Aparajita Adhya

রাতের শিফ্‌টে মেয়েদের উপর নিষেধাজ্ঞার অর্থ, আমার শহরেই সমস্যা রয়েছে: অপরাজিতা আঢ্য

একটা সময়ে মানুষের মধ্যে এই ধরনের ধারণা ছিল। কিন্তু যুগের সঙ্গে মানুষ বুঝতে পেরেছে, রাতে মেয়েদের কাজ করতে হতে পারে। জানান অপরাজিতা।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০২৪ ১৭:৪০
Aparajita Adhya shares her opinion on the restriction on women’s night shift

অপরাজিতা আঢ্য। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।

আরজি কর-কাণ্ডের জেরে রাতে মহিলাদের নিরাপত্তায় কয়েকটি নতুন ব্যবস্থার কথা ঘোষণা করেছে রাজ্য সরকার। তার মধ্যে একটি জায়গায় বলা হয়েছে, মহিলাদের রাতের শিফ্‌ট যথাসম্ভব বাদ রাখতে হবে। এই বিষয় নিয়ে তরজা চলছে সমাজমাধ্যমে। প্রশ্ন উঠছে, তা হলে কি রাতে মহিলাদের নিরাপত্তা দেওয়া যাচ্ছে না? কেউ প্রশ্ন তুলছেন, এমন হলে মহিলাদের কর্মসংস্থানে তার প্রভাব পড়বে। এই বিষয়ে অপরাজিতা আঢ্যের সঙ্গে যোগাযোগ করে আনন্দবাজার অনলাইন। অভিনেত্রীর দাবি, মহিলাদের উপর এমন নিষেধাজ্ঞা জারি হচ্ছে, অর্থাৎ শহরে বা রাজ্যেই সমস্যা রয়েছে।

Advertisement

অপরাজিতা বলেন, “আমাদের তো রাতে বহু শুটিং হয়। চিকিৎসা ক্ষেত্র বা কর্পোরেটেও রাতে মহিলাদের কাজ করতে হয়। আমার ননদ একটা সময় চাকরি থেকে রাত দুটোয় বাড়ি ফিরতেন। বহুজাতিক সংস্থায় কাজ করতেন। তাই রাতের শিফ্‌ট থাকত। কিন্তু ছোট থেকে আমাদের শেখানো হয়, রাত ন’টার পরে বাড়ির বাইরে থাকবে না। রাত নটার পরে ‘ভদ্র’ বাড়ির মেয়েরা নাকি বাড়ির বাইরে থাকে না। আমার মধ্যেও এই শিক্ষার বীজ তৈরি হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু মনে মনে আমার রাতে বেরোতে ইচ্ছে করত। বিয়ের পর কলকাতার আসার পরে আমার ধারণা পরিবর্তন হল।”

একটা সময়ে মানুষের মধ্যে এই ধরনের ধারণা ছিল। কিন্তু যুগের সঙ্গে মানুষ বুঝতে পেরেছে, রাতে মেয়েদের কাজ করতে হতে পারে। জানান অপরাজিতা। অভিনেত্রীর কথায়, “আমাদের স্কুলে শেখানো হত, ব্যাগ পিঠে নয়, বুকের কাছে ধরে নিয়ে যাবে। যাতে কেউ গায় হাত না দিতে পারে। কিন্তু এখন তো কাজের ধারা বদলে গিয়েছে। বাবা-মায়েরা মেনে নিয়েছেন। তাঁরা বুঝতে পারছেন, রাতেও মেয়েরা কাজ করবে। আমরা চাই, আমাদের পরের প্রজন্ম আরও সুস্থ ও সাবলীল ভাবে বাঁচুক। সেখানে মহিলাদের উপর এমন নিষেধাজ্ঞা আসছে, অর্থাৎ, আমার শহরেই কোনও সমস্যা রয়েছে।”

গ্রামে বিভিন্ন অনুষ্ঠান করতে যেতে হয় শিল্পীদের। অপরাজিতা জানান, রাত ১২টার পরে তিনিও নিরাপদ বোধ করেন না। তিনি বলেন, “গ্রামে অনুষ্ঠান করতে যেতে হয়। আমি রাত ১২টার পরের অনুষ্ঠান করি না। সেটা বলাই থাকে। এমন অনেক দৃশ্য দেখতে হয়, যাতে আমি নিরাপদ বোধ করি না। তাই আমি নিজে থেকে যাই না।”

ধর্ষণের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়ে অপরাজিতা বলেন, “লোকে বলে, ছোট পোশাক পরার জন্য নাকি ধর্ষণ হয়। আমি তো শুনিনি ছোট পোশাক পরে কেউ ধর্ষিত হয়েছেন। বরং শাড়ি বা সালোয়ার কামিজ় পরেই ধর্ষণের খবর শুনেছি। এমনকি দেড় বছরের শিশু বা ৭৬ বছরের বৃদ্ধাকেও ধর্ষণ করা হয়েছে। মানুষের বিকৃত মানসিকতাকে গুরুত্ব না দিয়ে মেয়েদের পোশাক নিয়ে কথা বলা হয়। এই ধারণা মেয়েদেরই আন্দোলন করে ভেঙে ফেলতে হবে। অন্য কেউ করে দেবে না।”

অপাজিতা যোগ করেন, “সম্মান, ভালবাসা নিজেকেই অর্জন করতে হয়। তাই রাতে মেয়েরা কাজ করবে না, এই ধারণাও ভাঙতে হবে। চৈতিদি (চৈতি ঘোষাল) ‘এক আকাশের নীচে’ ধারাবাহিক চলার সময় বলেছিলেন, ‘যে দিন হাওড়া স্টেশন থেকে রাতে হেঁটে বাড়ি ফিরতে পারব, সে দিনই নিজেকে স্বাধীন বলে মনে করব।’ মেয়েরা যাদের জন্য নিরাপত্তা পাচ্ছে না, তাদের ঘরে থাকতে বলা হোক। কিন্তু নিজের অধিকারের জন্য মেয়েদের লড়তেই হবে।”

আরও পড়ুন
Advertisement