জীবন নিয়ে অকপট সম্রাট মুখোপাধ্যায়। ছবি: ফেসবুক।
মে মাসে বাবার মৃত্যু। অগস্টে তিনি মদ্যপ অবস্থায় তীব্র গতিতে গাড়ি চালিয়ে দুর্ঘটনার অভিযোগে গ্রেফতার। হাজতবাসও করতে হয়েছে। তার পরেও সান বাংলায় তাঁর অভিনীত ধারাবাহিক ‘আকাশ কুসুম’ ৩০০ পর্ব অতিক্রম করল। ধারাবাহিকের নায়ক সম্রাট মুখোপাধ্যায়ের অভিনয় দর্শক প্রশংসিত। ধারাবাহিকের সেটে সাফল্য উদ্যাপন হয়েছে সদ্য। সহ-অভিনেতারা কেক খাইয়েছেন একে অপরকে। চারপাশে গোলাপের পাপড়ি ছড়ানো।
সম্রাটের সাম্প্রতিক জীবন বলছে, ধারাবাহিকের ৩০০ পর্বের সফরে কিন্তু গোলাপের পাপড়ি বিছানো ছিল না। বরং গোলাপের কাঁটাই ছিল বেশি। কী করে এত ওঠাপড়া সামলে চলছেন? আনন্দবাজার অনলাইনের প্রশ্ন শুনে সম্রাটের যুক্তি, “যখনই ওঠাপড়া আসে তখনই রাজ কপূরের একটা কথা বার বার মনে করি, ‘শো মাস্ট গো অন’। বলতে পারেন, এটাই আমার নিজেকে সামলানোর মন্ত্র।” পাশাপাশি, তিনি গত ৩০ বছর ধরে নিয়মিত শরীরচর্চা করেন। যা তাঁকে ইতিবাচক থাকতে যথেষ্ট সহযোগিতা করে। অভিনেতার দাবি, এই মন্ত্র জপতে জপতেই তিনি ২২ বছর অতিক্রম করে ফেলেছেন বাংলা বিনোদন দুনিয়ায়। বাংলা ছবি দিয়ে অভিনয় দুনিয়ায় আত্মপ্রকাশ। তার পর ছোট পর্দা, যাত্রা— সর্বত্র অবাধ গতিবিধি। কেবল সিরিজ়ে অভিনয়টাই বাকি। সম্রাটের কথায়, “নিজেকে আরও একটু গোছানো বাকি। এখনই ছোট পর্দা থেকে সরে যেতে চাইছি না। আর এখানে কাজ করলে পাশাপাশি অন্য কাজ করা সম্ভব নয়। অন্তত আমি পারি না। তাই আপাতত সিরিজ় থেকে দূরে।” তবে এ-ও জানালেন, সে রকম লোভনীয় চরিত্র পেলে অবশ্যই সাড়া দেবেন।
গাড়ি দুর্ঘটনার অভিযোগে হাজতবাস, আদালতের কাঠগড়ায়। ধারাবাহিকের প্রযোজক, সহ-অভিনেতারা তখনও কি পাশে ছিলেন? তার উপরে সমাজমাধ্যমে কটাক্ষের বন্যা! অভিনেতা তখনও শান্ত। ফোনের ও পারে হাসতে হাসতে বললেন, “খুব শীঘ্রই প্রকৃত সত্য জানাতে সাংবাদিক সম্মেলন করতাম। তার আগেই মুখ খোলার সুযোগ পেলাম। আমাকে মিথ্যে অভিযোগে ফাঁসানো হয়েছিল। অতিরঞ্জিত খবর প্রকাশ করা হয়েছিল। আমি ঘণ্টায় ৯০ কিমি বেগে মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালাইনি। তদন্তের রিপোর্ট বলছে, আমার গাড়ির গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৫২ কিমি।” সম্রাটের দ্বিতীয় প্রমাণ, তিনি সে দিন রাত ১টা পর্যন্ত ধারাবাহিকের শুটিংয়ে ব্যস্ত ছিলেন। সেটা প্রযোজনা সংস্থার খাতায় লেখা। দুর্ঘটনা ঘটেছে রাত ১টা ১০ মিনিটে। পাল্টা প্রশ্ন করেছেন, “মাত্র ১০ মিনিটে মদ খেয়ে নেশাতুর হয়ে গাড়ি দুর্ঘটনা ঘটানো যায়? আমার লিভার থেকে কিন্তু কোনও মদ পাওয়া যায়নি।” তা হলে প্রকৃত ঘটনা কী? সম্রাট জানিয়েছেন, বাইকারোহী তীব্র বেগে গাড়ি চালিয়ে লেন পরিবর্তন করে গাড়ির সামনে এসে পড়েন।সম্রাট সামলানোর সুযোগ পাননি। এটা সিসিটিভির ফুটেজ থেকে প্রমাণিত।
একই ভাবে তিনি কটাক্ষের শিকার হলেও মাথাগরম করেন না। তিনি এত দিনে বুঝে গিয়েছেন, যাঁরা হতাশ, তাঁরাই ঘণ্টার পর ঘণ্টা সমাজমাধ্যমে সময় কাটান। এবং অন্যের সাফল্যে ঈর্ষান্বিত হয়ে ভুল মন্তব্য করেন। একই সঙ্গে তাঁরা খ্যাতনামীদের প্রচারের আলোও নিজেদের গায়ে মেখে নেন।
প্রযোজনা সংস্থা এবং সহ-অভিনেতারাও তাই শুরু থেকেই তাঁর পাশে ছিলেন। ঠিক যে ভাবে ছিল পরিবার। প্রকৃত সত্য প্রকাশ্যে আসার পর তাঁরা আরও ভাল করে বুঝতে পেরেছেন, তিনি নির্দোষ। সকলে পাশে ছিলেন বলেই তিনি এতগুলো পর্ব ধরে অভিনয় করে যেতে পারছেন, তা-ও আবার এখনও নায়কের ভূমিকায়। সম্রাটের দাবি, “আমার বয়সে বা তার আগেই বেশির ভাগ অভিনেতা বাবা-কাকার চরিত্র পান। আমার শরীরচর্চা এখনও আমাকে নায়ক বা সহ-নায়কের চরিত্রে অভিনয়ের উপযুক্ত রেখেছে। আমিও পারছি।” ২২ বছর ধরে ইন্ডাস্ট্রিতে। কী কী বদল চোখে পড়ল? সম্রাটের জবাব, “আগে টেলিপাড়ায় বাবা-কাকাদের ধরে কাজ পাওয়ার সুযোগ ছিল। বাবা-বাছা করে কাজ করিয়ে নেওয়া হত। এখন ইন্ডাস্ট্রি কর্পোরেট। কোনও সুপারিশের মাধ্যমে নয়, কাজ জানলে কাজ পাবে। না হলে নয়।” তাঁর মতে, এতে এক দিকে ভালই হয়েছে। কাস্টিং কাউচ কমেছে।