প্রিয়াঙ্কা বসু।
সাতসকালে পিকাডিলি সার্কাসের মাথায় জাদুর খেলা!
নিজে দেখেছেন। দেখিয়েছেন বাকি সকলকেও। লেন্সবন্দি করে। ভাগ করে নিয়েছেন সেই উত্তেজনা। হওয়ারই কথা! বাঙালি মেয়ে কাজ করছেন হলিউডি সিরিজে। সেই ছবি মুক্তির স্বাদই যে আলাদা!
প্রিয়াঙ্কা বসু। তাঁকে আমজনতা চেনে অন্য রূপে। ছোট্ট মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে দ্বিতীয় বিয়ের পিঁড়িতে বসা এক সাহসী মেয়ে বলে। সৌজন্যে এক গয়না সংস্থার বিজ্ঞাপন। তার পর? সন্তান নিয়ে দ্বিতীয় বিয়ে যে হতে পারে, তা যেন সকলের চোখে আঙুল দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন তিনি।
সে গল্প আর শুধু বিজ্ঞাপন হয়ে থেকে যায়নি। এমনই তাঁর অভিনয়ের ছটা!
ছবির দর্শকের কাছে অবশ্য প্রিয়াঙ্কা ‘গঙ্গোর’। মহাশ্বেতা দেবীর কাহিনি অবলম্বনে ইতালীয় পরিচালক ইতালো স্পিনেলির ছবির কেন্দ্রে থাকা এক আদিবাসী নারী। অস্কারের দৌড়ে থাকা ২০১৬-র ছবি ‘লায়ন’-এও আবার দেখা যায় তাঁকে।
সেই মেয়েই এ বার আমাজন প্রাইম ভিডিয়োর নতুন ইংরেজি ওয়েব সিরিজে। আমেরিকান উপন্যাস অবলম্বনে হলিউডি নির্মাণ। পরিচালক জার্মান। অভিনেতা-কলাকুশলীর সিংহভাগ বিদেশি। আন্তর্জাতিক পরিসরে সেই দলেই জায়গা করে নিয়েছেন প্রিয়াঙ্কা। সঙ্গে আর এক বঙ্গনারী ললিতা চক্রবর্তী।
গত ১৯ নভেম্বর আমাজনে মুক্তি পেয়েছে ‘দ্য হুইল অব টাইম’। একই নামে রবার্ট জর্ডনের লেখা কল্পকাহিনি নির্ভর এই সিরিজ শুরু থেকেই চর্চার কেন্দ্রবিন্দু। কারণ, পরিচালক ইউটা ব্রিসেউইৎজ-সহ কলাকুশলীরা প্রত্যেকেই মহিলা। আয়েস সেদাই অর্থাৎ জাদুবিদ্যায় পারদর্শী মহিলাদের এক সম্প্রদায়ের পাঁচ কন্যের দুনিয়া ঘুরে নানা কাণ্ডকারখানার গল্প। তাতে মূল চরিত্রদের অন্যতম ‘আলান্না মোসভানি’র ভূমিকায় প্রিয়াঙ্কা। আর একটি পার্শ্বচরিত্র ‘মারিন আল'ভেরে’-এর ভূমিকায় রয়েছেন ললিতা। আপাতত ওটিটিতে তিন পর্ব দেখা গিয়েছে। ইংরেজি-র পাশাপাশি হিন্দি, তামিল, তেলুগু সংস্করণের এই সিরিজের বাকি পর্বগুলি আসবে ধারাবাহিক ভাবে।
মধ্যবয়সি ললিতা বরাবরই লন্ডনের বাসিন্দা হলেও বছর চল্লিশের প্রিয়াঙ্কার জন্ম-কর্ম এ দেশেই। দিল্লিতে বেড়ে ওঠা, কর্মসূত্রে ঘর বেঁধেছেন মুম্বইয়ে মাড আইল্যান্ডে। বর মেয়েকে নিয়ে সুখের সংসার। ‘লভ, সেক্স অউর ধোকা’, 'জনি গদ্দার’, ’সরি ভাই’-এর মতো ছবিতে ছোট্ট ছোট্ট চরিত্রে তাঁর যাত্রা শুরু।
২০১০-এ ‘গঙ্গোর’ তাঁর ঝুলিতে এনে দিয়েছিল একাধিক আন্তর্জাতিক সম্মান। তার পরে আর ফিরে তাকাতে হয়নি। পরপর হিন্দি ও ইংরেজি ও বাংলা ছবি, ওয়েব সিরিজ, স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবিতে কাজ করেছেন প্রিয়াঙ্কা। তাঁর অভিনয় প্রশংসা কুড়িয়েছে অস্কারের জন্য মনোনয়ন পাওয়া ছবি ‘লায়ন’-এও। ‘দ্য হুইল অব টাইম’-এর আগে প্রিয়াঙ্কাকে শেষ বার দেখা গিয়েছে সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত বলিউডি ছবি ‘সড়ক ২’-তে।
শুধু ছবি নয়, প্রিয়াঙ্কাকে চেনে নাটকের দুনিয়াও। দিল্লি গণধর্ষণ-কাণ্ড নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকান নাট্যকার ইয়ায়েল ফার্বারের ‘নির্ভয়া’য় অভিনয় করেছেন। তাঁর কাজ দেখেছে সারা পৃথিবীর বিভিন্ন শহর। চর্চাও হয়েছে দেদার।
তবে হ্যাঁ, বাঙালি হলেও টলিউডে সে ভাবে পা রাখেননি ‘গঙ্গোর’। আন্তর্জাতিক এই ছবি এবং ‘লায়ন’-এর বাংলা সংস্করণ বাদে কাজ করেছেন শুধু বাংলা ছবি ‘শূন্য অঙ্ক’ এবং ‘আপরুট’ নামে একটি স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবির বঙ্গীয় তর্জমায়।
কাজ নিয়ে যেমন ভাবনা চিন্তা, শরীর নিয়েও সচেতন তিনি। মেপে খাবার খান। সেই মানুষই ব্যক্তিজীবনে সম্ভবত ততটাই হাল্কা মেজাজের। কখনও আয়নার সামনে, কখনও লিফটে, কখনও বেড়াতে গিয়ে মজাদার সব নিজস্বী আর ছবি তোলেন। তাতে মজায় মোড়া ক্যাপশন। কখনও ভাইয়ের ছবি দিয়ে ঠাট্টা, কখনও বা ছোট্ট মেয়ের সঙ্গে ‘বিন্দাস’, কখনও বা বর-মেয়ের মারামারির ছবিতে বাবা-দিবসের শুভেচ্ছা। ইনস্টাগ্রামের পাতা থেকে যে ধরা দেয়, সে আদ্যোপান্ত প্রাণবন্ত এক মেয়ে।
খ্যাতির স্বাদ মিলে গিয়েছে ঢের আগেই। কিন্তু এ বার সো-জা হলিউডে কাজ! কতটা উচ্ছ্বসিত প্রিয়াঙ্কা নিজে?
নেটমাধ্যমে খানিক ঘাঁটাঘাঁটিতেই দিব্যি আঁচ করা যাচ্ছে তারকার পর্দা সরিয়ে পাশের বাড়ির মেয়ে-সুলভ উত্তেজনা। নতুন এই সিরিজে কাজ শুরুর ঘোষণা, অভিনয় চলাকালীন হরেক মুহূর্ত, সাজঘরে সহ-অভিনেত্রীদের সঙ্গে ছবি, সিরিজের প্রচার ঝলক- সবই উঠে এসেছে তাঁর ইনস্টাগ্রাম পাতায়। সিরিজের মুক্তি উপলক্ষে লন্ডনের পিকাডিলি সার্কাসে অভিনব প্রচারও লেন্সবন্দি হয়ে পৌঁছে গিয়েছে অনুরাগীদের কাছে। আর সঙ্গের লেখায়? উপচে পড়া খুশি!
জাদুর গল্পে প্রিয়াঙ্কার জাদু কি মোহিত করে দেবে এ বারেও? উত্তর দেবেন দর্শকরাই।