(বাঁ দিকে) শুভেন্দু অধিকারী। দেব (ডান দিকে)। —গ্রাফিক শৌভিক দেবনাথ।
ভোটের ৪৮ ঘণ্টা আগে ঘাটালে গরু নিয়ে তরজায় নামল বিজেপি-তৃণমূল। তরজায় নামলেন দুই অভিনেতা- প্রার্থী দেব এবং হিরণ। বৃহস্পতিবার সকালে শুরুটা করেছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তা উস্কে দিয়েছিলেন ঘাটালের বিজেপি প্রার্থী হিরণ চট্টোপাধ্যায়। নিশানায় তৃণমূল প্রার্থী দীপক অধিকারী তথা দেব। বেলা গড়াতে ঘাটালের মাঠে পাল্টা নামলেন দেব। নিশানা করলেন শুভেন্দুকে। সঙ্গে জুড়ে দিলেন হিরণকেও।
সকালে তাঁর এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে একটি পোস্ট করেছিলেন শুভেন্দু। তার ক্যাপশন ছিল ‘দেবের কীর্তি’। তাতে দেখা যাচ্ছে, ‘আরণ্যক ট্রেডার্স’ নামে একটি সংস্থার লেজ়ার অ্যাকাউন্ট। তার উপরে রয়েছে অন্য একটি সংস্থার নাম। তার শুধুমাত্র ‘ভেনচার্স প্রাইভেট লিমিটেড’ অংশটি শুভেন্দুর পোস্টে দৃশ্যমান। পুরো নাম স্পষ্ট নয়। ওই লেজ়ার অ্যাকাউন্টের তথ্য অনুযায়ী, ‘আরণ্যক ট্রেডার্স’ থেকে ‘ভেনচার্স প্রাইভেট লিমিটেড’ লেখা সংস্থার আইসিআইসিআই ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্টে ২০১৬ সালের ২৪ এবং ২৫ নভেম্বর ২৫ লক্ষ টাকা করে মোট ৫০ লক্ষ টাকা জমা পড়েছে। অন্য একটি জায়গায় দেখা যাচ্ছে, একটি ডায়েরির পাতায় হাতে লেখা ‘দেব মোবাইল: ৭২ হাজার টাকা’ এবং ‘দেব ঘড়ি: ৪ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা’। পাশেই একটি পাতায় ছাপানো অক্ষরে ইংরেজিতে লেখা ‘দেব মোবাইল অ্যান্ড দেব ওয়াচ’। ডায়েরির পাতায় উল্লিখিত পরিমাণ অর্থের উল্লেখ রয়েছে ছাপা অক্ষরের পৃষ্ঠাটিতেও (কোনও নথিরই সত্যতা আনন্দবাজার অনলাইন যাচাই করেনি)।
শুভেন্দু দাবি করেন, যে ডায়েরির পাতা তিনি পোস্ট করেছেন, তা এনামুল হকের। এনামুল গরু পাচার মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত। আবার হিরণ দাবি করেছেন, ‘আরণ্যক ট্রেডার্স’ এনামুলেরই সংস্থা। এনামুলের সংস্থা থেকে দেবের সংস্থার অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকেছিল।
তার কিছু পরেই পাল্টা দেব শুভেন্দুর পোস্টটি উল্লেখ (মেনশন) করে একটি পোস্টার পোস্ট করেছেন নিজের এক্স হ্যান্ডলে। তার উপরে লেখা, ‘পিন্টু মন্ডল নিবেদিত গীত-সঙ্গীত পরিবার’। তাতে বলিউডের অভিনেতা গোবিন্দ, বাংলাদেশের ফিরদৌস, অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত-সহ অনেকের সঙ্গে হিরণেরও ছবি রয়েছে। সেটি পোস্ট করে দেব লেখেন, ‘‘ও শুভেন্দুদা, তুমি নাকি কোথায় মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখছ, হিরণের পাল্লায় পড়ে তোমাকে তো কাউন্সিলরে নামিয়ে দিচ্ছে। ভালবাসি বলে বললাম, আমিও জানি তুমি আমাকে ভালবাসো। আর রইল কথা গরু চুরির টাকা, তোমার কোলের ছেলে হিরো হিরণ, সে-ও পিন্টু মন্ডলের থেকে টাকা নিয়েছে, তা হলে উনিও...।’’ পৃথক একটি পোস্টে দেব লিখেছেন, ‘‘তা হলে উনিও কি গরু চোর ? শুভেচ্ছা দুজনকেই। আর একটা কথা, আমার ভদ্রতা কিন্তু আমার দুর্বলতা নয়।’’ দেব এই প্রশ্নও তুলেছেন, যে নথি ইডি, সিবিআইয়ের কাছে থাকার কথা, তা শুভেন্দুর হাতে গেল কী করে?
পরে দেব বলেছেন, ‘‘রথের সময়ে অনেক সংস্থা বিজ্ঞাপন দেয়। ২০১৪ থেকে সব বিজ্ঞাপন দেখলে বোঝা যাবে কারা কারা কাদের থেকে টাকা পেয়েছেন।’’ শুভেন্দুর উদ্দেশে দেব এ-ও বলেছেন, ‘‘আড়াই বছর ধরে অনেক কথা বুকে চেপে ছিলাম। বলতে পারছিলাম না। সুযোগ করে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।’’ শুভেন্দুর ওই পোস্ট প্রকাশ্যে আসায় তিনিও মুখ খুলতে পেরে যে কত খুশি, তা বোঝাতে শুভেন্দুর উদ্দেশে উড়ন্ত চুম্বনও ছুড়েছেন দেব। পাশাপাশি বলেছেন, তিনি তৃণমূলে আছেন বলেই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা তাঁকে ডাকাডাকি করেছিল। হিরণকে ডাকেনি। কারণ, তিনি বিজেপিতে আছেন।
দেব সৌজন্যের রাজনীতিতে তৃণমূলের অন্দরে নজির গড়়েছেন। যে কারণে তাঁর দলের অনেকে তাঁর প্রকাশ্যেই সমালোচনা করেছেন। কিন্তু দেব তাতে কান না দিয়ে মিঠুন চক্রবর্তীকে ‘পিতৃতুল্য’ বলেছেন। কখনও বলেছেন শুভেন্দু অধিকারী তাঁর জন্য দু’টো ভোট ‘করেছিলেন’। তিনি এখন অন্য দলে বলে তাঁকে কটু কথা বলতে পারবেন না। কিন্তু সেই দেবও অবশেষে ‘ফোঁস’ করলেন। গরু পাচার মামলার তদন্তের সূত্রেই সিবিআই তাঁকে জেরা করেছিল। কয়েক মাস আগে ইডিও তাঁকে তলব করেছিল দিল্লিতে। যদিও আনন্দবাজার অনলাইনের সাক্ষাৎকার ভিত্তিক অনুষ্ঠান ‘দিল্লিবাড়ির লড়াই: মুখোমুখি’তে দেব স্পষ্টই বলেছিলেন, এনামুলকে তিনি চেনেনই না! জীবনে চোখেও দেখেননি! কিন্তু ভোটের আগে সেই গরু প্রসঙ্গই নতুন করে প্রকাশ্যে এল। তবে ঘাটালের গরুর দড়ি-টানাটানি একপেশে রইল না।