নির্বাচনের মরসুমে একাধিক বাংলা ছবির মুক্তি পেতে পারে। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
আসন্ন লোকসভা ভোটের নির্ঘণ্ট প্রকাশ্যে। এ রাজ্যে সাত দফায় ভোট হবে। তার মধ্যে মে মাসেই রাজ্যে চার দফা ভোট (৭, ১৩, ২০ ও ২৫ মে)। এ দিকে এপ্রিল-মে মাসে টলিপাড়ায় একাধিক ‘বড়’ বাংলা ছবি মুক্তি পাওয়ার কথা। বিগত কয়েক সপ্তাহ ভোটের নির্ঘণ্ট না জানা পর্যন্ত প্রযোজক থেকে নির্মাতা, ছবি মুক্তির ক্ষেত্রে প্রত্যেকেই জল মেপে এগোতে চাইছিলেন। তাই এ বার ছবিমুক্তি নিয়ে টলিপাড়ায় নানা গুঞ্জন।
বাংলা ছবি না কি নির্বাচন, এগিয়ে কে? ভোটের মরসুমে বাংলা ছবির মুক্তি কি পিছোবে? বক্স অফিসে ভোটের প্রভাব কতটা পড়তে পারে? ইন্ডাস্ট্রির বিভিন্ন মহলের সঙ্গে কথা বলে সামগ্রিক পরিস্থিতি জরিপ করল আনন্দবাজার অনলাইন।
অভিনেতা-প্রযোজক অঙ্কুশ হাজরা আগেই জানিয়েছিলেন যে, এপ্রিল মাসে ইদের মরসুমে তাঁর প্রথম প্রযোজিত ছবি ‘মির্জ়া’ মুক্তি পাবে। ১৯ এপ্রিল থেকে শুরু হচ্ছে ভোট। তিনি কতটা আত্মবিশ্বাসী? অঙ্কুশ বললেন, ‘‘ভোটের আগে আমাদের ছবি ১০ দিন সময় পাবে। বাণিজ্যিক ছবির ভবিষ্যৎ প্রথম সপ্তাহেই আন্দাজ করা যায়। সে দিক থেকে ভোট নিয়ে আমি কখনও টেনশন করিনি। তা ছাড়া, কলকাতায় ভোট জুন মাসে। তাই মনে হয় না, কোনও সমস্যা হবে।’’ একই সঙ্গে অঙ্কুশ বললেন, ‘‘বক্স অফিস বা ভোটের মতো বিষয়গুলো নিয়ে আমি চিন্তিত নই। প্রচুর পরিশ্রমের ফসল ‘মির্জ়া’। দর্শক ছবিটা দেখে কী বলেন, সেটাই আমার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’’
অন্য দিকে মে মাসে রাজ্যের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে গরমের ছুটি থাকে। ফলে এই সময়ে অনেকেই ছবি নিয়ে আসতে চান। মে মাসের প্রথমার্ধে যে ‘বুমেরাং’ ছবিটি নিয়ে আসছেন, সে কথা আগেই ঘোষণা করেছিলেন জিৎ। এই ছবির মুক্তি কি পিছোতে পারে? ছবির পরিচালক সৌভিক কুন্ডু বললেন, ‘‘আমরা মুক্তির দিনকে মাথায় রেখেই এগোচ্ছি। জোরকদমে পোস্ট প্রোডাকশনের কাজ চলছে। বাকিটা প্রযোজকের সিদ্ধান্ত।’’
মে মাসে বাংলা ছবির মুক্তির রীতি শুরু হয় শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ও নন্দিতা রায়ের হাত ধরে। টলিপাড়ায় গুঞ্জন, চলতি বছরে মে মাসের শেষে তাঁরা রাখি গুলজ়ার অভিনীত ‘আমার বস্’ ছবিটি রিলিজ় করতে পারেন। এই মুহূর্তে শিবপ্রসাদ-নন্দিতা জুটি ‘বহুরূপী’ ছবির শুটিংয়ে ব্যস্ত। কিন্তু সূত্রের খবর, মে মাসকে মাথায় রেখেই ‘আমার বস্’-এর পোস্ট প্রডাকশনের কাজ সারছে টিম। গত বছর এই জুটির ‘রক্তবীজ’ ছবিটির পরিবেশক ছিলেন বাবলু দামানি। তাঁর কথায়, ‘‘ভোটের মরসুমে যে কোনও ছবি নিয়েই প্রযোজকের মনে একটা উৎকণ্ঠা কাজ করে। কিন্তু বিষয়বস্তু ভাল হলে ভোট কোনও সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে না। ‘আমার বস্’ নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন ওঁরাই (শিবপ্রসাদ-নন্দিতা)।’’ আনন্দবাজার অনলাইনের তরফে যোগাযোগ করা হলে শিবপ্রসাদ একটু অন্য ভাবেই উত্তর দিলেন। আত্মবিশ্বাসী পরিচালক বললেন, ‘‘২০১৪ সালে ভোটের সময়ে ‘রামধনু’ এবং ২০১৯ সালে ‘কণ্ঠ’ মুক্তি পেয়েছিল। ছবির উপর তো কোনও প্রভাব পড়েনি! তাই ভয়ের কোনও কারণ দেখছি না।’’
১৪ মে প্রয়াত পরিচালক মৃণাল সেনের জন্মদিন। সৃজিত মুখোপাধ্যায় পরিচালিত পরিচালকের বায়োপিক ‘পদাতিক’-এর জন্য মে মাসকেই পাখির চোখ করেছেন প্রযোজক ফিরদৌসুল হাসান। তিনি কিন্তু ছবিমুক্তি নিয়ে পিছু হটতে নারাজ। সাফ বললেন, ‘‘অন্য কোনও কারণে ছবির মুক্তি পিছোতে পারে। কিন্তু সেটা কখনওই ভোট নয়।’’ ফিরদৌসুলের পর্যবেক্ষণ, ভোটের সময় মানুষের দৈনন্দিন জীবনের কোনও কাজই থেমে থাকে না। তাঁর যুক্তি, ‘‘সমাজের একটা শ্রেণি ভোট নিয়ে ব্যস্ত থাকে। ভোটের দিন হয়তো একটু সমস্যা হতে পারে। সাধারণ মানুষ ভোট দিয়ে তার পর ছবি দেখবেন বলেই আমার বিশ্বাস।’’
ভোটের মরসুমে সিনেমা দেখার আগ্রহ কি দর্শকদের মধ্যে কম থাকে? প্রিয়া সিনেমার কর্ণধার অরিজিৎ দত্ত বললেন, ‘‘ভোটের দিন হয়তো দর্শক কমতে পারে। তার থেকেও বড় কথা, রাজ্যবাসী ভোট নিয়ে উৎসাহী হলেও সবাই তো কোনও দলের সদস্য বা ভোটকর্মী নন। অতীতে ভোটের দিন ছাড়া অন্য দিনগুলোয় তো কোনও পার্থক্য লক্ষ করিনি!’’ মাল্টিপ্লেক্স চেন পিভিআর-আইনক্স-এর তরফে পঙ্কজ লাডিয়া বিষয়টা আরও স্পষ্ট করলেন। বললেন, ‘‘সাধারণত ভোটের সময়টা অনেক প্রযোজকই এড়িয়ে চলতে পছন্দ করেন। কিন্তু শহুরে ছবির ক্ষেত্রে ৮০ শতাংশ ব্যবসাই আসে শহর থেকে। তাই মনে হয় না, কোনও সমস্যা হবে।’’ কথা প্রসঙ্গেই পূর্ব অভিজ্ঞতা শোনালেন পঙ্কজ। বললেন, ‘‘বিগত বছরগুলোয় দেখেছি, ভোটের দিন কিন্তু সন্ধ্যায় সিনেমা হল খুললে প্রথম শো হাউসফুল থাকে। আমার ধারণা, ভোটের কথা মাথায় রেখে ছবির মুক্তি পিছিয়ে দেওয়াটা ঠিক নয়।’’
শোনা যাচ্ছে, এসভিএফ প্রযোজিত ‘অথৈ’ ছবিটি নাকি এপ্রিল-মে নাগাদ মুক্তি পেতে পারে। কিন্তু সূত্রের খবর, সোমবার পর্যন্ত এই ছবির মুক্তি নিয়ে নির্মাতাদের তরফে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। আবার ফেলুদার নতুন ছবি ‘নয়ন রহস্য’-এর নাকি মে মাসে মুক্তি নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে বলে খবর। যদিও পরিচালক সন্দীপ রায় এখনও পর্যন্ত ছবির মুক্তি নিয়ে কোনও তথ্য জানাননি।
এ দিকে দুই বাংলার যৌথ প্রযোজনায় তৈরি ছবি ‘দরদ’ নিয়েও অনুরাগীদের মধ্যে কৌতূহল রয়েছে। ছবিতে শাকিব খান এবং বলিউড অভিনেত্রী সোনাল চৌহান রয়েছেন। নির্মাতারা আগে জানিয়েছিলেন, ইদের পর ছবিটি মুক্তি পেতে পারে। ছবির পরিচালক অনন্য মামুন আনন্দবাজার অনলাইনকে বললেন, ‘‘যে কোনও ব্যবসার ক্ষেত্রেই ভোটের একটা প্রভাব থাকেই। বিনোদন জগতে এর প্রভাব বেশি। কারণ, যাঁরা ছবি দেখেন, তাঁদের একটা বড় অংশ নির্বাচনে ব্যস্ত থাকেন। আমরা হয়তো এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে ‘দরদ’-এর মুক্তি নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেব।’’
অন্য দিকে, ১০ এপ্রিল মুক্তি পাচ্ছে হিন্দি ছবি ‘ময়দান’ ও ‘বড়ে মিঞা ছোটে মিঞা’। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শহরের এক পরিবেশকের কথায়, ‘‘এখনই পরিস্থিতি নিয়ে খুব বেশি কিছু অনুমান করা মুশকিল। ‘ময়দান’ আবার কলকাতা ও ফুটবলের প্রেক্ষাপটে তৈরি। ফলে বাংলা ছবির জায়গা পাওয়া নিয়ে একটা প্রতিযোগিতা থাকবেই।’’