আরজি কর-কাণ্ডে সরব সিধু। গ্রাফিক : সনৎ সিংহ।
২০০৩ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি চিকিৎসা বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা মাঝপথে ছেড়ে দিই। জীবিকা হিসেবে বেছে নিয়েছিলাম সঙ্গীতকে। এক রাতের সিদ্ধান্তে অর্থ ও যশের সম্ভাব্য পেশার সম্মান, সব কিছু ত্যাগ করেছিলাম। কিন্তু, এমন ভাবে এক মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক-পড়ুয়া চর্চায় উঠে আসবেন তা স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি। সে অবশ্য চিকিৎসকই হতে চেয়েছিল। কিন্তু পরিণতিটা এমন হবে ভেবেছিল কেউ? গত কয়েকদিন সংবাদমাধ্যম, নেটমাধ্যমে বিভিন্ন তথ্য উঠে এসেছে। প্রতি মুহূর্তে বিচলিত হচ্ছি। তবে যা শুনছি বা জানছি, তা বিভীষিকাময়। শরীরে একাধিক ক্ষত, যোনিতে মিলেছে বীর্য। দু’চোখ দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়ার চিহ্নও পাওয়া গিয়ে মৃতার শরীরে। দেখলাম এখনও পর্যন্ত একজন ধরা পড়েছে। সঞ্জয় রায় নামক এক সিভিক ভলান্টিয়ার। টেলিভিশনে তার যা চেহারা দেখলাম দেখে তো বিরাট বলশালী ঠেকল না। যদিও হতেই পারে একজনের দেহে তেমন দানবীয় শক্তি রয়েছে। তবু যেন কেমন একটা অদ্ভুত লাগছে, এই কাজ একজনের নয়। হয়তো। তা ছাড়া, এমন পাশবিক অত্যাচার হচ্ছে, একবারও মেয়েটির চিৎকার কেউ শুনতে পেলেন না কেন? অনেক গুলি প্রশ্ন রয়েছে আসলে, যার উত্তর মিলছে না। আমার মনে হয় একটা ধ্বস্তাধ্বস্তি হয়েছে সেটা এক বা একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে হয়েছে।
এই ঘটনার যে মূল স্থান, সেটা আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের সেমিনার কক্ষ। সেখানে যে কেউ খানিক বিশ্রাম নিতে পারে। শুনেছিলাম, মেয়েটি গত ৩৬ ঘণ্টা কাজ করেছিলেন। এটা আসলে চিকিৎসকদের ক্ষেত্রে খুব সাধারণ একটা বিষয়। সারা রাত যখন কাজ থাকে তখন কাজের ফাঁকে বিশ্রাম পাওয়া যায়। সেই সময় চিকিৎসকরা নির্ধারিত কক্ষেই বিশ্রাম নেন। সেই বিশ্রামটা দীর্ঘ হয়, কখনও আবার সেই বিশ্রামের সময় হয় স্বল্প। যখন হাতে সময় কম থাকে তখন, অনেক সময়ই নির্ধারিত ঘরে না গিয়ে সেমিনার কক্ষে কিংবা আশে পাশে কোথাও জিরিয়ে নেন কেউ কেউ। কারণ সাধারণত বিশ্রাম কক্ষ গুলো দূরেই হয়। এই সব কটা ঘটনাই কিন্তু অস্বাভাবিক কিছু না। আমি নিজেও পিজিটি (পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেনি) চিকিৎসক ছিলাম। আমারও রাতের ডিউটি থাকত। তাই আমি নিজেকে মেয়েটির পরিস্থিতিতে ভাবতে পারি। আমাদের সময় দেখেছি, নির্ধারিত বিশ্রামকক্ষে একটি বিছানা, চেয়ার টেবিল থাকত, দরজায় ছিটকিনির ব্যবস্থা থাকত। আমাদের সময় নিরাপত্তার কোনও অভাব বোধ করিনি। কিন্তু এরকম ঘটনা একটা কলেজে ঘটতে পারে তা অকল্পনীয়।
আমার কেবলই মনে হচ্ছে, এটা একটা ভয়াবহ ঘটনা তো বটেই, পাশপাশি এই ঘটনায় জড়িত দুষ্কৃতীদের সাহস বা দুঃসাহস অপরিসীম। এই ঘটনার পর একটা কথা মনে হয়, খুঁটির জোর না থাকলে এমন সাহস পাওয়া মুশকিল। বার বার মনে হচ্ছে এই কাণ্ড যাঁরা ঘটিয়েছেন, তাঁদের খুঁটির জোর আছে। কে বা কার আছে তাঁদের পরিচয় প্রকাশ্যে আসুক সেটাই চাইব। সংবাদ মাধ্য়ম থেকেই জানতে পারছি কেউ কেউ এই ব্যাপারটা ধামা চাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে। কিংবা অপরাধীদের আড়াল করার চেষ্টা করছে। সেটা কিন্তু আসল ঘটনার থেকে অনেক বেশি ভয়াবহ।