Brain

সম্পর্কের টানাপড়েনের মূলে যে মস্তিষ্কই! একই মঞ্চে ‘ব্রেন’-এর পাঠ নিয়ে দেবেশ, সুজন আর বিদীপ্তা

এ বছর ‘সংসৃতি’র নাট্যোৎসবের বিশেষ আকর্ষণ নীল, বিদীপ্তা আর দেবেশ অভিনীত ‘ব্রেন’। বহু দিন পর এই নাটক নিয়ে ফিরছেন দেবেশ। কবে, কোথায় দেখতে পাবেন?

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১২:১৯
‘সংসৃতি’র নাট্যোৎসবে প্রায় তিন বছর বাদে ‘ব্রেন’ নিয়ে ফিরছেন দেবেশ।

‘সংসৃতি’র নাট্যোৎসবে প্রায় তিন বছর বাদে ‘ব্রেন’ নিয়ে ফিরছেন দেবেশ। নিজস্ব চিত্র।

জ্ঞান আর অজ্ঞানের দ্বন্দ্ব চিরকালের। একের বিরুদ্ধে অন্যের লড়াইয়েও সেই পদ্ধতিগত ফারাক। কী ভাবে মস্তিষ্কের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় মানুষের প্রতিটি আচরণ? মঞ্চের উপর হাতেকলমে সেই পাঠ দেবেন পরিচালক দেবেশ চট্টোপাধ্যায়। সঙ্গী হয়েছেন অভিনেতা সুজন মুখোপাধ্যায় এবং বিদীপ্তা চক্রবর্তী।

‘সংসৃতি’র নাট্যোৎসবে প্রায় তিন বছর বাদে ‘ব্রেন’ নিয়ে ফিরছেন দেবেশ। নাটকটি মঞ্চস্থ হবে আগামী ৫ মার্চ।

Advertisement

এই নাটকের কেন্দ্রীয় চরিত্রে আগে অভিনয় করতেন পীযূষ গঙ্গোপাধ্যায়। ২০১৪-তে পীযূষের মৃত্যুর পর দেবেশ নিজেই মূল চরিত্রটি করতে থাকেন। অত্যন্ত জনপ্রিয় হলেও নাটকটির অভিনয় বেশি হয়নি।

দেবেশের দাবি,‘‘অভিনয় করতে আমার ভালই লাগে না।’’ তবে আরও বলেন, ‘‘এই চরিত্রটা আমি ছাড়া আর কেউ করতে পারবে না। কারণ, চরিত্রটা কথা বলে তার ভিতরের বোধ থেকে। সে কেবল তথ্য দেয় না। মস্তিষ্কের বিজ্ঞান অন্যকে শিখিয়ে তার পর তাকে দিয়ে অভিনয় করানোর থেকে আমার নিজেরই করে দেওয়া ভাল।’’

সম্পর্কের নানা বাঁকবদলের সঙ্গে জুড়ে যায় মস্তিষ্কের বিজ্ঞান।

সম্পর্কের নানা বাঁকবদলের সঙ্গে জুড়ে যায় মস্তিষ্কের বিজ্ঞান। — নিজস্ব চিত্র।

২০১০-এ ‘কগনিটিভ নিউরোসায়েন্স অ্যান্ড থিয়েটার’ নিয়ে ফেলোশিপ করতে গিয়েই দেবেশ এই নাটকের বীজ খুঁজে পান। জটিল বিষয় সহজ ভাবে মানুষের কাছে পৌঁছনো যায় কি না তা নিয়ে নিরীক্ষা শুরু করেন। শেষমেশ ‘ব্রেন’ নাটকটি লিখে ফেলেন দেবেশ। প্রথম অভিনয় হয় ২০১১ সালে।

দেবেশ বললেন, ‘‘মানব সম্পর্কের নাটক এটি। মানব মস্তিষ্কের জটিলতা, পরিবর্তনের মতো জটিল বিষয় নাটকটির ভরকেন্দ্র।’’

প্রধান চরিত্র তিনটি। তার মধ্যে এক জন থিয়েটারের পরিচালক। তার জ্ঞান অগাধ। তবে বৈভব শূন্য। যে চরিত্রটি করছেন দেবেশ। তাঁর স্ত্রীর চরিত্রে রয়েছেন বিদীপ্তা চক্রবর্তী। থিয়েটারের দলের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও পেশায় অধ্যাপক সেই চরিত্র। তাদের বন্ধুর চরিত্রে অভিনয় করছেন নীল (সুজন) মুখোপাধ্যায়। সিরিয়ালে খলনায়কের চরিত্র করে খ্যাতির আলোয় এসে থিয়েটার থেকে সরে গিয়েছে সে। তার সঙ্গে পরিচালকের স্ত্রীর গড়ে ওঠা সম্পর্কের পর্দা ধীরে ধীরে উন্মোচিত হয় জ্ঞান আর অজ্ঞানের যুদ্ধে। দেবেশ জানান, ‘‘নাটকের শেষে আসে একটি মৃত্যু, প্রায় অ্যাকশন থ্রিলারের মতো।’’

জটিলতা আছে নাটকে। তবে দেবেশের কথায়, ‘‘সহজ, সরল বলার ভঙ্গিতে একটা মজাও আছে।’’

‘ব্রেন সায়েন্স’ বা মস্তিষ্কবিজ্ঞান নিয়ে তৈরি হওয়া এই সিরিয়াস নাটকে কী ভাবে ছোট ছোট মজা উঠে আসে?

‘ব্রেন সায়েন্স’ বা মস্তিষ্কবিজ্ঞান নিয়ে তৈরি হওয়া এই সিরিয়াস নাটকে কী ভাবে ছোট ছোট মজা উঠে আসে? নিজস্ব চিত্র।

‘ব্রেন সায়েন্স’ বা মস্তিষ্কবিজ্ঞান নিয়ে তৈরি হওয়া এই সিরিয়াস নাটকে কী ভাবে ছোট ছোট মজা উঠে আসে? পরিচালক বলেন, একটি দৃশ্যের কথা। গবেষক মানুষটি ব্রেন-এর জটিল বিন্যাস বোঝাতে গেলে তার স্ত্রী ও বন্ধু ইয়ার্কি শুরু করে। তারা বোঝে না। সে যখন ‘কর্পাস কলোসাম’- এর মতো জটিল বৈজ্ঞানিক পরিভাষা ব্যবহার করে, তা ধরতে পারে না উল্টো দিকে থাকা দু’টি চরিত্র। তার স্ত্রী বলে ওঠে, ‘‘কালোজাম? ’’

না-বলা কথার মাধ্যমে যে সংযোগ (নন-ভার্বাল কমিউনিকেশন) মানুষের সঙ্গে ঘটাতে পারে ব্রেন, সেটা এই নাটকের একটা বড় জায়গা জুড়ে আছে। সত্যি-মিথ্যের জটিল জট একটু একটু করে খুলে যেতে থাকে এ ভাবেই। আসে চেতন-অবচেতনের কথা, আবেগের কথা, যা আসলে মস্তিষ্কেরই খেলা।

‘ব্রেন’-এর অন্যতম অভিনেতা সুজন মুখোপাধ্যায়ের কাছে এই নাটক খুব কাছের। মঞ্চ থেকে নানা কারণে তখন সরে ছিলেন সুজন। দেবেশের এই নাটক দিয়েই থিয়েটারে ফিরে আসেন তিনি। সুজনের কথায়, ‘‘নাটকটা অনেকের ভাল লেগেছে বলে জানি। নতুন অনেক কিছু পাওয়াও যায় এই নাটক থেকে। যা দর্শকদের অনেকেরই অজানা।’’ তাঁর নিজের কাছেও এই নাটক একটা চর্চা। মুগ্ধতা প্রকাশ করে সুজন বললেন, দেবেশ অভিনীত চরিত্রটি তাঁর খুব প্রিয়। ‘‘একটা গবেষণা থেকে তৈরি হওয়া একটা গল্প— চমৎকার মিলিয়েছেন দেবেশদা।’’

নাটকটিতে জটিলতা আছে, মানছেন সুজন। বললেন, ‘‘সে জটিলতা তো আমাদের জীবনেও আছে।’’ সুজনের কথায়, ‘‘এই নাটকের কেন্দ্রে রয়েছে জ্ঞান এবং অজ্ঞানতার টানাপড়েন। জনপ্রিয়তা এবং মানুষের অন্তর্গত মেধার মধ্যেও নিরন্তর দ্বন্দ্ব চলতে থাকে।’’

নিজের চরিত্রটি সম্পর্কে সুজন বলেন, ‘‘আমার চরিত্রটি এমন, যার ভাবনার মধ্যে গভীরতা নেই। কিন্তু সে তথাকথিত সফল মানুষ। অনেকটা ‘বাজারি’ হয়ে গিয়েছে সে। দর্শক দু’টি চরিত্রের মধ্যে কাকে পছন্দ করবেন, সেটা তাঁদের ব্যাপার।’’

সব মিলিয়ে সম্পর্কের নানা বাঁকবদলের সঙ্গে জুড়ে যায় মস্তিষ্কের বিজ্ঞান। দুই বিপরীতমুখী চরিত্রের রসায়নের মাঝে অনুঘটকের কাজ করে পরিচালকের স্ত্রীর চরিত্র।

বিদীপ্তা চক্রবর্তী বললেন, জ্যান্ত চরিত্রের প্রেম, বিচ্ছেদ, বন্ধুত্ব তো আছেই এই নাটকে। তার সঙ্গেই আমাদের ভাবনাচিন্তা কী ভাবে ব্রেন-এর মাধ্যমে পরিচালিত হয়, সেটা খুব জরুরি হয়ে উঠে এসেছে। বিদীপ্তার কথায়, ‘‘আমরা অনেক সময় বুঝতেই পারি না, মানুষ যে নানা পরিস্থিতিতে নানা রকম ব্যবহার করে, তার শরীরেও যে নানা রকম বিক্রিয়া হয়, তা আসলে ‘ব্রেন’-এর নির্দেশেই। এই নাটকে অভিনয় করতে গিয়ে তিনি নিজেও অনেক গভীরে ঢুকতে পেরেছেন এই জটিল মনস্তত্ত্বের। নাটকটি শুনেই ভাল লেগেছিল তাঁর। বিদিপ্তা বললেন, ‘‘সবই আছে নাটকে। তার মধ্যে ব্রেন আমাদের কী ভাবে চালনা করে, কী করে নিয়ন্ত্রণ করে চিন্তাভাবনা, তা চমৎকার ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন নাট্যকার-পরিচালক।’’

অনেক ব্যস্ততার মধ্যেও থিয়েটারের জন্য সময় বার করে নেন অভিনেত্রী। বিদীপ্তার কথায়, ‘‘এত বছর পরে দেবেশ যখন জানালেন, দর্শকের চাহিদায় নতুন করে অভিনয় হবে নাটকটি, তখন খুবই ভাল লাগছে।’’

আরও পড়ুন
Advertisement