স্বস্তিকা দত্ত। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
নির্বাচন চলছে। দেখতে দেখতে পাঁচ দফা ভোট শেষও হয়ে গেল। আমি অভিনেত্রী। রাজনীতির মানুষ নই। বাড়িতে টিভিতে বড়রা খবর দেখেন। পাশাপাশি সমাজমাধ্যম রয়েছে। রাজনীতির খবরাখবর আমিও রাখি। এখন তো না চাইলেও ভোটের খবর সাধারণ মানুষের চোখের সামনে এসে যায়।
আমি মা-বাবার সঙ্গে থাকি। প্রত্যেক বার নিয়ম করে আমরা তিন জনেই একসঙ্গে ভোট দিতে যাই। এ বারেও তার অন্যথা হবে না। আমার মনে হয়, ভোট দেওয়াটা দেশের নাগরিক হিসাবে আমাদের প্রত্যেকেরই মৌলিক অধিকার। তাই যা-ই হোক না কেন, ভোট দেওয়া উচিত। কারণ আমরা ভারত নামক একটি গণতন্ত্রিক দেশে বসবাস করি। আর আমাদের চাওয়া এবং পাওয়ার বিষয়টি মনে রাখতে হবে আমাদেরই হাতে। আমরা চাইলেই পরিবর্তন আনতে পারি।
আমার ভোট দেওয়ার লোকসভা কেন্দ্রটি হল ‘কলকাতা দক্ষিণ’। আমার এলাকায় কারা ভোটে দাঁড়িয়েছেন তা নিয়ে আমার ধারণা রয়েছে। তবে জয়ী প্রার্থীর কাছে যে আমার খুব বেশি কোনও দাবি থাকবে, এ রকম নয়। আমি জানি, মানুষের আকাঙ্ক্ষার কোনও শেষ নেই। তবে আমি অল্পেতেই খুশি। আমার মাথার উপরে ছাদ আছে। আমার বাড়িতে জল আসে। বাড়ির সামনের রাস্তা দিয়ে সহজেই যাতায়াত করতে পারি। এক জন সাধারণ নাগরিক হিসাবে যত ক্ষণ এই ন্যূনতম পরিষেবাগুলি পাচ্ছি, আমি খুশি।
ভোট চলছে। সেই সঙ্গে দেখছি, চারপাশে ভোটকে কেন্দ্র করে হিংসার খবর। কোনটা সত্যি বা কোনটা নয়, আমি সেই বিতর্কে যেতে চাইছি না। আমি বরং বিষয়টিকে একটু অন্য ভাবে দেখি। মারপিট বা ঝগড়া, এগুলি তো আগেও হয়েছে।
ভোটকে কেন্দ্র করে এ রকম ঘটনা তো পশ্চিমবঙ্গের পাশাপাশি দেশের অন্যান্য রাজ্যেও ঘটছে। কখনও নিজের মতো করে ‘রং’ চড়িয়েও তা বলা হয়। আসলে ছোটখাটো ঝামেলাকে অনেক সময়েই আমরা বড় করে দেখি।
আচ্ছা, খেলার মাঠেও তো দু’পক্ষের ঝামেলা হয়। যে কোনও প্রতিযোগিতামূলক জগতে দু’পক্ষের মতবিরোধ তো হবেই। পুরো বিষয়টার সঙ্গেই ছেলেবেলার দৌড়ের খুব মিল খুঁজে পাই। হয়তো যাঁকে পছন্দ নয়, দৌড়নোর সময়ে তাকে একটু ‘ল্যাং’ মেরে ফেলে দিলাম। আবার যাকে পছন্দ, তার জন্য নিজের গতি একটু কমিয়ে নিলাম। এগুলি চলতেই থাকে। এ সব নিয়ে তত ক্ষণ আলাদা করে ভাবনার কিছু নেই, যত ক্ষণ না পর্যন্ত সেটা জনগণের কোনও ক্ষতি করছে।
অনেকেই আমাকে প্রশ্ন করেন যে, আমি রাজনীতির ময়দানে পা রাখতে চাই কি না বা হয়তো কেউ কেউ ভাবেন, আমি যোগ দিতে চাই। আজকে আনন্দবাজার অনলাইনের এই লেখার মাধ্যমে বিষয়টি পরিষ্কার করে দিতেই চাই। আমি তো ‘পাবলিক ফিগার’, তাই অনুরোধে কখনও কখনও রাজনৈতিক দলের প্রচারে যেতে হয়। সেখানে একই মঞ্চে ইন্ডাস্ট্রির আমার সতীর্থেরাও থাকেন। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, আমি রাজনীতিতে যোগ দিতে ইচ্ছুক। তবে কাজ থাকলে আমার কাছে সব সময়েই প্রচারের তুলনায় কাজ অগ্রাধিকার পায়। কারণ ভুলে গেলে চলবে না, অভিনয়ের জন্যই কিন্তু আজকে কিছু মানুষ আমার কথা শোনেন বা আমাকে প্রচারে নিয়ে যাওয়া হয়। তাই আমার কাছে আমার পেশাগত দায়বদ্ধতা সব কিছুর আগে।
আমি মনে করি, অভিনেত্রী হিসাবে ইন্ডাস্ট্রিতে এখনও আমি নতুন। আমার অনেকটা পথ চলা বাকি আছে। এখনও আরও নতুন নতুন চরিত্র আবিষ্কার করতে চাই। সব থেকে বড় কথা, এখনও ঠিক করে মেকআপ রুমের পলিটিক্সটাই বুঝে উঠতে পারলাম না! সেখানে বাস্তবে মঞ্চে দাঁড়িয়ে রাজনীতি করব, ভাবতেই পারি না! কারণ সেটা অনেক বড় দায়িত্ব। চিরকালই ‘লোভ’ বিষয়টি আমার মধ্যে কম। তাই ওই লোভে পড়ে কোথাও পা ফেললাম, তার পর কিছুই হল না, আমি ওই ভাবে কোনও কাজ করতে চাই না। দু’নৌকায় পা রেখেও চলতে আমি পছন্দ করি না। তাই এই মুহূর্তে পেশা পরিবর্তনের ভাবনাটাই আমার কাছে অকল্পনীয়।