পহেলগাঁও নিয়ে কী বললেন রিজ়ওয়ান? ছবি: সংগৃহীত।
কাশ্মীরে আবার জঙ্গিহানা, পহেলগাঁওয়ের ঘটনায় স্তব্ধ গোটা দেশ। ভূস্বর্গে বেড়াতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ২৬ জন। জানা যাচ্ছে, ধর্মীয় পরিচয় জেনে হত্যা করে জঙ্গিরা। ঘটনার বিবরণ শুনে শিউরে উঠছে সারা দেশের মানুষ। সমাজমাধ্যমে ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন তাঁরা। সে সব পোস্টে বার বার উঠে আসছে ধর্মের প্রসঙ্গও।
বাংলা ছোট পর্দার অভিনেতা রিজ়ওয়ান রব্বানি শেখও পহেলগাঁও ঘটনার নিন্দা করেছেন। তবে তিনি মনে করেন, সন্ত্রাসবাদের কোনও ধর্ম হয় না। সন্ত্রাসবাদীদেরও কোনও ধর্ম বা জাত হয় না। কোনও ধর্মই হিংসা ছড়ানোর কথা বলে না।
পহেলগাঁওয়ের ঘটনার পরে পথে নেমেছিলেন কাশ্মীরের সাধারণ মানুষ। জঙ্গি হামলার প্রতিবাদ করেছেন তাঁরা। এই ঘটনার জেরে কাশ্মীরের সাধারণ মানুষও ব্যাপক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বলে মত রিজ়ওয়ানের। তিনি বলেছেন, “আমি দু’বার কাশ্মীর ঘুরে এসেছি। যেখানে ঘটনাটি ঘটেছে, সেখানেও আমি গিয়েছিলাম। খুব সুন্দর জায়গা। কাশ্মীরে গিয়ে বুঝেছিলাম, সেখানকার বাসিন্দাদের জীবিকার অন্যতম ও প্রায় একমাত্র উৎস হল পর্যটন। শিল্প বলতে তেমন কিছুই নেই।” তিনি মনে করেন, অহমদাবাদের মতো শিল্পনির্ভর জায়গা নয় কাশ্মীর। গাধার পিঠে চড়ানো বা শিকারা ভ্রমণ ওখানকার রুজিরুটির পথ, যার কেন্দ্রে রয়েছে পর্যটন। তিনি বলেন, “কাশ্মীরের মানুষের জীবন খুবই কষ্টকর। এ বার পর্যটনটাও যদি বন্ধ হয়ে যায়, মানুষ যদি ভ্রমণে ভয় পান, তা হলে ওঁরা খুবই সমস্যায় পড়বেন। কবে এই পরিস্থিতি আবার স্বাভাবিক হবে, কেউ জানে না।”
পহেলগাঁওয়ের ঘটনায় কারও নাম জানতে চাওয়া হয়েছিল। কাউকে আবার কলমা পড়তে বলা হয়েছিল। এই ভাবেই ধর্মপরিচয় জেনে নিশানা করা হয়েছিল নিহতদের। এই প্রসঙ্গে রিজ়ওয়ান বলেন, “হ্যাঁ, এই ঘটনায় খুনের আগে ধর্মপরিচয় জানতে চাওয়া হয়েছিল, খুবই মর্মান্তিক। কিন্তু যাঁরা এই হত্যালীলার পিছনে রয়েছে, তাদেরকে কোনও ধর্ম এই কাজ করতে শেখায়নি। আমি বেদ, কোরান, বাইবেল পড়েছি। কোনও ধর্মগ্রন্থই কিন্তু অন্য ধর্মের মানুষকে হত্যা করতে শেখায় না। ঈশ্বর কখনও হিংসা প্রদর্শন করতে শেখান না। হজরত মহম্মদ, যিশু বা কৃষ্ণ সকলেই শান্তির কথাই বলেছেন।”
রিজ়ওয়ান আরও বলেন, “সন্ত্রাসবাদের কোনও ধর্ম হয় না, এই কথাটা বার বার বলি। জোর করে ‘জয় শ্রীরাম’ বলানো এবং সেই ঘটনা নিয়ে মানুষকে মারধর করা— এ সবও কিন্তু ধর্ম শিখিয়ে দেয়নি। অস্ট্রেলিয়াতেও মাঝে ভারতীয়দের নিশানা করা হচ্ছিল। সারা বিশ্বেই এমন ঘটছে। কিন্তু এই ধরনের ঘটনা যারা ঘটায় তাদের কোনও ধর্ম হয় না।”
রিজওয়ান চান, পহেলগাঁওয়ের এই মর্মান্তিক ঘটনায় যেন রাজনীতির রং না লাগে। কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে তাই রিজ়ওয়ানের আবেদন, “শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রেখেই যেন এই ঘটনার যোগ্য জবাব দেওয়া হয়। যারা ঘটিয়েছে,তাদের যেন উচিত শিক্ষা দেওয়া হয়। এই হত্যাকারীদের জন্য গোটা একটা সম্প্রদায়ের দুর্নাম হচ্ছে। ওখানে তো স্থানীয় পুলিশদের মধ্যে মুসলিম ধর্মাবলম্বী মানুষ রয়েছেন। যে স্থানীয়েরা পরে সাহায্য করছেন, তাঁরাও তো রয়েছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত কাশ্মীরের ওই সাধারণ মানুষগুলো এ বার না খেতে পেয়ে মরবে। ‘আজ ওরা ধর্ম জেনে হত্যা করেছে, কাল আমরাও এর পাল্টা দেব’, এমন যেন না হয়। তা হলে গোটা পৃথিবী শেষ হয়ে যাবে।”
অভিনেতা জানেন, এই ঘটনা খুবই স্পর্শকাতর। তাই দেশের স্বার্থে রাজনীতি বা ধর্মীয় বিভাজন দূরে রাখার পক্ষপাতী তিনি। সারা দেশের শান্তি বজায় রেখে যেন এই সন্ত্রাসবাদীদের শাস্তি হয়, এই তাঁর একমাত্র চাওয়া।