মহামিছিলে বিচারের দাবি। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
বিচারের দাবি। সেই দাবিতেই মুণ্ডিত মস্তকে মিছিলে হাঁটতে এসেছেন এক মধ্যবয়সি মহিলা। তাঁর কেশহীন মস্তকে আর এক মহিলা লিখে দিচ্ছেন ‘বিচার চাই’, লাল সেই অক্ষর। প্রতিবাদের এক অন্য রূপ যেন। এমন বিদ্রোহ কখনও দেখেনি কেউ!
কলেজ স্ট্রিট, যে পথ শত বছর ধরে সাক্ষী বিদ্রোহ-বিপ্লবের, সেই পথই আবার উত্তাল, কলকাতার জন্য। বিচারের দাবিতে প্রায় ২৫ দিন ধরে পথে নামছেন শহরের মানুষ। রবিবার আপাত শান্ত এক শরৎকালীন অপরাহ্নও উত্তাল হয়ে উঠল স্লোগানে, মানুষের পদবিক্ষেপে। সমাজের নানা স্তরের মানুষ একে একে এসে জমায়েত করলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে। মিছিল চলল ধর্মতলার দিকে।
গত ৯ অগস্ট সকালে শ্যামবাজার থেকে কয়েকশো মিটার দূরে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে পাওয়া যায় এক মহিলা চিকিৎসক-পড়ুয়ার মৃতদেহ। তরুণীকে নির্যাতন করে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ। ঘটনার পরই কলকাতা পুলিশ গ্রেফতার করে এক সিভিক ভলান্টিয়ারকে। তার পর তদন্তের ভার চলে যায় সিবিআইয়ের হাতে। কিন্তু ২৫ দিন পরও তদন্তের অগ্রগতি সংক্রান্ত কোনও তথ্য জানতে পারেননি আমজনতা। বিচারের দাবিতে প্রায় প্রতি দিনই কলকাতায় হচ্ছে মিছিল, জমায়েত।
এ দিনও যাঁরা মহামিছিলে যোগ দিয়েছিলেন, তাঁরা সকলেই জানিয়েছেন বিচারের দাবিতে তাঁরা রাস্তায় থাকবেন। মিছিলে হাঁটতে যেমন এসেছিলেন অপর্ণা সেন, চৈতি ঘোষাল, স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়, অনন্যা চট্টোপাধ্যায়ের মতো তারকারা। তেমনই ছিলেন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষেরা, ছিলেন বৃদ্ধা থেকে শিশু— সকলেই। প্রায় সকলের হাতেই ছিল পোস্টার, বিচার চাই।
ঘটনার ২৩ দিন পর সাধারণ মানুষের এমন স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন সাম্প্রতিক অতীতে কলকাতা দেখেনি। এই প্রসঙ্গে অভিনেত্রী চৈতি ঘোষাল বলেন, “১৪ অগস্ট থেকে প্রতিবাদ শুরু করেছি। এই প্রতিবাদ চলতে থাকবে। দোষীর কড়া শাস্তি চাই। সিবিআই কেন এখনও গ্রেফতার করছে না? তদন্ত কোথায় দাঁড়িয়ে রয়েছে, আমরা জানতে চাই। এর পরে কী হবে জানি না। যাঁরা রাস্তায় আন্দোলন করেন, তাঁরা জানেন না পরের দিন কী হবে। কিন্তু সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত থামব না।”
অভিনেত্রী উষসী চক্রবর্তী বলেন, “আমাদের হাতে কিছু নেই। শেষ অবধি বিচারের দাবি থাকবে। এক জন কর্মরত চিকিৎসকের যদি সুরক্ষা না থাকে, তা হলে আমরা কেউ নিজেদের কর্মস্থলে সুরক্ষিত নই। আমাদের মুখ্যমন্ত্রী খুব জনপ্রিয়। বিপুল ভোটে তিনি জয়ী হয়েছেন। মহিলা হিসেবে ওঁর কাছে আবেদন জানাচ্ছি, সমস্ত ক্ষমতা প্রয়োগ করে দোষীকে আটক করুন। তা হলে আমরা নিরাপদ বোধ করব।”
তৃতীয় লিঙ্গের প্রতিনিধি বন্যা কর বলেন, “২৩ দিন হয়ে গেল। এখনও বিচার হয়নি। অর্থাৎ, বিচার দিতে অস্বীকার করা হচ্ছে। এটা মানুষের মিছিল। রাজনৈতিক দলের নয়। তবে নারী সুরক্ষার জন্য লড়াইটাও রাজনৈতিক। নারী-পুরুষের বিভাজনের বিরুদ্ধে লড়াইটাই তো সবচেয়ে বড় আন্দোলন। পুরুষতন্ত্র যে ভাবে অন্য লিঙ্গের মানুষদের দমিয়ে রাখছে সেটাও রাজনীতি। আমাদের বিচারের দাবি শুধু এই একটি ঘটনার জন্য নয়। হাজার হাজার নির্যাতিতার জন্য।”