Semester System In Primary

কার দায়িত্ব

প্রাথমিকে সিমেস্টার চালুর ক্ষেত্রে তীব্র আপত্তি জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, কলেজে যা চলে, স্কুলে তা চলে না। স্কুলে যে প্রথা চলছে, তা-ই বজায় থাকবে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০২৫ ০৫:৫৯

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

পশ্চিমবঙ্গে সম্প্রতি কোনও সরকারি সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রশাসনের শীর্ষ স্তরের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দফতরের যোগাযোগের অভাবটি প্রায়শই প্রকট হয়ে উঠছে। রাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রটিও এই প্রবণতা থেকে বাদ পড়েনি। কিছু দিন পূর্বেই প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়েছিল চলতি বছর থেকে প্রাথমিকে সিমেস্টার চালু হবে। অতঃপর নবান্ন সভাঘরে ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী জানালেন, এই নতুন ব্যবস্থার কথা তিনি জেনেছেন সংবাদপত্র থেকে। প্রাথমিকে সিমেস্টার চালুর ক্ষেত্রে তাঁর তীব্র আপত্তি জানিয়ে তিনি বলেছেন, কলেজে যা চলে, স্কুলে তা চলে না। স্কুলে যে প্রথা চলছে, তা-ই বজায় থাকবে। প্রসঙ্গত, জাতীয় শিক্ষানীতি অনুসারে ইতিপূর্বে এ রাজ্যে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির পাঠ্যক্রমকে চারটি সিমেস্টারে ভাগ করা হয়েছে। কিন্তু জাতীয় শিক্ষানীতিতেও প্রাথমিকে সিমেস্টার চালুর কথা বলা হয়নি। তা ছাড়া শিক্ষা কেন্দ্র ও রাজ্য যৌথ তালিকাভুক্ত। তদুপরি, জাতীয় শিক্ষানীতিকে সম্পূর্ণরূপে পশ্চিমবঙ্গ গ্রহণও করেনি। সুতরাং বিদ্যালয় স্তরে, বিশেষত প্রাথমিকে পঠনপাঠনের পদ্ধতি কেমন হবে, মূল্যায়নের কোন নীতি নেওয়া হবে, তা স্থির করার পূর্ণ অধিকার রাজ্যের আছে। সুতরাং মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের স্বকীয় নীতি রাখতে চাইলে তা অসঙ্গত নয়।

Advertisement

মুখ্যমন্ত্রী আরও একটি বিষয়ে জোর দিয়েছেন— তিনি শিশুদের কাঁধের বোঝা কমাতে চান। বলা দরকার, সিমেস্টার ব্যবস্থায় পঠনপাঠনের বোঝা বৃদ্ধি পায়, এমন কোনও যুক্তিগ্রাহ্য প্রমাণ নেই। বরং বছর-শেষে একটিমাত্র পরীক্ষার উপর সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করা হলে শিক্ষার্থীর সার্বিক প্রস্তুতির প্রতিফলন দেখা যায় না, তদর্থে মূল্যায়নের কাজটিও অসম্পূর্ণ থেকে যায়। প্রাথমিকে সিমেস্টারের যে রূপরেখা এ ক্ষেত্রে তুলে ধরা হয়েছিল, তা যথেষ্ট বাস্তবসম্মত। তবে শিক্ষার ক্ষেত্রে তো শুধুমাত্র পরিকল্পনাই যথেষ্ট নয়, তার প্রায়োগিক দিকটি নিয়েও ভাবনাচিন্তা প্রয়োজন, যা এ ক্ষেত্রে করা হয়নি। শিক্ষকের অভাবে প্রাথমিক স্কুলগুলি ধুঁকছে। বহু স্কুলে নিয়মিত পঠনপাঠনের কাজটিও হয় না। তদুপরি সরকারি অনুদান অনিয়মিত হওয়ায় শিক্ষা-সহায়ক সরঞ্জাম কেনায় টান পড়ছে। পরিকাঠামোগত এমন বেহাল দশায় এই উদ্যোগ যে সফল হতে পারে না, পর্ষদের তা অনুধাবন করা উচিত ছিল।

কিন্তু অনুধাবনের প্রশ্নটিরও আগে আসে আলোচনার প্রশ্ন। বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগের। শিক্ষা সংক্রান্ত যে কোনও সিদ্ধান্ত গ্রহণের পূর্বে তার প্রয়োগ এবং পরিণতি বুঝে নিতে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের সঙ্গে স্পষ্ট আলোচনা প্রয়োজন— সে কি এতই কঠিন কাজ? প্রাথমিক শিক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের কথা ভাবা হল, অথচ মুখ্যমন্ত্রী তার আভাসমাত্র পেলেন না, এমন তো প্রত্যাশিত নয়। এই ধরনের অ-প্রস্তুতি এবং অপরিণামদর্শিতা শিক্ষার ক্ষেত্রে পরিত্যাজ্য, বিশেষত যেখানে শিশুদের ভবিষ্যতের প্রশ্ন জড়িয়ে। এবং এই ভয়ঙ্কর প্রবণতা শুধুমাত্র শিক্ষায় নয়, প্রশাসনের অন্য দিকেও প্রত্যক্ষ করা যাচ্ছে। মন্দারমণিতে বেআইনি হোটেল নির্মাণের মতো একাধিক ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং প্রকাশ্যে ক্ষোভ জানিয়েছেন তিনি বিষয়টি সম্পর্কে অবগত ছিলেন না বলে। স্পষ্ট কথাটি স্পষ্ট করে বলা যাক। মুখ্যমন্ত্রীর আপাত অনবধানেই যদি এত কিছু হয়ে থাকে, তা কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসন ক্ষমতা বিষয়েই প্রশ্ন তোলে।

Advertisement
আরও পড়ুন