সৌরভ চক্রবর্তী ।
শহরের কলকাকলিতে কখনও কখনও মাথার ভিতরেও যানজট শুরু হয়ে যায়। তেমনটাই হল সৌরভের? একা থাকার দরকার পড়ল কেন? আসলে ভাবা প্র্যাক্টিস করায় কোথাও যেন খামতি পড়ে যাচ্ছে বারে বারে। ছবি বানাতে গেলে কাহিনির বুনন তো দরকার। নিদেনপক্ষে পাহাড়ের দিকে তাকিয়ে বসে থাকাটা দরকার। ১২-১৩ দিনের জন্য দার্জিলিংয়ে আসর পেতে বসলেন তিনি। কিন্তু গল্প যেন পা টিপে টিপে তাঁর দিকেই এগোচ্ছিল। একটা খুন, আর তার পরে সব কিছু পাল্টে যাওয়া... গল্পের খোঁজে পাহাড়ে আসা, কিন্তু তিনিই কি সেই গল্পের অংশ হয়ে উঠবেন?
সেই প্রশ্নের উত্তর ‘মার্ডার ইন দ্য হিলস’-এ। অঞ্জন দত্তর প্রথম ওয়েবসিরিজ মুক্তি পেলেই সে খুনের রহস্যের সমাধান হবে। ‘সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার’ ঘরানার এই সিরিজে অভিনয় করেছেন সৌরভ চক্রবর্তী, সন্দীপ্তা সেন, অর্জুন চক্রবর্তী, অনিন্দিতা বসু, রাজদীপ গুপ্ত, রজত গঙ্গোপাধ্যায়, সুপ্রভাত দাস এবং পরিচালক।
সৌরভের চরিত্রটি তাঁর বাস্তবের সঙ্গে খুব আলাদা নয়। তিনিও এক জন পরিচালকের চরিত্রতেই অভিনয় করছেন। যিনি গল্পের খোঁজে পাহাড়ে পাড়ি দিয়েছেন। বাস্তবে তিনি কেবল অভিনেতা নন, এক জন সফল পরিচালকও বটে। হইচই-এ একাধিক ওয়েবসিরিজ বানিয়েছেন তিনি। ‘শব্দ জব্দ’ হোক বা ‘ধানবাদ ব্লুজ’, পরিচালক হিসেবেও জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন সৌরভ। হয়তো সে কারণেই অঞ্জন দত্তর সঙ্গে কাজ করাটা তাঁর জীবনের অন্যতম বিশেষ অভিজ্ঞতা বলে মনে করেন তিনি।
আনন্দবাজার ডিজিটালের সঙ্গে কথা বলার সময়ে সৌরভ বললেন, ‘‘অঞ্জনদা এক জন গায়ক, পরিচালক, অভিনেতা, লেখক। একাধারে এত কিছু প্রতিভা! তাঁর পরিচালনায় কাজ করাটা আমার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পরিচালক এবং অভিনেতা, একসঙ্গে দু’টো সত্তার মধ্যে সমতা আনার কাজটা তাঁকে দেখে অনেকটা সহজ হয়েছে।’’
অ়ঞ্জন দত্তের সঙ্গে দার্জিলিং ঘোরা নিয়েও উত্তেজিত তিনি। জানালেন, ‘’৯০ দশকে ‘খাদের ধারে রেলিংটা’ শুনে শুনে বড় হয়েছি। সেই গানের স্রষ্টার সঙ্গে দার্জিলিংয়ে ঘুরছি তাঁরই গল্পের চরিত্র হয়ে, এটা অনবদ্য অভিজ্ঞতা।’’
সিরিজ নিয়ে বেশি কিছু বলতে পারলেন না অভিনেতা। বাকি গল্প জানতে সিরিজ মুক্তির জন্য অপেক্ষা করার পরামর্শ সৌরভের। তবে আড্ডার মাঝে প্রকাশ পেল বেশ কিছু মজার ঘটনার কথা। গল্পের চরিত্রর মতোই ফাঁকা সময় পেলে গল্পের খোঁজে বেরিয়েছেন সৌরভ। একা একা খাদের ধার দিয়ে হেঁটেছেন। তা ছাড়া আড্ডা, গানবাজনা, একে অন্যের সঙ্গে মশকরা করা, সিনেমা নিয়ে আলোচনা— ভরপুর ছিল দার্জিলিংয়ের দিনগুলি।
একটি মজার ঘটনার কথা বললেন সৌরভ। এর আগের বার দার্জিলিংয়ে ‘কাঠমাণ্ডু কিচেন’ বলে একটি রেস্তরাঁয় গিয়ে স্থানীয় খাবার খেয়েছিলেন সন্দীপ্তা। তাঁর ইচ্ছে হয়েছিল, শ্যুটে বিরতি পেলে সবাইকে নিয়ে সেখানে যাবেন। শেষমেশ সন্দীপ্তা, সৌরভ, রাজদীপ ও অনিন্দিতা— ৪ জনে মিলে হাঁটা শুরু করলেন ‘কাঠমাণ্ডু কিচেন’-এর দিকে। কিন্তু এক সময়ে তাঁরা বুঝলেন সন্দীপ্তা রাস্তা ভুলে গিয়েছেন। সৌরভের কথায়, ‘‘যে পরিমাণ হাঁটতে হচ্ছিল, একে বারে কাঠমাণ্ডুতে পৌঁছে যাব মনে হচ্ছিল। জিপিএস কাজ করা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু তাও সন্দীপ্তার আত্মবিশ্বাস ছিল দেখার মতো! এক জায়গায় এসে দেখা গেল, রাস্তা শেষ। তখন বুঝলাম যে ফেরত যেতেই হবে। আচমকা এক জন স্থানীয় এসে আমাদের রক্ষা করেন।’’ অবশেষে কাঠমাণ্ডুর আগেই ‘কাঠমাণ্ডু কিচেন’-এর সন্ধান মেলে। সন্দীপ্তাকে নিয়ে উপহাস করার অবকাশও আর থাকল না। অপূর্ব খাবার খেয়ে খুশি হয়ে হোটেলে ফিরলেন অভিনেতা-অভিনেত্রীরা।