Rittika Sen Interview

‘আমায় কুপ্রস্তাব দিলে, উত্তরে আমি কী বলব সকলে জানেন’, টলিপাড়া নিয়ে অকপট ঋত্বিকা

এক দিকে ‘বর‍বাদ’ এর মতো বাণিজ্যিক ছবি। অন্য দিকে অপর্ণা সেনের পরিচালনায় ‘আরশিনগর‍’। কিন্তু সেই তুলনায় তাঁর হাতে এখন কাজের পরিমাণ কম।

Advertisement
স্বরলিপি দাশগুপ্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০২৪ ১১:২৭
Actress Rittika Sen interview

ঋত্বিকা সেন। ছবি: সংগৃহীত।

শিশুশিল্পী হিসেবে অভিনয়ের সফর শুরু। আঠারো পেরোনোর আগেই বাণিজ্যিক ছবির সফল নায়িকা। নজর কেড়েছিলেন সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ‘শাহজাহন রিজেন্সি’ ছবিতেও। কেরিয়ারগ্রাফ ঊর্ধ্বমুখী থাকলেও বেশ কিছু দিন বড় বা ছোট পর্দা থেকে দূরে অভিনেত্রী ঋত্বিকা সেন। টলিপাড়া থেকে কি হারিয়ে গেলেন তিনি? কেন এত কম দেখা যাচ্ছে তাঁকে?

Advertisement

প্রশ্ন করতেই আনন্দবাজার অনলাইনকে ঋত্বিকা বলেন, “এই প্রশ্নটা আমাকেই কেন? আরও অনেককেই সেই ভাবে দেখা যাচ্ছে না।” পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে ঋত্বিকা বলেন, “এই প্রশ্নটা বোধ হয় চলচিত্র জগতের নির্মাতাদের করা উচিত, তাই না? বাংলায় আরও ভাল কাজ হওয়া দরকার। সেই ধরনের ছবি হচ্ছে কোথায়? তেমন কোনও কাজের প্রস্তাব পেলে নিশ্চয়ই করব। ভাল গল্প সে ভাবে তো দেখতেই পাচ্ছি না। বহু দিন পরে একটা ভাল ছবি দেখলাম, ‘অযোগ্য’। একটা সময় মানুষ ছবির জন্যই বাঙালিকে চিনত। সেই জায়গায় এখন বাঙালি অভিনেতাদের ভাল কাজের সুযোগ কমেছে তো বটেই।”

তবে ঋত্বিকা জানান, তিনি ভেবেচিন্তে বাংলা ছবি থেকে দূরে থাকছেন, এমন মোটেও নয়। দক্ষিণের ছবিতে কাজ শুরু করার পরে বাংলায় কম সময় দিতে পারছেন। কিন্তু বাংলায় কাজ করতেই তিনি বেশি আগ্রহী।

বাংলা ছেড়ে দক্ষিণের ছবিতে সময় দেওয়ার কী কারণ? ঋত্বিকার কথায়, “দু’টি ইন্ডাস্ট্রির প্রায় সবই এক রকম। ভাষাটা অন্য হয়তো। তবে হ্যাঁ, পারিশ্রমিক ওখানে অনেকটাই বেশি। এতে লুকোনোর কিছু নেই। বাংলার শিল্পীরা সত্যিই খুব প্রতিভাবান। পেশাদারিত্বের বিষয়ে অবশ্য কিছু বলতে পারব না। আমার কাছে দক্ষিণে কাজ করার প্রস্তাব এসেছিল। গল্প ও চরিত্র ভাল লেগেছিল বলে আমি রাজি হই। যদিও ওখানে আমি বাংলারই প্রতিনিধিত্ব করি। আমায় সকলে বাঙালি অভিনেত্রী হিসেবেই চেনেন।”

কলকাতার পরিচালকেরা কি তা হলে ঋত্বিকাকে নিয়ে ভাবছেন না? অভিনেত্রী বলেন, “আমরা অভিনেত্রী। তাই ভিন্ন চরিত্র ভিন্ন ভাবে তুলে ধরাই আমাদের কাজ। চরিত্র নিয়ে কাটাছেঁড়া করতে না পারলে আর কী করলাম! তবে বহু দিন পরে মনের মতো একটা চরিত্র পেয়েছি। ‘মহরৎ’ ছবিতে একজন সাংবাদিকের চরিত্রে দেখা যাবে আমাকে।”

ঋত্বিকার কথায়, “আমার মনে হয় বয়সের তুলনায় যথেষ্ট বেশি কাজের সুযোগ পেয়েছি। কিন্তু দর্শকের মনে হয়, আমার আরও বেশি কাজ করা উচিত। দর্শক যে আমাকে নিয়ে এটা ভাবছে, সেটা তো আমার কাছে অনেক বড় পাওয়া। মাত্র ১৪ বছর বয়সে আমি ‘বরবাদ’ ছবিতে অভিনয় করেছিলাম। কেউ এটা বিশ্বাস করে না যদিও। তবে হ্যাঁ, এমন কিছু চরিত্রও রয়েছে, যেগুলি দেখে মনে হয়েছে, আমি করতে পারলে ভালই হত।”

‘আরশিনগর’-এ দেবের সঙ্গে কাজ করেছেন ঋত্বিকা। দেব-এর প্রযোজনা সংস্থা থেকে ডাক আসছে না? প্রশ্ন করতেই ঋত্বিকা হেসে বলেন, “‘আরশিনগর’ এ আমায় একটুও মেকআপ করতে দেওয়া হয়নি। মেকআপ করতে দিলে হয়তো বয়স আর একটু বেশি লাগত। তখন খুব কম বয়স ছিল। দেবদা সুপারস্টার। কিন্তু আমারও দেখে মনে হয়েছিল, হয়তো বয়সের ব্যবধান একটু বেশি লেগেছে। কিন্তু চিত্রনাট্যের খাতিরে যদি বয়সের সেই ব্যবধান প্রয়োজন হয়, তা হলে আবার কাজ করব।”

এক দিকে ‘বর‍বাদ’-এর মতো বাণিজ্যিক ছবি। অন্য দিকে অপর্ণা সেনের পরিচালনায় ‘আরশিনগর‍’। কিন্তু সেই তুলনায় তাঁর হাতে এখন কাজের পরিমাণ কম। টলিপাড়ার পার্টি বা জমায়েতেও সেই ভাবে কখনও দেখা যায় না ঋত্বিকাকে। অভিনেত্রীর কথায়, “আমি পার্টি করতে ভালবাসি না। নিজের সঙ্গে সময় কাটাতে সবচেয়ে ভাল লাগে। তবে হ্যাঁ, মানুষের সঙ্গে কথা বলতে ভালবাসি। মাঝে মধ্যে বাধ্য হয়ে গিয়েছি কিছু পার্টিতে। তবে এখন মানুষকে না বলতেও শিখছি।”

‘না’ বলতে না জানলে তো ইন্ডাস্ট্রিতে নানা রকমের প্রস্তাবের সম্মুখীন হতে হয়? প্রশ্ন শুনে ঋত্বিকা জানান, সদ্য ‘না’ বলতে শিখছেন। তবে বরাবরই নিজের চারপাশে একটা অদৃশ্য ঢাল রেখে চলেন। তাঁর কথায়, “আমি অনেক ছোট থেকে কাজ করছি। আমায় অনেকেই তাই চেনেন। নতুনদের কাছে হয়তো ‘কাস্টিং কাউচ’-এর প্রস্তাব আসতে পারে। কিন্তু আমায় এই ধরনের প্রস্তাব দিলে আমি কী উত্তর দিতে পারি, তা সকলের জানা। সেই জন্য আমায় কেউ এই ধরনের প্রস্তাব দেন না।”

এর পর, পছন্দের সহ-অভিনেতাদের প্রসঙ্গ আসতেই দেব, আবীর চট্টোপাধ্যায় ও অঙ্কুশ হাজরার নাম উল্লেখ করেন ঋত্বিকা। তবে এক সহ-অভিনেতার সঙ্গে তাঁর অভিজ্ঞতা মোটেও ভাল নয় বলে জানান অভিনেত্রী। নাম না করে ঋত্বিকা বলেন, “দর্শক আমাদের জুটিকে পর্দায় দেখে পছন্দ করেছে ঠিকই। কিন্তু পছন্দের সহ-অভিনেতাদের মধ্যে ওঁর নাম নিতে চাই না। ওই কাজের সময়ে আমি খুবই ছোট ছিলাম। তখনই আমার নামে এমন কিছু গুজব রটানো হয়, যা আমার ভাল লাগেনি।”

প্রত্যেক ইন্ডাস্ট্রিতেই স্বজনপোষণ নিয়ে চর্চা হয়ে থাকে। একটা সময় কাজ পেয়েও তা হাতছাড়া হওয়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে ঋত্বিকারও। তাঁর কথায়, “ছোটবেলায় এক বার হয়েছিল। ‘বরবাদ’-এর আগের কথা। ন’দিন ওয়র্কশপ করেছিলাম। এক ধারাবাহিকের মুখ্য চরিত্রের প্রস্তাব পেয়েছিলাম। আমার মাপে পোশাকও তৈরি হয়ে গিয়েছিল। শুটিং শুরুর আগের দিন জানতে পারি, আমি কাজটা করছি না। খারাপ লেগেছিল।” তবে এমন অভিজ্ঞতাও জীবনে প্রয়োজন বলে মনে করেন ঋত্বিকা।

অভিজ্ঞতার প্রসঙ্গ উঠতেই ঋত্বিকা জানান, অভিনয়ের সফরে অপর্ণা সেনের পরিচালনায় কাজ করা তাঁর কাছে বিরাট প্রাপ্তি। তিনি বলেন, “মানুষ হিসেবেও ওঁর থেকে অনেক কিছু শিখেছি। তাই ভবিষ্যতেও ওঁর সঙ্গে কাজ করতে চাই আবার। কৌশিকদার (গঙ্গোপাধ্যায়) সঙ্গেও কাজ করতে চাই।”

টলিপাড়ায় ছোট থেকে কাজ করলেও বন্ধুত্ব তৈরি হয়নি ঋত্বিকার। অভিনেত্রী বলেন, “আসলে সহকর্মীরা কখনও বন্ধু হয় না। যাঁদের সঙ্গে কাজ করেছি, ভাল সম্পর্ক রয়েছে। তবে, বন্ধু শব্দটা আমার কাছে অনেক বড়। ইন্ডাস্ট্রির বাইরে আমার নিজের গুটি কয়েক বন্ধু রয়েছে। ওদের সঙ্গে দেখা হলে খুব ভাল সময় কাটে।” কিছু দিন আগেই স্নাতক হয়েছেন ঋত্বিকা। তবে মনের মতো সঙ্গী খুঁজে পাওয়ার আগে নিজে আরও একটু পরিণত হতে চান বলে জানান অভিনেত্রী। আপাতত কাজ ও পড়াশোনায় মন দিতে চান তিনি।

আরও পড়ুন
Advertisement