Tollywood stuntmen

‘অ্যাকশন’! ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় বিপদের সঙ্গে পাঞ্জা, কেমন আছেন টলিপাড়ার স্টান্টম্যানেরা?

ইন্ডাস্ট্রিতে স্টান্টম্যানেরা সাধারণত প্রচারের আড়ালেই রয়ে যান। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অন্যকে পর্দায় ‘হিরো’ হিসেবে উপস্থাপন করাই তাঁদের পেশা। তাঁদের জীবন ও শিল্পীসত্তার অন্দর ঘুরে দেখল আনন্দবাজার অনলাইন।

Advertisement
অভিনন্দন দত্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০২৪ ০৮:১০
টলিপাড়ার স্টান্টম্যানরা কেমন আছেন?

টলিপাড়ার স্টান্টম্যানরা কেমন আছেন? গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

ঘটনা-১

Advertisement

‘মাইকেল’ ছবির শুটিং চলছে। সামনে নাসিরউদ্দিন শাহ। ফ্লাইওভারে একটা দ্রুত গতির মোটরবাইক পিছলে পড়ল। শট ঠিক হলেও সে বার চিত্ত কবিরাজের শরীরের একাধিক অংশ থেকে মাংস খুবলে বেরিয়ে এসেছিল।

ঘটনা-২

ইন্দ্রপুরী স্টুডিয়ো। ‘জয় বিজয়’ ছবিতে কাচের দরজা ভেঙে প্রবেশ করবেন চিরঞ্জিৎ। তাঁর বডি ডাবল বিমল রায় শট তো দিলেন। কিন্তু পিঠ কাচের টুকরোয় ফালাফালা! ৬৪টা সেলাই, পরবর্তী ২৫ দিনের ঠিকানা হাসপাতালের বিছানা।

ঘটনা-৩

পরিচালক স্বপন সাহার ছবির অ্যাকশন দৃশ্যে অনিচ্ছাকৃত ভাবেই অভিনেতা তাপস পালের কনুইয়ের ধাক্কা লাগে ফাইটার নরেশ সরকারের মেরুদণ্ডে। দু’বছর ঝুঁকে হাঁটতেন, কোমরের ব্যথা বয়েছেন ২৫ বছর। শেষ পর্যন্ত মাস দেড়েক আগে নরেশকে কোমরে অস্ত্রোপচার করাতে হয়েছে। বিগত এক বছর তিনি শয্যাশায়ী।

উপরে উল্লিখিত ঘটনাগুলি টলিপাড়ার দাপুটে ফাইটার বা ফাইট মাস্টারদের জীবনের অভিজ্ঞতা। ‘ফাইটার’, অর্থাৎ এখনকার ইন্ডাস্ট্রিতে যাঁদের পোশাকি নাম ‘স্টান্টম্যান’। এক সময়ের ‘ফাইট মাস্টার’ হয়ে গিয়েছেন ‘অ্যাকশন ডিরেক্টর’। সময়ের সঙ্গে বাংলা ছবিতে অ্যাকশনের মাত্রা কমেছে। কেমন আছেন ক্যামেরার নেপথ্যে প্রতিনিয়ত মৃত্যুকে আলিঙ্গন করা সেই মানুষেরা? বাণিজ্যিক মশলা ছবির সোনালি যুগে তাঁদের যে রমরমা ছিল, তা কি আর ফিরবে? বাংলা নববর্ষে তারই অনুসন্ধানে আনন্দবাজার অনলাইন।

A comparative analysis of the work culture of Tollywood Stuntmen

দেব ও রজতাভ দত্তের সঙ্গে ছবির শুটিংয়ে ফাইট মাস্টার চিত্ত কবিরাজ। ছবি: সংগৃহীত।

টালিগঞ্জের টেকনিশিয়ান স্টুডিও থেকে এগিয়ে ডান দিকের রাস্তা ধরে কিছুটা এগোলেই একটি আবাসন। নীচতলার এক কামরার ঘরটি স্টান্ট গিল্ড (মুভি স্টান্টমেন অ্যাসোসিয়েশন অফ ইস্টার্ন জ়োন)-এর বর্তমান ঠিকানা। ১৯৮৬ সালে তৈরি হলেও এনটি ওয়ান স্টুডিয়োতে অফিস পাওয়া গিয়েছিল ২০০০ সালে। মাঝে টেকনিশিয়ান স্টুডিয়ো হয়ে গত বছর থেকে স্থায়ী ঠিকানায় স্থানান্তর। সংগঠনের বর্তমান সম্পাদক চিত্ত কবিরাজ বললেন, ‘‘লোকের ভরসায় আর কত দিন থাকা যায়! তাই অনেক দিন ধরেই নিজেদের জায়গা চাইছিলাম। তার পর এই ঘরটা কেনা হল।’’

ইন্ডাস্ট্রিতে ১৬ বছরের অভিজ্ঞতা চিত্তের। বিভিন্ন ভাষা মিলিয়ে প্রায় ছ’শোর বেশি ছবিতে কাজ করেছেন। দাদার হাত ধরেই তাঁর এই পেশায় প্রবেশ। অ্যাকশন হিরোদের উত্থানের নেপথ্যে থাকেন অজানা কোনও স্টান্টম্যান। অথচ দর্শক তাঁদের চেনেন না। খারাপ লাগে না? হতাশ কণ্ঠে চিত্তের স্বীকারোক্তি, ‘‘একটু হলেও খারাপ তো লাগে! কিন্তু এটাই যে এই পেশার নিয়ম। আমরা নিরুপায়।’’

৬২ বছরের অভিজিৎ দাস এখনও স্টান্ট করছেন। ছবিতে অ্যাকশন দৃশ্যে নায়িকার হয়ে ডামি শট দেওয়ায় পারদর্শী। হেসে বললেন, ‘‘‘লাঠি’ থেকে ‘সাথী’— সব ছবিতে লেডিস ডামি করেছি। ছবি দেখলে দর্শক বুঝতেই পারবেন না যে, ওটা আমি।’’ এক সময়ে টলিপাড়ায় বাংলা নববর্ষে ছবির মহরত হত। অভিনেতাদের সঙ্গেই সেখানে ডাক পেতেন ফাইট মাস্টারেরা। এখন সেই সংস্কৃতি অতীত। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্টান্ট শিল্পী বললেন, ‘‘এখন তো যে যার মতো মহরত করে। আমরা দূরেই ভাল থাকি।’’ স্টান্টম্যান হওয়ার নেপথ্যে শিল্পীদের প্রেক্ষাপট বিভিন্ন। ইন্ডাস্ট্রির বর্ষীয়ান ফাইট মাস্টার বিমল রায় ক্যান্সারজয়ী। হেসে বললেন, ‘‘আমি তো ক্যারাটে সেকেন্ড ডান ব্ল্যাক বেল্ট। ক্যারাটে স্কুলেই মুম্বইয়ের একজন ফাইট মাস্টারের চোখে পড়ে যাই। তিনি আমাকে ‘মুলাকাত’ নামের একটা ভোজপুরি ছবিতে প্রথম সুযোগ দেন। দুঃখের বিষয়, সেই ছবিটা মুক্তি পায়নি।’’

A comparative analysis of the work culture of Tollywood Stuntmen

ছবির আউটডোরে চিরঞ্জিতের সঙ্গে অ্যাকশন করছেন বিমল রায়। ছবি: সংগৃহীত।

ইন্ডাস্ট্রিতে এক সময় কাজের অভাবে একাধিক ফাইটার পেশা পরিবর্তন করেছিলেন। আবার খোঁজ নিতে গিয়ে এই তথ্যও উঠে এল যে, এই পেশায় নেশা এবং নারীসঙ্গ বহু প্রতিভাবান শিল্পীর কেরিয়ার ধ্বংস করে দিয়েছে। কিন্তু চিত্তের দাবি, এখন সেই সমস্যা মিটে গিয়েছে। কারণ, ছোট থেকে বড়, প্রত্যেককে তিনি ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে কাজ দেওয়ার নিয়ম চালু করেছেন। বিগত কয়েক বছরে বাংলায় মুম্বই বা দক্ষিণী ইন্ডাস্ট্রি থেকে স্টান্টম্যান ও অ্যাকশন ডিরেক্টর নিয়ে আসার চল শুরু হয়েছে। এতে কি স্থানীয় শিল্পীদের ক্ষতি হচ্ছে? চিত্ত বললেন, ‘‘নিয়ম আছে, যত জন কাজ করবেন, তার মধ্যে ৫০ শতাংশ আমাদের থেকে লোক নিতে হবে।’’ এখন ‘খাদান’, ‘মির্জ়া’ বা ‘দেবী চৌধুরানী’র মতো অ্যাকশন-নির্ভর ছবি তৈরি হচ্ছে বলে কাজের পরিমাণও বেড়েছে বলে জানালেন তিনি। চিত্ত বললেন, ‘‘বাজেট কমাতে বাউন্সারদের মেকআপ করিয়ে অনেকে অ্যাকশন করাচ্ছেন! চোট-আঘাতের খবরও আমাদের কাছে আসে। সবাই সব পারলে তো সমাজটাই অন্য রকম হয়ে যেত!’’ জানা গেল, গিল্ডকে না জানিয়ে ‘সস্তায় পুষ্টিকর’ নীতি যাঁরা নিচ্ছেন, সেই সব নির্মাতাদের কাছে স্টান্ট গিল্ডের তরফে নোটিস পাঠানো হয়। চিত্তের যুক্তি, ‘‘টিকে থাকতে হলে নিজেদেরই পদক্ষেপ করতে হবে।’’

অতিমারির সময়ে কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে ছিলেন স্টান্ট শিল্পীরা। অনেকেই তখন বিকল্প পেশায় পা রাখেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্টান্ট শিল্পী বললেন, ‘‘যাঁদের জন্য এত প্রাণপাত করি, সেই অভিনেতারাই আমাদের জন্য তখন কিছুই করেননি। ১০-১৫ হাজার টাকায় সংসার চলে না! পেট চালাতে তাই অনেকেই তখন অন্য কাজ করেছে।’’ বর্ধমানের ৬০ বছর বয়সি আখতার শেখকে ইন্ডাস্ট্রি চেনে ‘বাপি’ নামে। ২৫ বছর স্টান্ট করার পাশাপাশি তিনি একজন ফলবিক্রেতাও। চিরঞ্জিৎ অভিনীত ‘মানুষ অমানুষ’ ছবিতে পারফর্ম করতে গিয়ে উচুঁ থেকে পড়ে ঘাড় বেঁকে গিয়েছিল তাঁর। কিন্তু ভালোবাসার তাগিদেই এখনও স্টান্ট ছাড়তে পারেননি। বললেন, ‘‘কী করব। আগেকার দিনে ইউনিয়ন ছিল না। অনেকেই কাজ করিয়ে টাকা দিতেন না। তাই অন্য ব্যবসা। কয়েক দিন আগে রাস্তা তৈরি হবে বলে আমার ফলের দোকানটাও ভেঙে দিয়েছে। এখন তো স্টান্টই ভরসা।’’ তবে শিল্পীদের থেকেই জানা গেল, অতিমারির সময়ে ইন্ডাস্ট্রির ফাইটারদের বাঁচিয়ে রেখেছিল বাংলা ধারাবাহিক। চিত্ত জানালেন, ‘‘এখন সিরিয়ালেও অনেক অ্যাকশন দৃশ্য থাকে। তাই ছবিতে অ্যাকশন কমে গেলেও, সিরিয়াল আমাদের ভাতের ব্যবস্থা করে দেয়।’’

A comparative analysis of the work culture of Tollywood Stuntmen

একটি ছবির শুটিংয়ে দেবশ্রী রায়ের বডি ডাবল অভিজিৎ দাস। ছবি: সংগৃহীত।

অল্প বয়সে স্টুডিয়ো পাড়ায় উত্তমকুমারকে গাড়ি থেকে নামতে দেখে তাঁর দিকে এগিয়ে গিয়েছিলেন সহকারী ফাইট মাস্টার নরেশ সরকার। কিন্তু নিরাপত্তাকর্মীরা ঘাড় ধাক্কা দিয়ে তাঁকে বার করে দেন। আবেগঘন কণ্ঠে নরেশ বললেন, ‘‘সেই দিন স্টুডিয়োর মাটি ছুঁয়ে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, এক দিন আমি এই লাইনেই করে খাব।’’ বিউটি পার্লারের কাজ ছেড়ে ফাইট মাস্টার খোকন সাহার অনুগ্রহে এক বছরের চেষ্টায় ফাইটার হন তিনি। কিন্তু অতিমারিতে কাজ না থাকায় উপার্জনের জন্য সিডি-ডিভিডির ব্যবসা শুরু করেন। ‘‘ফিল্ম লাইনে বড় বড় স্টারদের সঙ্গে কাজ করে রাস্তায় সিডি বিক্রি করছি! এ রকম অনেক অপমান সহ্য করেছি’’, গলা ধরে আসে নরেশের। কিন্তু অপমান সহ্য করেও আবার ফিরে গিয়েছেন স্টান্টের ঝুঁকি নিতে।

স্টান্ট শিল্পীদের যে কোনও দুর্ঘটনা বা অন্য কোনও সমস্যায় পাশে থাকে ফেডারেশন (ফেডারেশন অফ সিনে টেকনিশিয়ান্স অ্যান্ড ওয়ার্কার্স অফ ইস্টার্ন ইন্ডিয়া)। ফেডারেশনের সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাস বললেন, ‘‘যাঁরা ফেডারেশনের সদস্য, তাঁদের প্রত্যেকের জন্য ৫ লক্ষ টাকা বিমার ব্যবস্থা রয়েছে। তাঁদের যে কোনও সমস্যায় আমরা পাশে থাকার চেষ্টা করি।’’ স্টান্ট শিল্পীদের দাবি, কোনও ছবির শুটিং ৩০ দিনের হলে সেখানে তাঁদের কাজ থাকে মাত্র দুই থেকে তিন দিনের। ফলে দৈনিক ভিত্তিতে তাঁদের উপার্জন কম হয়। বিষয়টাকে পুরোপুরি অস্বীকার না করেই স্বরূপ বললেন, ‘‘আমি নিজে খুবই অসন্তুষ্ট। ইন্ডাস্ট্রির নির্মাতাদের কাছে একটাই আবেদন, তাঁরা আমাদের ছেলেদের প্রয়োজনে পরীক্ষা নিন। আমার বিশ্বাস, আমাদের ছেলেরা মুম্বই বা চেন্নাইয়ের শিল্পীদের থেকে কোনও অংশে কম নন।’’ ফেডারেশন সভাপতির মতে, নির্মাতাদের মানসিকতার উপরেও বিষয়টা নির্ভর করে। বাঙালি মানে ভাল মারপিট করতে পারবে না, এমন ধারণা নাকি অনেকেই পোষণ করেন। ইন্ডাস্ট্রির অন্য একটি সূত্রের দাবি, বাংলা মশলা-অ্যাকশন ছবিতে দক্ষিণী ছবির প্রভাব বেশি বলেই আজকাল চাহিদার ধরন বদলে গিয়েছে। অনেকেই নাকি ভিলেন বা গুন্ডাদেরও দক্ষিণী ছবির মতো চেহারা এবং গড়ন চাইছেন। বাঙালিদের চেহারা অন্য রকম। তাই অনেক সময় সুযোগ আসে না। স্বরূপের কথায়, ‘‘মুম্বই বা চেন্নাইয়ের তুলনায় এখানকার ফাইটারদের তো পারিশ্রমিকও কম। কিন্তু দু’জনেই সমান ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেন। দীর্ঘ দিন বিষয়টা নিয়ে আমি প্রতিবাদ করেছি।’’

A comparative analysis of the work culture of Tollywood Stuntmen

‘সমাধান’ ছবিতে প্রসেনজিতের সঙ্গে অ্যাকশন দৃশ্যে নরেশ সরকার। ছবি: সংগৃহীত।

এক সময় ‘রংবাজ’ , ‘চ্যালেঞ্জ ২’ , ‘লভেরিয়া’র মত সফল বাণিজ্যিক ছবি পরিচালনা করেছিলেন রাজা চন্দ। বিগত ৭-৮ বছরে অ্যাকশনধর্মী বাংলা ছবির সংখ্যা কমে গেল কেন? রাজার মতে, এতে অ্যাকশন ছবির কোনও দোষ নেই। বরং দর্শক এই ঘরানার ছবিকে কম প্রাধান্য দিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘দর্শকের চাহিদা মেনে প্রযোজক ও পরিচালকেরাও অ্যাকশন ছবি কম তৈরি করেছেন।’’ রাজা জনালেন, এক সময় চেন্নাই থেকে ফাইট মাস্টারদের আনা হত। পরে সেখানে মুম্বইয়ের শিল্পীদের প্রাধান্য বাড়ে। তবে পুরো বিষয়টি যে যথেষ্ট খরচসাপেক্ষ, তা জানাতে ভুললেন না পরিচালক। বাংলা থেকেও একই শিল্পীদের নেওয়া হত। কারণ, ভাল শিল্পীর সংখ্যা নাকি কম ছিল। রাজা বিশ্বাস করেন, ‘ফাইট’ এক ধরনের অভিনয়। তাঁর যুক্তি, ‘‘একই মুখের পুনরাবৃত্তিও দর্শকের অনীহার কারণ হতে পারে।’’ তবে বাংলায় এখন নতুন করে অ্যাকশনধর্মী ছবি তৈরি হচ্ছে বলে তিনি আনন্দিত। রাজা নিজেও সম্প্রতি ‘শপথ ২’ ছবির শুটিং শেষ করেছেন। সেখানে চেন্নাই থেকে ফাইট মাস্টার অনিয়েছিলেন পরিচালক। বললেন, ‘‘এখনও নিয়মিত আমার সঙ্গে ইন্ডাস্ট্রির স্টান্টম্যান এবং অ্যাকশন ডিরেক্টরদের যোগাযোগ রয়েছে।’’ ভবিষ্যতে অ্যাকশন ছবির সংখ্যা বাড়লে স্টান্ট শিল্পীদের কাজ বাড়বে বলে আশাবাদী পরিচালক।

অদম্য সাহস না থাকলে স্টান্টম্যান হওয়া সম্ভব নয়। খোঁজ নিয়ে জানা যাচ্ছে, এখন স্টান্ট পারফর্ম করার সময় শিল্পীরা অনেক বেশি সুরক্ষিত। প্রযুক্তির, বিশেষ করে ক্যামেরার উন্নতির সঙ্গে ছবিতে রোমহর্ষক স্টান্টের দাবি করছেন পরিচালকরা। অ্যাকশন ডিরেক্টরেরা সেই মতো নিজেদের ক্রমাগত উন্নত করার চেষ্টায় রয়েছেন। টলিপাড়ায় স্টান্ট গিল্ডের সদস্যসংখ্যা এখন ৭৮ জন। সপ্তাহে ২ দিন নিয়ম করে অভ্যাস, ছিপছিপে চেহারা রাখতে নিয়মিত ব্যায়াম ও সুষম আহার বাঞ্ছনীয়। কিন্তু নতুনদের মধ্যে এই পেশা নিয়ে সে রকম উৎসাহ নেই বলেই জানা যাচ্ছে। চিত্ত বললেন, ‘‘প্রতি বছর একশো ফর্ম দিই। কিন্তু ভাল ছেলে নেই। শেষে দেখি, ২-৩ জনকে পাওয়া যায়।’’ ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় আজকে অনেকেই আর পরবর্তী প্রজন্মকে ঠেলে দিতে চাইছেন না। কিন্তু পরিস্থিতি কঠিন হলেও এই পেশা ছাড়তে আগ্রহী নন, সে কথা অনেকেই জানালেন।

স্বয়ং সত্যজিৎ রায়, ফেলুদা-কাহিনি ‘বোম্বাইয়ের বোম্বেটে’ ও ‘মাস্টার অংশুমান’ গল্পে স্টান্টম্যানদের শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেছেন। ইন্ডাস্ট্রির অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে সেই মানুষগুলো খুব ভাল রয়েছেন কি? কেউ সিনেমাকে ভালবেসে, কেউ পেটের তাগিদে, কেউ বা আবার সাহসিকতায় ভর করে চলচ্চিত্র শিল্পের সব থেকে ঝুঁকিপূর্ণ পেশাকে আপন করে নিয়েছেন। চলার পথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে গিয়েছেন, আবার উঠে দাঁড়িয়েছেন। কিন্তু ছেড়ে যেতে পারেননি তাঁদের ‘ভালবাসা’কে। ইন্ডাস্ট্রির একাংশ যখন বাণিজ্যিক বাংলা ছবিকে পুনরায় স্বমহিমায় প্রতিষ্ঠা করতে বদ্ধপরিকর, তখন স্টান্ট শিল্পীরাও নিজেদের নতুন উদ্যমে প্রমাণ করার আশায় বুক বাঁধছেন।

আরও পড়ুন
Advertisement