Ushasie Chakraborty

ফুটপাথে বসে জীবনের প্রথম চুমু! আজও সে ভাবেই প্রেম করতে চান জুন আন্টি

উষসীর বাবা প্রয়াত রাজনীতিক শ্যামল চক্রবর্তীর প্রণয়ন করা কড়া নিয়ম ছিল বাড়িতে। রাত ৮টার আগে ঘরে ঢুকতে হবে মেয়েকে। কিন্তু প্রেম করার পর থেকে সেই নিয়মের বেড়াজাল ভেঙে ফেলার প্রবণতা তৈরি হয়েছিল ঊষসীর।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১৬:২৭
অভিনেত্রী ঊষসী চক্রবর্তী

অভিনেত্রী ঊষসী চক্রবর্তী

চিলেকোঠার ঘরটি ছিল তাঁদের প্রেমের আস্তানা। প্রেমিকের দেওয়ালে টাঙানো ছিল মাও সে তুং-এর ছবি। তার সামনে রচিত হত রাজনীতি আর প্রেমের ম্যানিফেস্টো। যেন কবীর সুমনের প্রেমের পংক্তিগুলি জীবন্ত হয়ে উঠত ওই ঘরে— ‘বিপ্লব ও চুমুর দিব্যি শুধু তোমাকেই চাই’।

আর এক দিন পরেই প্রেম দিবস। যদিও অনেকেই মনে করেন, প্রতিটি দিনই প্রেমের দিন হতে পারে। একটা দিন কেন? তবে সব দিন তো আর প্রেম উদযাপন করা যায় না! সে ভাবেই ১৩ ফেব্রুয়ারি প্রেমের গুরুত্বপূর্ণ একটি ধাপকে উদযাপন করা হয়। চুম্বন দিবস। আনন্দবাজার ডিজিটাল অভিনেত্রী ঊষসী চক্রবর্তীর কাছ থেকে তাঁর চুম্বনের অভিজ্ঞতার কথা জানতে চাইল। কথার পিঠে কথা। বলে ফেললেন নিজের প্রথম প্রেমের রোমাঞ্চকর গল্প। স্মৃতিচারণের পথে হাঁটলেন জুন আন্টি।

Advertisement

শুরু থেকেই শুরু করা যাক। মেয়েটি তখন কলেজে ভর্তি হয়েছে সবে মাত্র। ছেলেটি জয়েন্ট পরীক্ষা দিয়েছে। দু’জনের শরীরেই ভরপুর উদ্দীপনা। চোখে বিপ্লবের লাল স্বপ্ন। আর মনে এক ঘর প্রেম। প্রেসিডেন্সি কলেজের একটি অনুষ্ঠানে ছবি এঁকে হাতে কার্ড বানিয়ে মেয়েটিকে প্রেম নিবেদন করে সেই ছেলেটি। ছবিতে ছিল, একটি ছেলে একটি মেয়েকে প্রেম নিবেদন করছে। মেয়েটিও তাতে খুশি। কিন্তু ছবির বাইরের ছেলেটির মনে ছিল ভয়। যদি প্রত্যাখ্যাত হতে হয়? ঠিক তাই হল। পাত্তাই দিল না মেয়েটা। দিন যায়। ছেলেটির আঁকা ছবি জীবন্ত হয়ে উঠতে শুরু করে। মেয়েটিরও ভাল লাগে ছেলেটিকে। প্রস্তাবে রাজি হয়ে যায়। কিন্তু তার পরেও পথ সহজ ছিল না। না জানা একটি তথ্য সামনে চলে আসে। তৈরি হয় তিনটি কোণ। মেয়েটির সব থেকে ভাল বন্ধুও ছেলেটিকে ভালবাসে। কিন্তু কী আর করা যাবে! ছেলেটি তো তাকে ভালবাসতে পারেনি। ফলে বন্ধুত্বে চিড় ধরে। এ দিকে ছেলেটি ও মেয়েটির পথ চলা শুরু। দীর্ঘ ৫ বছরের সম্পর্ক। প্রথম সব কিছু। উন্মাদনাটাই অন্য। তার উপরে মা বাবা-কে লুকিয়ে প্রেম করার রোমাঞ্চটা আর একবিংশ শতাব্দীতে দেখা যায় না। আজ এত বছর পর সেই মেয়েটির যখন ওই কথাগুলো মনে পড়ছে, তার হাসি যেন থামছেই না।

তার পর থেকে ঊষসী একে একে তাঁর সেই প্রেম জীবনের টুকরো টুকরো ছবি আমাদের চোখের সামনে তুলে আনলেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক দেবাশিস ও অভিনেত্রী-গায়িকা উষসীর প্রেমের বিচিত্র মন্তাজ।

বৈপ্লবিক প্রেম করেছিলেন ঊষসী। কেবল চিলেকোঠার ঘরে না, রাস্তাঘাটে কত বার যে বিপ্লব তাঁর সহায় হয়েছে, তার ইয়ত্তা নেই। উষসী সেন্ট জেভিয়ার্সে পড়েন। দেবাশিস তখন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে। রোজ হেঁটে হেঁটে বাড়ি ফেরেন তাঁরা। খালপাড়ের অন্ধকার রাস্তায় প্রেম প্রেম আমেজে তাঁরা সময়ের কথা ভুলে যেতেন। কিন্তু তা বললে কেমন করে হবে? উষসীর বাবা প্রয়াত রাজনীতিক শ্যামল চক্রবর্তীর প্রণয়ন করা কড়া নিয়ম ছিল সে বাড়িতে। রাত ৮টার আগে ঘরে ঢুকতে হবে মেয়েকে। কিন্তু প্রেম করার পর থেকে সেই নিয়মের বেড়াজাল ভেঙে ফেলার প্রবণতা বেড়ে গিয়েছিল উষসীর। রোজ সাড়ে ৮টা থেকে ৯টা বাজত বা়ড়ি ঢুকতে। রোজ রোজ মিথ্যে অজুহাত তৈরি করার হ্যাপা নিতে পারতেন না উষসী। তাই প্রায় প্রতি দিনই তিনি বলতেন, ‘‘বাবা, কী আর করব বলো! পথ অবরোধ হয়েছিল।’’ এক দিন আর থাকতে না পেরে বাবা বলেছিলেন, ‘‘সব অবরোধ কি তোমার পথেই হয় মা?’’

দেবাশিস থাকতেন লেকটাউনে। উষসী রুবিতে। তাঁর কথায়, ‘‘এক বন্ধের দিন প্রচণ্ড প্রেম পেয়েছে। আমি সে কথা জানাতেই দেবাশিস সটান সাইকেল নিয়ে রুবি চলে এসেছে। কিন্তু বাড়িতে তো আর ঢুকতে সাহস পাচ্ছে না। আমাদের কাছে তখন মোবাইল ফোন কই? ভরসা, ওই ল্যান্ডলাইন। আমিও বাড়ি থেকে বেরতে পারছি না, কারণ বাবা সে দিন বাড়িতে রয়েছেন।’’ কিন্তু তর সইতে পারেননি দেবাশিস। কোনও একটা ফোনবুথ থেকে তাঁদের ল্যান্ডলাইনে ফোন করেছেন। কপাল খারাপ! ফোনটা তুলেছেন শ্যামল চক্রবর্তী। এ বারে কথোপকথনটা দেখা যাক,

প্রেমিক: উষসী আছে?

বাবা: কে তুমি?

প্রেমিক: আমি দেবাশিস।

বাবা: সে কে? আমি তো চিনি না।

প্রেমিক: সে ঠিক চিনে নেবেন পরে।

উষসী হাসতে হাসতে বললেন, ‘‘আমার বাবা তখন কী বলবেন, কিচ্ছু বুঝতে পারছিলেন না! এমন উত্তর শুনে চোখ তখন কপালে।’’

বিকেলের দিকে বাড়ি ফাঁকা থাকত অভিনেত্রীর। ওই সময়টা ছিল যুগলের প্রেম করার সময়। আবাসনের ৪ তলার ছাদে একটি জলের ট্যাঙ্ক ছিল। তার পিছনেই তাঁদের অস্থায়ী জগৎ তৈরি হয়ে যেত। কিন্তু এখানেও প্রেমে বাধা। বাধার নাম, নজরুলগীতি! একটা ভৌতিক ঘটনা ঘটত মাঝে মধ্যে। দেবাশিস ঠিক যে দিন যে দিন উষসীর বাড়িতে আসতেন, অদ্ভুত ভাবে সে দিনগুলোতেই কোথা থেকে জানি উষসীর গানের মাস্টারমশাই উদয় হয়ে যেতেন। ওঁর আসার সময় ছিল সন্ধ্যে ৬টা। কোনও না কোনও দৈবদুর্বিপাকে দেবাশিস এলেই তিনি বিনা নোটিসে হাজির হয়ে যেতেন। কীসের যে সেই যোগসূত্র, তা আজও ঊষসীর কাছে ধোঁয়াশার। মানুষটি বড় ভাল ছিলেন। নিরীহ প্রকৃতির। তাই ‘আজ গান শিখব না’, এমনটা বলার জায়গাও ছিল না ঊষসীর। দেবাশিস বসে থাকতেন বাইরের ঘরে। ঊষসী গান শিখেই যেতেন, শিখেই যেতেন। মাস্টারমশাইয়ের যাওয়ার সময় হয়ে আসত, আর তখন বাবার ফেরার সময় এগিয়ে আসত। বেরিয়ে যেতে হত দেবাশিসকে। সঙ্গীত তাঁদের প্রেমের দফারফা করে দিয়েছিল। সেই থেকে দেবাশিসের কাছে নজরুলগীতি সব থেকে বড় শত্রু ছিল।

প্রথম চুম্বন সেই দেবাশিসের সঙ্গেই। রুবির ভেতরে আনন্দপুরের এক ফুটপাথে বসে প্রথম বার চুমু খেয়েছিলেন তাঁরা। অভিনেত্রী জানালেন, ‘‘আজও যখন ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের ফুটপাথে বসে প্রেম করতে দেখি, আমার সে দিনটার কথা মনে পড়ে। তখন তো বাড়িতে প্রেম করার অবকাশ ছিল না। ওই মাও সে তুং-এর ছবির সামনেই আমাদের প্রেম হত। আর এক বার ফুটপাথে।’’ শুধু তাই নয়, ঊষসী তারকা হয়ে যাওয়ার পর তখনকার এক প্রেমিককে বলেছিলেন ফুটপাথে বসে প্রেম করতে চান। প্রেমিক তো সে কথা শুনেই ভয়ে কাঁটা! উত্তরে বলেছিলেন, ‘‘সেই তো! তোমায় নিয়ে ফুটপাথে বসব! তার পরে লোক জন আমাকে আস্ত রাখবে না!’’ এই হল খ্যাতির বিড়ম্বনা!

কিন্তু সেই দীর্ঘ ৫ বছরটা তাঁদের দু’জনের কাছেই বড্ড গুরুত্বপূর্ণ বলে জানালেন অভিনেত্রী। আনন্দবাজার ডিজিটালের সঙ্গে কথা বলার সময়ে ঊষসী এমনকি দেবাশিসের সঙ্গে আলোচনাও করে নিচ্ছিলেন। যে দেবাশিস বিশ্বখ্যাত শিল্পী সালভাদোর দালির মতো ছবি আঁকবেন বলতেন, তিনি এখন ঘোরতর সংসারী এক পুরুষ। আর ঊষসী তাঁর অভিনয় জীবনে ব্যস্ত। কিন্তু তাঁদের প্রেমের ম্যানিফেস্টোটা আজও তাঁদের সঙ্গেই রয়েছে।

আরও পড়ুন
Advertisement