Lok Sabha Election 2024

গনি পরিবারের ভোট ভাগে ফুটেছিল পদ্ম, সেই অঙ্কই কি বজায় থাকবে? উত্তরের খোঁজে রয়েছে মালদহ উত্তর

অখণ্ড মালদহের দীর্ঘ দিনের সাংসদ ছিলেন গনি খান চৌধুরী। এর পরে মালদহ উত্তর আসনেও গনি পরিবারের উপস্থিতি ছিল বরাবর। এই প্রথম বার লোকসভা নির্বাচনে গনি পরিবারের কেউ প্রধান তিন পক্ষের প্রার্থী নন।

Advertisement
পিনাকপাণি ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ মে ২০২৪ ২০:০৫
What is the political situation of Maldaha Uttar constituency before Lok Sabha Election 2024

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

মালদহ উত্তর লোকসভা আসন বয়সে বেশ ছোট। ২০০৯ সালে জন্ম। সে বারের লোকসভা ভোটের সময় সাবেক মালদহ আসন ভেঙে উত্তর ও দক্ষিণ মালদহ আলাদা আলাদা কেন্দ্র হয়। রাজ্য রাজনীতিতে মালদহ আসন একটা সময় পর্যন্ত কংগ্রেস নেতা ‘গনি খানের আসন’ হিসাবেই পরিচিত ছিল। ১৯৮০ সাল থেকে টানা আট বার জিতে আমৃত্যু মালদহের সাংসদ ছিলেন তিনি। ইন্দিরা গান্ধী থেকে রাজীব গান্ধী মন্ত্রিসভায় গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রক সামলেছেন। দেশের রেলমন্ত্রীও থেকেছেন আবু বরকত আতাউর গনি খান চৌধুরী।

Advertisement

বয়সজনিত কারণে গনি প্রয়াত হন ২০০৬ সালের ১৪ এপ্রিল। এর পরে উপনির্বাচনে ওই আসন থেকে জেতেন গনির ভাই আবু হাসেম খান চৌধুরি (রাজ্য রাজনীতিতে ‘ডালু’ নামে বেশি পরিচিত)। ২০০৯ সালে আসন ভাগ হলে ডালু চলে যান মালদহ দক্ষিণ আসনে। সেখান থেকে পর পর তিন বার জিতেছেন তিনি। আর মালদহ উত্তরে কংগ্রেস গনি তথা ডালুর ভাগ্নি মৌসম নুরকে প্রার্থী করে। ২০০৯ এবং ২০১৪ সালে কংগ্রেসের টিকিটে সংসদে যান মৌসম।

তবে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূলে যোগ দেন মৌসম। সে বার ঘাসফুলের টিকিট পান। কংগ্রেস প্রার্থী করে ডালুপুত্র অর্থাৎ মৌসমের মামাতো ভাই ইশা খান চৌধুরীকে। তিনি এ বার মালদহ দক্ষিণে বাবার আসনে প্রার্থী হয়েছেন। তবে ২০১৯ সালে ইশা দিদির জয়ের পথে ‘কাঁটা’ হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। সেই কাঁটার কাটাকুটিতে ৫,০৯,৫২৪ ভোট পেয়ে জয়ী হন বিজেপির খগেন মুর্মু। মৌসম এবং ইশা যথাক্রমে ৪,২৫,২৩৬ এবং ৩,০৫,২৭০ ভোট পান। এই ফলাফল থেকেই স্পষ্ট ছিল যে, গনি পরিবারের ভোট ভাগ হয়েই বিজেপির জয়ের পথ প্রশস্ত হয়েছিল। ২০১৪ সালে সিপিএম প্রার্থী হিসাবে মৌসমের কাছে হেরে যাওয়া খগেন বিজেপির টিকিটে ২০১৯ সালে জয়ী হন।

What is the political situation of Maldaha Uttar constituency before Lok Sabha Election 2024

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

২০১৯ সালে সিপিএম এই আসনে পেয়েছিল ৫০ হাজারের কিছু বেশি ভোট। তখন কংগ্রেসের সঙ্গে তাদের জোট ছিল না। এ বার জোটের প্রার্থী প্রবীণ কংগ্রেস নেতা মোস্তাক আলম। তিনিও গনির সঙ্গে কাজ করেছেন। দু’বার মালদহ উত্তরেরই অন্তর্গত হরিশচন্দ্রপুর থেকে কংগ্রেসের টিকিটে বিধায়ক হয়েছেন। তৃণমূল মৌসমকে টিকিট না দিয়ে প্রার্থী করেছে প্রাক্তন পুলিশকর্তা প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়কে। তবে বিজেপি খগেনকেই রেখেছে। রাজ্যের অধিকাংশ এলাকায় তৃণমূল-বিজেপি আড়াআড়ি লড়াই হলেও এই আসন ধরে রাখার ব্যাপারে ‘আশাবাদী’ কংগ্রেস। পক্ষান্তরে, খগেনের হয়ে প্রচার করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। আবার আসন ফিরে পাওয়ার লক্ষ্যে তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও প্রসূনের হয়ে প্রচারে নেমেছেন। লক্ষণীয় ভাবে, এই প্রথম এই আসনে গনি পরিবারের কোনও সদস্যকেই প্রার্থী করেনি প্রধান যুযুধান তিন পক্ষ। কারণ, মনে করা হচ্ছে, গনির প্রয়াণের ১৮ বছর কেটে যাওয়ায় তাঁর পরিবারের প্রতি আনুগত্য ফিকে হয়ে এসেছে। সেই ভোট কোন দিকে যাবে, তার উপর অনেকটা নির্ভর করছে বিজেপির ‘প্রত্যাবর্তন’ এবং তৃণমূলের হারানো আসন ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা।

আরও পড়ুন
Advertisement