র্যাম্পে হাঁটলেন তৃণমূলের প্রার্থীরা। — নিজস্ব চিত্র।
ব্রিগেডে অনেক সমাবেশ দেখেছে কলকাতা। রাজনৈতিক ব্রিগেড তো বটেই গীতাপাঠের ব্রিগেডও দেখেছে। দেশের প্রায় সব প্রধানমন্ত্রীই সভা করেছেন এই ময়দানে। কিন্তু এমন চেহারার মঞ্চ অতীতে দেখা যায়নি। আবার প্রার্থিতালিকা ঘোষণার পরেই সেই মঞ্চে তৈরি র্যাম্পে টিকিট প্রাপকদের ‘র্যাম্প ওয়াক’ও দেখেনি বাংলা তথা গোটা দেশ। রবিবার এক অন্য ব্রিগেড দেখাল তৃণমূল। অতীতে তৃণমূলও এ ভাবে নির্বাচন ঘোষণার আগে একসঙ্গে সব আসনের প্রার্থিতালিকা ঘোষণা করেনি। তাই অনেক কিছুই নতুন দেখালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আরও স্পষ্ট করে বললে, তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। কারণ, এই সভা আয়োজনের প্রধান দায়িত্বেই ছিলেন তিনি।
বাংলায় বরাবরই রাজনৈতিক শক্তিপ্রদর্শনের ভূমি হয়েছে ব্রিগেড। এই ময়দানেই ১৯৫৫ সালে সোভিয়েত রাশিয়ার তৎকালীন প্রধান নিকোলাই বুলগানিন এবং রুশ কমিউনিস্ট পার্টির প্রধান নিকিতা ক্রুশ্চেভকে সংবর্ধনা দেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু। আবার ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ গঠনের পরে ইন্দিরা গান্ধী এবং মুজিবুর রহমানের সমাবেশও ব্রিগেডে ইতিহাস তৈরি করে। তার আগে ১৯৬৯ সালে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় সরকার গড়ে ব্রিগেডে বিজয় উৎসব পালন করে যুক্তফ্রন্ট। বাম জমানার শেষে ২০১১ সালে ব্রিগেডেই তৃণমূলের শহিদ দিবসের সমাবেশ করেছিলেন মমতা।
ইতিহাস আরও রয়েছে। এই ময়দানেই জরুরি অবস্থার বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক বক্তৃতা করেন জয়প্রকাশ নারায়ণ। আবার ১৯৮৮ সালে ব্রিগেডে নতুন ইতিহাস তৈরি করে একই মঞ্চে বিশ্বনাথপ্রতাপ সিংহ, জ্যোতি বসু, অটলবিহারী বাজপেয়ী হাতে হাত ধরেছিলেন। গত লোকসভা নির্বাচনের আগে বিরোধী জোটের নেতাদের নিয়ে এখানেই সমাবেশ করেছিল তৃণমূল।
রবিবার জনসমাবেশ ভালই হয়েছিল। তৃণমূল অতীতেও এমন সমাবেশ করেছে। দলীয় কর্মী-সমর্থকেরা মমতার কথা শুনেছেন। এ বার দেখতেও পেলেন অনেক কিছু। ব্রিগেড মানেই বড় মঞ্চ। রবিবারও তেমন ছিল। লম্বায় ৭২ ফুট, গভীরতায় ২০ ফুট। আর মাটি থেকে ১২ ফুট উপরে মূল মঞ্চ। পাশে দু’টি তুলনামূলক ছোট মঞ্চ ৬৮ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ২৮ ফুট প্রস্থের। এ সবের সঙ্গে মূল মঞ্চের সামনে ছিল ৩৩০ ফুট লম্বা র্যাম্প ইতিমধ্যেই তাক লাগিয়ে দিয়েছে। যেটা সাধারণত দেশ-বিদেশের কনসার্টে দেখা যায়। কিন্তু সেটা প্রথম বার দেখা গেল কোনও রাজনৈতিক সভায়।
ওই র্যাম্প ব্যবহার করলেন মমতা, অভিষেক। বক্তৃতা করতে করতেই অভিষেক র্যাম্পে হাঁটলেও মমতা তা করেননি। তিনি প্রথমে র্যাম্পে হেঁটে কর্মী, সমর্থকদের কাছাকাছি যান তার পরে মূল মঞ্চে এসে বক্তৃতা। আর সেখান থেকেই ঘোষণা করেন, র্যাম্পে হাঁটবেন তৃণমূলের ৪২ প্রার্থী।
তৃণমূল সাধারণত প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন নির্ঘণ্ট ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই। কিন্তু সেই রীতি ভেঙে ২০২৪ সালের দিল্লিবাড়ির লড়াইয়ে অন্য ‘খেলা’ দেখাল তৃণমূল। সেটাও আবার নাটকীয় ভাবে। কোচবিহার থেকে শুরু করে একে একে আসন ধরে ধরে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা হয়েছে আর সভার বড় বড় পর্দায় তাঁদের নাম ও ছবি ভেসে উঠেছে। মমতা নন, এই প্রথম বার লোকসভা নির্বাচনের প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করলেন অভিষেক। এবং সেটাও নাটকীয় ভাবে সকলের পরিচয় দিতে দিতে। থামলেন ডায়মন্ড হারবার আসনের সময় এসে। নিজেই যে প্রার্থী সেখানে! ঘোষণা করলেন না। কাছেই দাঁড়িয়ে থাকা রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস অভিষেকের তুলনায় দ্বিগুণ উৎসাহ নিয়ে গলার স্বর পঞ্চমে তুলে ঘোষণা করলেন দলের সেনাপতির নাম।
এর পরে প্রবীণ সৌগত রায়, কাকলি ঘোষ দস্তিদার থেকে তরুণ দেবাংশু ভট্টাচার্য, মুকুটমণি অধিকারীরা র্যাম্পে হাঁটলেন। সেই ‘র্যাম্প ওয়াক’-এ দেখা গেল ২২ গজের প্রাক্তন অলরাউন্ডার ইউসুফ পাঠান, অভিনেত্রী রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়, সায়নী ঘোষদের। দেখা গেল ধুতি পরিহিত সৌগতের সঙ্গে সানগ্লাস পরা মহুয়া মৈত্রকে। প্রবীণ অভিনেতা শত্রুঘ্ন সিন্হার হাত ধরলেন প্রাক্তন ক্রিকেটার কীর্তি আজাদ। আর সবার সামনে সামনেই হাঁটলেন দলনেত্রী মমতা।