প্রচারের পথে পায়েল। নিজস্ব চিত্র
স্টার্ট সাউন্ড, লাইট, ক্যামেরা, অ্যাকশন নেই। আবার আছেও। ডিরেক্টরও নেই, আবার আছেন!
বেহালা পূর্ব কেন্দ্রের প্রার্থী পায়েল সরকারের সাংবাদিক সম্মেলন শুরু হব-হব করছে। আগের রাতেই পায়েলের প্রচারসঙ্গী যুবককে পিছন থেকে কারা মাথায় বাড়ি মেরেছে বলে অভিযোগ। ম্যান্টনের এক অতিথিশালায় বিজেপি-র নতুন কার্যালয়ে হিন্দি, ইংরেজি মেশা বাংলায় রাজনীতিতে নবাগতাকে
উসকে দিচ্ছেন দলের ‘কারিয়াকর্তা’, এক পুরুষ ও মহিলা।
“বি থোড়া সেন্টিমেন্টাল অ্যান্ড অ্যাগ্রেসিভ! আপ কা গুসসা, টিয়েমসি পে দিখনা চাহিয়ে। মেরে ভাই কা উপর হামলা হুয়া হ্যায়। চুনৌতি লেকে বাতে কিজিয়ে। বাংলার মেয়ে ইসুটা আছে, না।” পায়েল অবশ্য ক্যামেরার সামনে কোনও দলের নাম করলেন না। কিন্তু ‘আমরা ঠিক রাস্তায় আছি’ বা ‘ভালই বোঝা যাচ্ছে, কাদের পায়ের তলার মাটি সরে গেছে’ বাক্যেই প্রতিপক্ষের দিকে তির ঘুরিয়ে দিলেন।
বছর ১৪ আগে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের এমএ পায়েল কলেজেও রাজনীতি করেননি। ভোট-ময়দানের পিচে ব্যাটিং প্রসঙ্গে বলছিলেন, “রাজনীতিতে এমন পরিস্থিতিতে পড়ছি, যখন ভাবার উপায় থাকে না। অনেকেই অনেক কিছু বলছেন। কিন্তু যা বলছি আবেগেই বেরোচ্ছে! অভিনয় নয়।”
যেমন দোলে মদন মিত্রের বিজেপি-বিরোধী গানের সঙ্গে শ্রাবন্তী, তনুশ্রী, পায়েলদের নাচ নিয়ে বিতর্ক। দলের কর্মীদের আবেগ বুঝে পায়েল তখনও সোজা ব্যাটেই খেলেছেন। হুট করে তৈরি হওয়া জটিল পরিস্থিতি বুঝতে পারেননি, কবুল করায় ইতিবাচক বার্তাই গিয়েছে, অভিমত সঙ্গী ভোটকুশলীদের।
তিনি যে বেহালার এই কেন্দ্রে শোভন চট্টোপাধ্যায়ের একদা খাস তালুকে শোভনেরই স্ত্রী রত্নার বিরুদ্ধে দাঁড়াবেন (যাঁর বিরুদ্ধে শোভন প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন), তাও পায়েল জানতেন না। না-জানতেন স্থানীয় বিজেপি কর্মীরা! এত নতুন লোকের সঙ্গে পরিচয় তাঁর এই যুদ্ধে প্রথম পদক্ষেপ। কর্মীদেরও খানিক জড়তা রয়েছে। পায়েল বলছেন, “এত বড় পার্টি ব্যক্তিগত ভাবে চিনতে সময় তো লাগবে।” দুপুরে সাধারণত ইএম বাইপাসের ধারে আবাসনের ফ্ল্যাটে ফিরছেন পায়েল। আবার প্রচারের ফাঁকে কোনও কর্মীর বাড়ি মাটিতে বসে ভাত, ডাল, আলুভাজারও খোঁজ করছেন প্রার্থী।
বিজেপিতে তিনি যোগ দিয়েছেন গত ২৫ ফেব্রুয়ারি। এর পরেই কলকাতার কঠিন কেন্দ্রের প্রার্থী। পায়েল বলছেন, “এটা তো কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত। কেউ রাগলে বা কষ্ট হলে আমার সহানুভূতি আছে।” এই পায়েলকেই কয়েক বছর আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একুশে জুলাইয়ের মঞ্চে দেখা গিয়েছে। তাঁর কথায়, “এক জন মহিলা মুখ্যমন্ত্রী, মনে হয়েছিল বদল আনছেন। ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদীকে দেখে দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাল।” পিছনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর ছবিতে সাজানো ফ্লেক্স। পায়েল বলেন, “মোদীজির ছক-ভাঙা সিদ্ধান্তই আকর্ষণ করে। ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ একটা সাহস, প্রেরণা! আবার কাশ্মীরে ৩৭০ লোপ, সিএএ ঘোষণায় বিরোধিতা হবে জেনেও সাহসী সিদ্ধান্ত!”
নিন্দুকে বলছে, মিমি, নুসরত সাংসদ হওয়ার পরেই বিজেপি-র বেশির ভাগ তারকা প্রার্থীরই ভোট-টিকিটে লক্ষ্য ছিল। এ সবে আমল দিতে চান না পায়েল। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী রত্নার প্রচারে হরিদেবপুরে রোড-শোয়ে যাচ্ছেন তৃণমূল সাংসদ নুসরত জহান। পায়েল হেসে বলছেন, “রাজনীতি আর ব্যক্তিগত সম্পর্ক আলাদা।”
প্রচারের বিরতি কাটিয়ে মে-তে ফের শুটিংয়ে ফিরবেন অভিনেত্রী। আপাতত বেহালা পূর্ব কেন্দ্রের জলকষ্ট আর তোলাবাজির সমস্যাই তাঁর চিত্রনাট্য। প্রচারে জেলাতেও যাচ্ছেন। হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশের অভিভাবকপ্রতিম নেতারা তাঁকে ঘিরে।
স্যান্ডউইচে মধ্যাহ্নভোজ সেরে বিকেলে রায়বাহাদুর রোডে প্রচারে দেখা গেল পায়েলকে। ছিমছাম সালোয়ার কামিজে খোলা জিপে হাত নাড়ছেন। তারকা প্রার্থীর ঠোঁটে ‘সোনার বেহালা পূর্ব’ গড়ার সংলাপ।