শুটিং ফ্লোরে শুভ্রজিৎ মিত্র এবং শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।
গিন্টুর (শ্রাবন্তীর ডাক নাম) জন্মদিনে আমি শহরে নেই। এই মুহূর্তে আমি দিল্লিতে রয়েছি। ওর সঙ্গে আমার প্রথম আলাপ প্রায় বছর দশেক আগে। কোনও একটা কাজের সূত্রেই আমাদের দেখা। তার পর সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্ব হয়। জন্মদিনে ওকে নিয়ে নানা স্মৃতিই মাথায় ভিড় করে আসছে।
গিন্টু খুব শক্তিশালী অভিনেত্রী। আমার মতে, ওকে এখনও সেই ভাবে বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে এক্সপ্লোর করা হয়নি। মেকআপ ছাড়া ওর মতো সুন্দরী অভিনেত্রী আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে খুব কমই রয়েছেন। আমার পরিচালনায় ‘দেবী চৌধুরানী’ ছবিতে নামভূমিকায় ও অভিনয় করেছে। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বর্ণনার সঙ্গে গিন্টুর লুক একেবারে মিলে যায়। তার থেকেও বড় কথা, ওর লুকের মধ্যে একটা বাঙালিয়ানা রয়েছে, যেটা এই চরিত্রের অন্যতম শর্ত ছিল। সেই ভাবনা থেকেই এই ছবিতে ওকে নির্বাচন করি। শুটিংয়ের আগে ইন্ডাস্ট্রির প্রথম সারির একাধিক অভিনেত্রী এই চরিত্রে অভিনয় করতে চেয়ে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। সত্যি বলছি, যে ভাবনা থেকে আমি গিন্টুকে বেছে নিই, এই ছবিকে ও তার থেকেও আরও বেশি কিছু দিয়েছে।
কাজের প্রতি গিন্টুর নিষ্ঠা আমাকে অনুপ্রাণিত করে। দেবী চৌধুরানি হয়ে উঠতে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে গিন্টু পরিশ্রম করেছে। তলোয়ার চালানো শেখা থেকে শুরু করে অ্যাকশনের তালিম— সবই নিয়েছে। শুরু থেকেই ওর এই সফরের আমি অংশ ছিলাম। বলা যায়, পর্দার বাইরে আমিই যেন তখন ভবানী পাঠক হয়ে উঠেছিলাম। শুটিংয়ে একাধিক বার চোট-আঘাত পেয়েছিল গিন্টু। মাথার ঘাম নয়, রীতিমতো রক্ত ঝরিয়ে অভিনয় করেছে! তির ছুড়তে গিয়ে ধনুকের ছিলায় আঙুল কেটে গিয়েছে। আঙুলে ব্যান্ডেজ। সেই অবস্থায় একের পর এক শট দিয়েছে গিন্টু। হামাগুড়ি দেওয়ার দৃশ্যে হাঁটু ধারালো নুড়ি-পাথরে ক্ষতবিক্ষত! তার পরেও শট দিয়েছে। পরিচালক হিসেবে এর থেকে বেশি আমি ওর কাছে আর কী-ই বা দাবি করতে পারি!
‘দেবী চৌধুরানী’ করতে গিয়ে গিন্টুকে আমি যে ভাবে আমি দেখেছি, তা ওর প্রতি আমার বিশ্বাসকেও আরও পোক্ত করেছে। আমার পরবর্তী ছবি ‘কালমৃগয়া’তে-ও স্বাভাবিক ভাবেই গিন্টুকেই বেছে নিয়েছি। আপাতত আমি শহরে ফিরলে ওর সঙ্গে ‘দেবী চৌধুরানী’র ডাবিং শুরু করব।
জন্মদিনে গিন্টুকে অনেক অনেক শুভচ্ছা। আলাদা করে ওকে এটাই বলতে চাই, জীবনে আরও উন্নতি করো। এক উজ্জ্বল সত্তা হিসেবে বিরাজ করে তুমি এই বছরটাকে বিশ্বে স্মরণীয় করে রাখো।
(সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে অনুলিখিত)