কলকাতা তাঁর বিদ্রোহিনী রূপ দেখেছে। আনন্দ উৎসব তাঁর রূপের জৌলুসের সাক্ষী। বাংলার পৃথা সেনগুপ্ত দক্ষিণী দুনিয়ার মোক্ষ! যেন ‘বনলতা’র পেলবতা সরিয়ে ‘প্রীতিলতা’র দৃপ্ততায় রূপান্তরিত তিনি।
আনন্দবাজার অনলাইন জেনেছিল তাঁর প্রথম রূপান্তরের কথা। শহরের এক তরুণী চিকিৎসকের নির্যাতন-মৃত্যু তাঁকে কাঁদিয়েছিল, ভেঙে দিয়েছিল। দক্ষিণী বিনোদন দুনিয়া ছেড়ে তাই সটান চলে এলেন শহরে।
মোক্ষ যে দিন আনন্দবাজার অনলাইনের জন্য শুট করতে এসেছিলেন সে দিনও তাঁর চোখেমুখে দ্বিধা, বিদ্রোহ। পরনে সাদা সিল্ক, মানানসই ব্লাউজ়। কপালে ছোট্ট টিপ, হালকা লিপস্টিক— এই ছিল তাঁর সাজ। পুজোর জন্য শাড়ি, পোশাক বাছতে বাছতেই মুখচোখের টানধরা ভাব উধাও। না, বড় টিপ পরতে নারাজ তিনি।
কী কী বেছে নিয়েছিলেন মোক্ষ? অভিনেত্রীর কাছে পুজো মানে সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী। তার উপর এ বছর পুজোর ভাগে দিন কম। বাছলেন দুটো শাড়ি, একটি জামা।
সপ্তমী মানে উৎসবের শুরু। সে দিন হালকা সাজের দিন। এমনটাই ভেবেছিলেন মোক্ষ। খুব সাজে তাঁর মন নেই। তাঁর পছন্দ ডিজ়াইনার শ্যামের নীল রঙের হাঁটুছোঁয়া জামা। সুতির এই পোশাকেও যেন লুকিয়ে প্রতিবাদ, অল্প সাইড স্লিট। বুকের কাছে জামদানির প্যাচওয়র্ক। পুরো জামা জুড়ে সূক্ষ স্ট্রাইপ।
শুধু জামা নয়, পদক্ষেপে দৃপ্ততা আনতেই যেন কাঁধে পরে নিলেন সিল্ক-সুতির তসররঙা পুরোহাতা জ্যাকেট। এতেও জামদানির কাজ। কাঁধছোঁয়া চুল, হালকা গয়না, আর হাই হিল। মোক্ষর পুজো শুরু।
অষ্টমী নিবেদনের দিন। দিন যদি লাল-সাদা শাড়ির, রাত অবশ্যই রঙিন ঝলমলে সাজে। অভিনেত্রীও হাঁটলেন গতানুগতিক পথে। তাই তাঁর এ দিনের সন্ধ্যার সাজ ক্যাভার্কের শাড়ি।
তসর জমিনে রেশমের বুনন, সূক্ষ কারুকাজ। আর জরির সিক্যুইন। সব মিলিয়ে শাড়িতে উৎসবের গন্ধমাখা। মোক্ষ স্বভাবে সাহসী, সাজেও। মসৃণ পিঠের সৌন্দর্য উস্কে সোনালি সিক্যুইনের ব্যাকলেস, হল্টার ব্লাউজ়। চুল উঁচু করে বাঁধা। শাড়ির সঙ্গে সোনালি গয়না। কপালে আলগোছে টিকলি। সাজ সম্পূর্ণ করে তথাগত ঘোষের ক্যামেরার সামনে দাঁড়াতেই মুগ্ধ অভিনেত্রীর ছেলেবেলার সঙ্গী তন্ময় দে-ও। হ্যাঁ, কলকাতায় তাঁর বান্ধবী এলে তিনিই তাঁর ছায়াসঙ্গী।
কাজ করতে করতেই আড্ডা, খাওয়াদাওয়া। দিনটা সোমবার। মোক্ষর আবদার, নিরামিষ স্যুপ। মেকআপ নিতে নিতে তাতে চুমুক। জানালেন, এ বারের পুজো তাঁর কাছে দ্রোহকাল। উৎসব, উদ্যাপন কিচ্ছু নেই। তাই কলকাতায় আসবেন কি না তারও ঠিক নেই। আসলে অভয়া ক্লিনিকে চিকিৎসকদের সঙ্গে হয়তো থাকবেন। আমন্ত্রণ পেয়েছেন।
কথা বলতে বলতেই সাজ সম্পূর্ণ। মেকআপ রুমে উঁকি দিতেই দেখা গেল, লাল-নীল রঙের যুগলবন্দি শাড়িতে। এই শাড়ির জমিনও তসর। তাতে জরিবোনা লতাপাতা। সঙ্গে নীল হাতকাটা ব্লাউজ়। অঙ্গে জড়াতেই লালচে আভা অভিনেত্রীর গমরঙা ত্বকে। সেই আঁচ আরও গনগনে করতে ডান হাত ভরে লাল চুড়ি। খোলা চুলে মোক্ষ আবারও বিদ্রোহিনী। হাতে স্লেট-পেন্সিল। তাতে লেখা ‘নিরাপদ?’ জোর দিয়ে যেন জানতে চেয়েছেন, ‘সত্যিই কি আমরা নিরাপদ?’
এ বারের পুজোয় যন্ত্রণার কালো ছায়া। কিন্তু অন্য বারের পুজো মোক্ষর কেমন কাটে? কেনাকাটা, হুল্লোড়, ভরপেট পেটপুজো, অষ্টমীর অঞ্জলি, ধুনুচি নাচ— কিচ্ছু বাদ দেন না, হাসতে হাসতে জানালেন। আনন্দবাজার অনলাইনের এই শুটে অভিনেত্রীর সঙ্গে সারা ক্ষণ তন্ময়। সেটা দেখেই প্রশ্ন, আগামী বছরের পুজো কি মোক্ষের বিবাহিত রূপ দেখবে? পাল্টা প্রশ্ন ছুড়লেন অভিনেত্রীও, “মালয়ালম, কন্নড়, তামিল, তেলুগু, বাংলা— কাজের সুবাদে প্রত্যেক ইন্ডাস্ট্রি ভাবছে, আমি তাদের। তাই একুশের ‘দ্রৌপদী’ হলে কেমন হয়?”
শাড়ি: ক্যাভার্ক, পোশাক: শ্যামসূত্র। পরিকল্পনা: স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রয়োগ: উপালি মুখোপাধ্যায়। চিত্রগ্রাহক: তথাগত ঘোষ, জয়। স্টাইলিং: মানালী দে। ব্লাউজ়, অ্যাকসেসরিজ়: সুরজিৎ। রূপসজ্জা: রুদ্রজিৎ দাস, আকাশ। লোকেশন: এপি স্টুডিয়ো।