‘প্রধান’-এর সেটে সৌমিতৃষা, দেবকে দৃশ্য বোঝাচ্ছেন পরিচালক অভিজিৎ সেন। —নিজস্ব চিত্র।
গত বছর বড়দিনে মুক্তি পেয়েছিল দেব-মিঠুন ‘প্রজাপতি’। সেই ছবি বহু দিন পরে বাংলা ইন্ডাস্ট্রির বক্স অফিসে নানা নজির গড়েছিল। এ বারও দেব ফিরছেন বড়দিনে ‘প্রধান’ নিয়ে। এ বার অভিজিৎ সেন পরিচালিত এই ছবিতে ফিরছে ‘টনিক’-এর হিট জুটি দেব এবং পরান বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রযোজনায় ‘বেঙ্গল টকিজ়’। ‘প্রধান’ নিয়ে তাই ইন্ডাস্ট্রির প্রত্যাশা তুঙ্গে। গত বছর বড়দিনে ‘প্রজাপতি’র পাশাপাশি মুক্তি পেয়েছিল নন্দিতা রায়-শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের ‘হামি টু’, সন্দীপ রায়ের ‘হত্যাপুরী’ এবং রোহিত শেট্টির ‘সার্কাস’। এমনকি, এই ছবির মুক্তির কয়েক সপ্তাহের মাথায় বক্স অফিসে এসেছিল ‘পাঠান’ ঝড়। কিন্তু কোনও কিছুই বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি ‘প্রজাপতি’র সামনে। বক্স অফিসে তরতরিয়ে এগিয়ে গিয়েছে এই ছবির ব্যবসা। এ বছর বড়দিনে মুক্তি পাওয়ার কথা একগুচ্ছ ছবির। শাহরুখ খানের ‘ডাংকি’, রণবীর কপূরের ‘অ্যানিম্যাল’, প্রভাসের ‘সালার’, মিঠুনের ‘কাবুলিওয়ালা’-র মতো বেশ কিছু ছবির নাম ঘোরাফেরা করছে। এত ‘হেভিওয়েট’ ছবির ভিড়ে কি এ বারও ‘প্রধান’ হয়ে উঠবে দেবের ছবি? হাওয়া বুঝতে ছবির সেটে পৌঁছল আনন্দবাজার অনলাইন।
দক্ষিণ কলকাতার এক স্টুডিয়োয় চলছে ‘প্রধান’-এর শেষ কয়েক দিনের শুটিং। এমনিতে ছবির বেশির ভাগ শুটিং হয়ে গিয়েছে উত্তরবঙ্গেই। তবে সেখানকার কিছু ফুটেজ পছন্দ হয়নি নির্মাতাদের। তাই শহরে ফিরে সেট ফেলে নতুন করে শুটিং করা হচ্ছে। তাতে প্রযোজকের কিছু বাড়তি খরচ হচ্ছে বটে। কিন্তু কাজের মান নিয়ে আপস করতে রাজি নন প্রযোজক অতনু রায়চৌধুরী। শুটিং চলাকালীন তিনি পরিচালকের পাশের চেয়ারে বসে মন দিয়ে মনিটর দেখছেন সারা ক্ষণ। এমন দৃশ্য খুব একটা চোখে পড়ে না টলিউডে। যেখানে বেশির ভাগ বাংলা ছবির শুটিং আজকাল ১৫-১৮ দিনে সেরে ফেলেন সকলে, সেখানে এই ছবির শুটিং চলছে প্রায় এক মাসের উপর। জানা গেল, পরিচালক তার আগের দিনই গভীর রাতে প্যাক আপ করে বাড়ি ফিরে ঘণ্টাখানেক ঘুমিয়ে ফের কল টাইমে হাজির হয়েছেন সকাল সকাল। যদিও তাঁর এনার্জি দেখে তা বোঝার উপায় নেই। প্রতিটা শট নেওয়ার আগে দৌড়ে গিয়ে অভিনেতাদের বুঝিয়ে দিচ্ছেন। ফিরে এসে মনিটরে দেখছেন। মনোমতো না হওয়া পর্যন্ত তিনি শট নিচ্ছেন। অথচ গোটা সময়ই তিনি শান্ত ভাবে কাজ সারছেন। কলাকুশলীদের কোনও ভুলভ্রান্তি হয়ে গেলেও শান্ত ভাবেই নির্দেশ দিচ্ছেন তা শুধরে নেওয়ার জন্য। শটের মাঝে মাঝে আবার প্রযোজকের সঙ্গে দরাদরি চলছে আরও এক দিন বাড়তি শুটের জন্য। অতনু হেসে বললেন, ‘‘এরা পারলে ছবিমুক্তির আগের দিন পর্যন্ত শুট চালিয়ে যাবে।’’ উত্তরে শুধুই পরিচালকের স্বভাবজাত স্মিত হাসি।
ছবির গল্প নিয়ে এখনই কিছু খোলসা করতে নারাজ পরিচালক। তবে কাস্টিংয়ের দিক দিয়ে এই ছবি যে বেশ বড় মাপের, তা স্পষ্ট। দেব, সৌমিতৃষা, পরান ছাড়াও ছবিতে রয়েছেন সোহম চক্রবর্তী, মমতা শঙ্কর, সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়, কনীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, অম্বরীশ ভট্টাচার্য, কাঞ্চন মল্লিক, সোহিনী সেনগুপ্ত, দেবাশিস মণ্ডল, বিশ্বনাথ বসু প্রমুখ। সকলের মধ্যে সৌমিতৃষাই সবচেয়ে নতুন। ‘মিঠাই’কে সকলে চিনলে ও ভালবাসলেও বড় পর্দায় এই তাঁর প্রথম কাজ। এবং প্রথমেই তিনি দেবের বিপরীতে! এমন সৌভাগ্য ক’জনেরই বা হয়? তবে সেটে সৌমিতৃষা একদম বাধ্য ছাত্রী। পরিচালক যখন যা বলছেন, মন দিয়ে শুনছেন তিনি। যত বারই টেক নেওয়া হোক না কেন, তাঁর মুখে কোও রকম বিরক্তি নেই। শটের মাঝেও তিনি মনিটরে বসছেন পরিচালকের সঙ্গে। কিংবা চিত্রনাট্য আউড়ে নিচ্ছেন দেবের সঙ্গে।
সেটে দেব ঢুকলেন হাসিমুখে। শটের আগে-পরেও তাঁর মুখে হাসি। মাঝেমাঝে নিজেই হাততালি দিয়ে কলাকুশলীদের উৎসাহ দিচ্ছেন। অবশ্য দেবকে খোশমেজাজে পাওয়াই স্বাভাবিক। তাঁর পুজোর ছবি ‘বাঘাযতীন’ বক্স অফিসের দৌড়ে দারুণ প্রতিযোগী। জাতীয় স্তরে স্বল্প পরিসরে হলেও ভাল ফল করছে। তাঁকে শুভেচ্ছা জানাতেই হাসিমুখে বললেন, ‘‘থ্যাঙ্ক ইউ সো মাচ। অনেকে আমায় ট্রেলার দেখে বলেছিলেন, কেন আমি ছবিতে বাঘা যতীনকে এত লার্জার দ্যান লাইফ হিসাবে দেখাচ্ছি। কিন্তু যাঁরা ছবিটা দেখেছেন, তাঁরা নিশ্চয়ই উত্তরটা পেয়ে যাবেন।’’ আপতত দেব ব্যস্ত ‘প্রধান’-এর শেষ কয়েক দিনের শুটিং নিয়েই। তার পর তিনি সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে আগামী ছবির কাজ শুরু করবেন।