শিশুশিল্পীর কথায়, প্রথম দিন রূপটান তোলার সময় যখন মাস্ক ধরে টেনেছিল তখন খুব ব্যথা পেয়েছিল সে। আস্তে আস্তে অভ্যস্ত হয়ে যায়। তখন আর তত লাগত না। তার পর স্পঞ্জ দিয়ে ঘষে ঘষে তোলা হত আঠা! প্রস্থেটিক রূপটানের কারণে বাড়তি ত্বকচর্চা রুটিনে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল কিয়ানার।
প্রস্থেটিক মেকআপ নিয়ে টানা শ্যুট করে কিয়ানা।
মাত্র ছয় বছরের একটি মেয়ে প্রস্থেটিক রূপটান নিয়ে অভিনয় করেছে! রোজ রূপটান নিতে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ত। রোজ ওই বিশেষ রূপটান তুলতে গিয়ে ঠোঁটের নীচে ছড়ে যেত তার। তখন চিৎকার করে কান্না। ‘‘আর শ্যুটে আসব না’’, কাঁদতে কাঁদতে জোর গলায় দাবি একরত্তির। পরের দিন হাসিমুখে ফের হাজির কিয়ানা মুখোপাধ্যায়! শ্যুটিং করবে সে। এ ভাবেই প্রীতম মুখোপাধ্যায়ের ‘রিষ’ সবার অজান্তে তৈরি করে ফেলেছে ইতিহাস। এ কথা পরিচালক নিজে জানিয়েছেন আনন্দবাজার অনলাইনকে। কাহিনি, চিত্রনাট্য, সংলাপ দেবারতি ভৌমিকের। ছবি-মুক্তি ১৩ মে।
যে সব অভিনেতা এই বিশেষ রূপটান নিয়েছেন, তাঁরা জানেন এর কত হ্যাপা। বিশেষ রূপটান নিতে যতটা সময় লাগে, তা তুলতে আরও কষ্ট। প্রীতমের ছবিতে কিয়ানা ‘ফিওনা রায়’। মুখ্য আকর্ষণ ‘ফিওনা’-র উপরেই অশুভ শক্তি ভর করবে। তখনই বদলে যাবে তার চেহারা। রোজ তাকে সেই রূপটানে সাজিয়ে দিতেন নিভাস মণ্ডল। রূপটান সম্বন্ধে আনন্দবাজার অনলাইনকে কিয়ানা নিজে জানিয়েছে, অনেকটা মাস্কের মতো। আঠা দিয়ে আটকানো যায়। সে সব তার মুখে, হাতে-পায়ে আটকে দেওয়া হত। পর্দার ফিওনার দাবি, ‘‘যে দিন যে দিন ভূতের দৃশ্য থাকত সে দিনই আমায় এ রকম সাজতে হত। এতটা সময় লাগত যে, আমি ঘুমিয়েই পড়তাম! ঘুম থেকে উঠে দেখতাম, ভূত হয়ে গিয়েছি।’’
এই সাজের সৌজন্যে কিয়ানার চোখ সাদা। অর্থাৎ, চোখের মণি নেই। গায়ের মাংস ঝলসে গেলে যেমন দেখতে লাগে ঠিক সে ভাবে কুঁচকে যেত চামড়া। ঠোঁটগুলো কালো কালো। সে চেহারা ভয়ানক। কিন্তু ওই সাজটাই নাকি বেশি প্রিয় ছিল কিয়ানার। কেন? ‘‘আমায় দেখে সবাই ভয় পাচ্ছে। কেউ চিনতে পারছে না। আমি তাই মজা পাচ্ছি’’, দাবি তার। তবে রূপটানের পরে গরমে হাঁসফাঁস করত সে। শিশুশিল্পীর কথায়, প্রথম দিন রূপটান তোলার সময় যখন মাস্ক ধরে টেনেছিল তখন খুব ব্যথা পেয়েছিল সে। আস্তে আস্তে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছিল এতেই। তখন আর তত লাগত না। তার পর স্পঞ্জ দিয়ে ঘষে ঘষে তোলা হত আঠা!
প্রস্থেটিক রূপটানের কারণে বাড়তি ত্বকচর্চা রুটিনে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল কিয়ানার, জানিয়েছেন পরিচালক। তাঁর বক্তব্য, ‘‘প্রথম দিন রূপটান তোলার পরেই ঠোঁটের নীচের চামড়া উঠে গিয়ে দগদগে অবস্থা। টের পেতে দিইনি কিচ্ছু। তা হলে ভয় পেয়ে আর শ্যুট করবে না। নিয়মিত ওষুধ লাগানো হত। দু-তিন দিন বিশ্রাম দেওয়া হয়েছিল। আস্তে আস্তে অভ্যস্ত হয় কিয়ানা।’’ শুধু রূপটান নিয়েই ক্ষান্ত হয়নি সে। দোতলা সমান উঁচু বাড়ির ছাদ থেকে ঝুলিয়ে দেওয়া হত তাকে। সেই অবস্থায় শট দিয়েছে। তখনও কি কিয়ানা অনায়াস? পরিচালকের কথায়, ‘‘তখন ভয় পেত। কেঁদেও ফেলেছে অনেক সময়। আবার নিজেই সাহস করে অভিনয় করেছ। এই সময়গুলোয় কিয়ানা খুঁজত নিজের বাবাকে।’’