(বাঁ দিকে) শুভেন্দু অধিকারী। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। — ফাইল চিত্র।
মানুষকে ‘প্রতারণা’ করার জন্য অসত্যভাষণ করেন। কেন্দ্রীয় বরাদ্দের বিষয়েও তাঁর জ্ঞান সীমিত। দলের এক্স (সাবেক টুইটার)-এ পোস্ট করে এ ভাবেই রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে আক্রমণ করল তৃণমূল। জানাল, গত তিন বছরে আবাস যোজনায় কেন্দ্রীয় বরাদ্দ মঞ্জুর না হওয়া সত্ত্বেও ‘অসত্য’ দাবি করছেন শুভেন্দু। যুক্তি দিতে বিভিন্ন তথ্যও তুলে ধরেছে শাসকদল। ১০০ দিনের কাজের টাকা কেন আটকে, তা নিয়েও সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর জবাব চাইল তৃণমূল। গত কয়েক দিন ধরে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যে প্রশ্ন তুলে আসছেন, এ বার সেটাই তৃণমূলের পক্ষে করা হল।
সম্প্রতি অভিষেক এক জনসভায় দাবি করেছিলেন, বাংলায় বিধানসভা ভোটে হেরে যাওয়ার পর ১০ পয়সাও দেয়নি কেন্দ্র। সেই বক্তব্য তুলে ধরে শুভেন্দু দাবি করেন, ২০২১-২২ অর্থবর্ষে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা-গ্রামীণের অধীনে প্রথম কিস্তি হিসাবে ৬৮৭,৮৩,৯৮,৮৫০ টাকা দিয়েছিল কেন্দ্র। প্রমাণ হিসাবে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের একটি চিঠিও তুলে ধরেন তিনি। তৃণমূল রবিবার সমাজমাধ্যমে জানাল, শুভেন্দুর সেই দাবি ভুল। কেন, তা-ও জানাল তারা।
তৃণমূল জানিয়েছে, দু’ভাগে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা-গ্রামীণ প্রকল্প কার্যকর হয়েছে। প্রথম বার ২০১৬-১৭ অর্থবর্ষ থেকে ২০২১-২২ অর্থবর্ষে কার্যকর হয়। সে সময় যাঁরা অপেক্ষমান তালিকায় ছিলেন, তাঁদের নিয়ে সুবিধাপ্রার্থীদের তালিকা তৈরি করা হয়। দ্বিতীয় বার ২০২২-২৩ থেকে। ২০১৮-১৯ সালে যে সমীক্ষা করা হয়েছিল, তার ভিত্তিতেই দ্বিতীয় বার আবাসের টাকা মঞ্জুর করা হয়। এর পর শুভেন্দুর পোস্ট করা কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের চিঠির প্রসঙ্গ তুলেছে তৃণমূল। তার মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের সচিবের লেখা অন্য একটি চিঠির কথা উল্লেখ করেছে। তৃণমূল জানিয়েছে, কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের সচিব ২০২৩ সালের ৪ ডিসেম্বর চিঠি দিয়ে ৬৮৭,৮৩,৯৮,৮৫০ টাকা বরাদ্দের কথা জানিয়েছেন। তবে তিনি এ-ও জানিয়েছিলেন, ২০২১ সালের আগে প্রথম দফায় যে সব বাড়ি নির্মাণ শেষ হয়নি, তার জন্য বরাদ্দ করা হয়েছিল সেই টাকা। অর্থাৎ নতুন কোনও প্রার্থী সেই টাকা পাননি। তৃণমূল আরও জানিয়েছে, তার পর আর কোনও অর্থ পাঠায়নি কেন্দ্রীয় সরকার। তাই এই নিয়ে বিতর্কের আর কোনও অবকাশ নেই।
এর পরেই তৃণমূলের তরফে বলা হয়েছে, ‘‘আমরা প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করছি, এর পর বাংলায় সৌজন্য সফরে এলে অনুগ্রহ করে স্পষ্ট করবেন যে, ১০০ দিনের কাজের ৫৯ লক্ষ কর্মীর টাকা দেওয়া কেন বন্ধ করা হল! এবং আবাস যোজনার অধীনে ২০২১-২২, ২২-২৩ এবং ২৩-২৪ অর্থবর্ষে কত অনুদান মঞ্জুর করেছে কেন্দ্রীয় সরকার, তার শ্বেতপত্রও প্রকাশ করবেন।’’ এর পর তৃণমূলের তরফে আবার অভিষেকের জনসভায় বিতর্কের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বিজেপির প্রতিনিধিদের। এক্সে জানানো হয়েছে, ‘‘সোমবার অভিষেক বালুরঘাটে জনসভা করবেন। মঞ্চে বিতর্কের জন্য আপনাদের আমন্ত্রণ জানালাম। খোলা চ্যালেঞ্জ। সাহস থাকলে চ্যালেঞ্জ নিন।’’
এক জনসভায় অভিষেক আবাস যোজনার টাকা নিয়ে কেন্দ্রকে একহাত নেন। তিনি দাবি করেন, ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে বিজেপি হেরে যাওয়ার পর বরাদ্দ বন্ধ করে কেন্দ্রীয় সরকার। অভিষেকের কথায়, ‘‘অমিত শাহ বলেছেন, বাড়ির টাকা পাঠিয়েছি। চ্যালেঞ্জ করছি, শ্বেতপত্র যদি প্রকাশ করতে পারে যে, বাংলায় হেরে যাওয়ার পর তিন বছরে ১০ পয়সা দিয়েছে, আমি রাজনীতির আঙিনায় পা রাখব না। এই চ্যালেঞ্জ করে গেলাম। বুকের পাটা থাকলে, এক বাপের বেটা হলে গ্রহণ করে দেখাবে।’’ তার পরেই এক্সে শুভেন্দু অভিষেকের সেই বক্তব্য তুলে ধরে পাল্টা আঙুল তোলেন। তিনি লেখেন, ‘‘এই স্বভাব মিথ্যুক তোলামূল দলের মিথ্যুক প্রধানকে অনুকরণ করছেন।’’ তার পরেই তিনি দাবি করেন, ২০২১ সালের বিধানসভার পরেই ২০২১-২২ অর্থবর্ষে আবাস যোজনার অধীনে পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে প্রথম কিস্তি হিসাবে ৬৮৭ কোটি ৮৩ লক্ষ ৯৮ হাজার ৮৫০ টাকা দিয়েছিল কেন্দ্র। এক দিন পরে সেই দাবি নস্যাৎ করল তৃণমূল। শুভেন্দুকে পাল্টা ‘মিথ্যুক’ বলে দাবি করল।