহারকারীদের অন্য অংশ এই ঘটনার জন্য দায়ী করেন পুনমের ‘পাবলিক রিলেশন’ (পিআর) টিমকে। শেষ পর্যন্ত এই ঘটনার দায়ভার নিল এক সংস্থা। শুধু তাই নয়, সমাজমাধ্যমে ক্ষমা প্রার্থনা করতেও দেখা গেল তাদের।
‘স্কব্যাং’ নামে এক সংস্থা ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করে জানান, জরায়ু-মুখের ক্যানসার নিয়ে পুনমের মৃত্যুর ভুয়ো খবর ছড়ানোর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে তারা। এমনকি, ‘হটারফ্লাই’ নামে অন্য একটি সংস্থার সঙ্গেও হাত মিলিয়েছিল তারা। নিজেদের কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা প্রার্থনাও করা হয় সংস্থার তরফে। পোস্টে লিখে তারা জানায়, ‘‘ক্যানসারের কারণে যাঁরা তাঁদের প্রিয়জনকে হারিয়েছেন, এই ঘটনা যাঁদের আঘাত দিয়েছে, তাঁদের সকলের কাছে আমরা ক্ষমা চাইছি। আমাদের একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল জরায়ু-মুখের ক্যানসার নিয়ে সকলকে সচেতন করা।’’
জরায়ু-মুখের ক্যানসার ঠিক কোন গতিতে ভারতীয় মহিলাদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে সেই ব্যাখ্যাও দেয় সংস্থা। পোস্টে তারা লেখে, ‘‘২০২২ সালে ভারতে মোট ১,২৩,৯০৭ জন মহিলা জরায়ু-মুখের ক্যানসারে আক্রান্ত হন। তাঁদের মধ্যে মারা যান ৭৭,৩৪৮ জন। স্তন ক্যানসারের পর ভারতে মধ্যবয়সি মহিলারা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হন জরায়ু-মুখের ক্যানসারে।’’
পুনমের মা ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছিলেন বলে জানায় সংস্থা। তাদের দাবি, ক্যানসার রোগ নিরাময় এবং প্রতিরোধ নিয়ে পুনম সচেতন। ভ্যাকসিনের মাধ্যমে যে জরায়ু-মুখের ক্যানসার নিরাময় সম্ভব, তা-ও জানায় সংস্থা।
পোস্টে তাদের মন্তব্য, ‘‘কয়েক দিন আগেও যখন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী বাজেট পেশ করার সময় জরায়ু-মুখের ক্যানসারের প্রসঙ্গ তুলেছিলেন তখন তা নিয়ে এত হইচই হয়নি। পুনমের মৃত্যুর খবর ছড়ানোর পর থেকেই এই রোগ নিয়ে হঠাৎ আলোচনা বেড়ে যায়।’’ নেটেও এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি ‘সার্চ’ করা হয়েছে জরায়ু-মুখের ক্যানসার নিয়ে। এমনটাই দাবি করেছে সংস্থা। একটি রেখচিত্রের ছবি দিয়ে সেই ব্যবধানও দেখিয়েছে তারা।
পুনম তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে একটি ভিডিয়ো পোস্ট করে তাঁর তলায় লিখে জানান, চার মাস আগে থেকেই তিনি এই ঘটনার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তাঁর সহকারীরা এর জন্য দায়ী নয়, তা-ও জানান পুনম।
শুক্রবার সকালে পুনমের অ্যাকাউন্ট থেকে একটি পোস্ট দিয়ে জানানো হয় জরায়ু-মুখের ক্যানসারে মৃত্যু হয়েছে অভিনেত্রীর। পোস্টে লেখা হয়, ‘‘দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি জরায়ুর ক্যানসারে আমরা আমাদের প্রিয় পুনমকে হারিয়ে ফেললাম। দুঃখের এই সময়ে, আমরা আপনাদের কাছে সব রকম গোপনীয়তার জন্য অনুরোধ করব। আমরা স্নেহের সঙ্গে ওকে স্মরণ করব।’’
খবরটা প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই জল্পনা ছিল আদৌ কি সত্যি, না কি গোটাটাই গুজব? বেলা বাড়তেই অভিনেত্রীর সহকারীর তরফে তাঁর মৃত্যুর খবরে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। তবে শুক্রবার দিনভর পুনমের মৃত্যু নিয়ে জলঘোলা চলে। নিত্যনতুন তথ্য আসে। কখনও জরায়ু-মুখের ক্যানসার, কখনও মাত্রাতিরিক্ত মাদক। মায়ানগরীতে কেউই যেন বিশ্বাস করে উঠতে পারছিলেন না, ‘পুনম নেই’। প্রায় এক দিনের নিস্তব্ধতা, তার পরই ‘বেঁচে উঠলেন’ পুনম।