দেব।
রাজনীতির ময়দানে ভোট চাইতে ২০২৪ সালে কি তাঁকে ফের দেখা যাবে? তিনি কি তৃণমূল ছেড়ে অন্য কোনও দলে যোগ দেওয়ার কথা ভাবেন? আনন্দবাজার অনলাইনের শনিবাসরীয় লাইভ অ-জানাকথায় নিজের রাজনৈতিক জীবনের ভবিষ্যৎ গতিপথ স্পষ্ট করলেন ঘাটালের তৃণমূল সাংসদ তথা অভিনেতা দেব। অ-জানাকথায় দেব বললেন, ‘‘যদি সম্ভব হয়, ২০২৪-এর লোকসভা ভোটে আর দাঁড়াতে চাই না।’’
প্রশ্ন ছিল, তা হলে কি ২০২৪ সালে দেব ভোটে না-ও লড়তে পারেন? বাংলা চলচ্চিত্রের অন্যতম জনপ্রিয় তারকা বললেন, ‘‘২০২৪ এখনও দেরি আছে। তবে আমাকে যদি বেছে নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়, বলব, অসংখ্য ধন্যবাদ! এমনটা নয় যে আমি অন্য কোনও দলে যোগ দেব। আমার মনে হয়, ১০ বছর যথেষ্ট সময়।’’
আগামী দিনে দেশের রাজনীতির জন্য খুব খারাপ সময় আসতে চলেছে বলেও ইঙ্গিত করেন দেব। কিন্তু কেন? তাঁর কথায়, ‘‘২০১৪ সালে যখন রাজনীতিতে এসেছিলাম, তখন আর ২০২১-এর মধ্যে আকাশপাতাল ফারাক। রাজনীতি অনেক পাল্টে গিয়েছে। রাজনীতিতে এখন রাজ আছে কিন্তু নীতি হারিয়ে গিয়েছে। আদর্শ বলে আর কিছু অবশিষ্ট নেই।’’ এই প্রেক্ষিতেই তিনি তুলে ধরেন তাঁর সঙ্গে তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পর্কের কথা। দেব বলেন, ‘‘আমি শুধু একটা মানুষকেই ভালবাসি। তিনি হলেন মমতা’দি। তাঁর জন্যই আমি এত দিন পার্টিতে আছি। দিদি (মমতা)-কে অনেক বারই বলেছি। দিদির সঙ্গে আমার একটা অন্য সম্পর্ক। সেখানে দিদিকে ‘না’ বলা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।’’
করোনার সময় বিভিন্ন ভাবে মানুষকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন দেব। কখনও দুবাইয়ে আটকা পড়াদের দেশে ফেরানোর জন্য বিমান পাঠানো, কখনও আবার জীবনদায়ী ওষুধ জোগাড় করে দেওয়া। এই প্রসঙ্গেই দেব বলেন, ‘‘সাংসদ হিসেবে কিছু ক্ষমতা থাকে। মানুষের দরকারে তা ব্যবহার করেছিলাম। কখনও কখনও মনে হয়, কেন যে সাংসদ হলাম! না হলেই তো পারতাম। তার পরেই ভাবি, যদি সাংসদ না হতাম, তা হলে কি এই কাজগুলো করতে পারতাম?’’ এই প্রসঙ্গে ফের আসে মমতার কথা। দেব বলেন, ‘‘আমার এখনও মনে আছে, টোসিলিজুমাব ইঞ্জেকশনের জন্য দিদিকে ফোন করেছিলাম। রাজ্যে তিনটি টোসিলিজুমাব ইঞ্জেকশনের কোটা থাকে। একটি রাজ্যপালের, একটি নগরপালের এবং তৃতীয়টি মুখ্যমন্ত্রীর। ওঁদের কাছে ইমার্জেন্সির জন্য রাখা থাকে। সেখান থেকে দিদি আমাকে টোসিলিজুমাব ইঞ্জেকশন দিতে বলেছিলেন। এমন নয় যে আমি কোনও তারকার জন্য ওই ইঞ্জেকশনটা চেয়েছি। এক জন সাধারণ মানুষের জন্য দিদি ওটা করে দিলেন। উনি মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর যদি করোনা হয়, সে কথা ভেবেই রাখা থাকে। কিন্তু দিদি আমাকে বললেন, ‘দেব তুমি নিয়ে যাও। আমাকে নিয়ে চিন্তা করো না।’’’
তবে দেবের রাজনৈতিক যাত্রাপথ আগাগোড়াই এমনটা নয়। অ-জানা কথায় দেব অকপটে জানিয়েছেন সেই প্রসঙ্গও। প্রশ্ন ছিল, রাজনীতি না ছবি প্রযোজনা, কোনটা বেশি কঠিন? উত্তরে ঘাটালের তৃণমূল সাংসদ বলেন, ‘‘রাজনীতি বেশি কঠিন।’’ প্রথম বার ভোটে দাঁড়ানোর পর দেব প্রতিপক্ষ প্রার্থীর বাড়ি চলে গিয়েছিলেন। বলেছিলেন, ‘‘লড়াইটা রাজনীতির ময়দানেই সীমাবদ্ধ থাকুক, ব্যক্তির সঙ্গে ব্যক্তির নয়।’’ এই প্রসঙ্গে দেব শনিবার বলেন, ‘‘ফিল্মের চেয়ে রাজনীতির ময়দানে অভিনেতার সংখ্যা অনেক বেশি। আমি এমন দেখেছি যে, বোঝা যাচ্ছে না, উত্তম কুমার ভাল অভিনেতা নাকি ওঁরা! কখনও কখনও এটা বুঝতে গিয়েই মুশকিলে পড়ে যাই।’’
টিভিতে রাজনৈতিক খবর দেখে পরবর্তী প্রজন্মের শেখার কিছু নেই বলেও মন্তব্য করেন দেব। তাঁর কথায়, ‘‘নিউজ চ্যানেল দেখলে আমাদের বাচ্চারা বিগড়ে যাবে। কারণ ওটা থেকে কিছুই শেখার নেই। বাচ্চারা ভাববে, সকলেই মনে হয় চোর! আমার মনে হয় এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, যেখানে আমাদের পরের প্রজন্ম হয়তো টিভি-ই দেখবে না।’’ দেবের কথায়, ‘‘রাজনীতিতে সবাই জিততে চায়। কিন্তু কাউকে ছোট না করেও তো জেতা যায়! আমি এটাই প্রমাণ করার চেষ্টা করছি। এ বার একুশের ভোটে আমি যত সভা করেছি, সব জায়গায় বলেছি, মাস্ক যদি না পরে থাকেন, তা হলে আমার সভায় আসতে হবে না। এত বড় কথা সম্ভবত রাজনীতির মঞ্চ থেকে কেউ বলেননি। এমনকি আমার লোকেরাই বলেছে, দাদা এ সব কী বলছেন! আমি বলেছিলাম, আমাকে যদি ডাকেন, এ সব আমি বলবই। আপনার পছন্দ না হলে আমাকে ডাকবেন না। পরিষ্কার কথা।’’
শুধু নিজের কথাই নয়, সাধারণ কর্মীদের নিয়ে নিজের ভাবনা জানিয়েছেন দেব। বিধানসভা ভোটের আগে-পরে দলবদলের হিড়িক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘২০২১-এ যখন সবাই এদিক ওদিক যাচ্ছিল, ঘাটাল থেকে আমার কাছে কিছু মানুষ এসেছিলেন। জানতে চেয়েছিলেন, দাদা আপনি কোন দিকে যাচ্ছেন? আমি ওদের শুধু একটাই কথা বলেছিলাম। আমার উপর নির্ভর করে তোমরা রাজনীতি কোরো না। আমরা যাঁরা বড়লোক, বড় বড় নেতাদের সঙ্গে সম্পর্ক, তাঁদের কিছু হবে না। মার খাবে তোমরা। আমি ২০১৪ থেকে ২১ পর্যন্ত দেখেছি, সবাই নিজের সেটিং করে বসে আছে। শুধু আমরা তলার স্তরের কর্মীদের নিজেদের মধ্যে লড়িয়ে দিই।’’ দেব আরও বলেন, ‘‘বড় নেতারা সব সময় ভাল থাকেন। হেরে গেলে দল বদলে নেন। মার খেলেন কারা, যাঁরা নেতার উপর ভরসা করে দল বদল করলেন, সেই সাধারণ কর্মীরা। তাই আমি সব সময় বলি, নিজের রাজনীতিটা নিজের উপর নির্ভর করে করবেন, পরিবারের সঙ্গে কথা বলে করবেন। আমার ব্যক্তিগত ভাবে মনে হয়, বড় নেতারা নিজের স্বার্থ ছাড়া আর কাউকে দেখেন না।’’