Lok Sabha Election 2024

সেলিমের প্রচারে সেই মধু! ধেয়ে এল কটাক্ষ, অস্বস্তি ‘গায়ে মাখলেন’ না মুর্শিদাবাদের বামপ্রার্থী

২০২১ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি মোশারফ হোসেন ওরফে মধু তৃণমূল ছেড়ে ফিরে যান কংগ্রেসে। যাঁর বিরুদ্ধে ভোটসন্ত্রাসের অভিযোগ করেছিল বামেরা, সেই মধুকে দেখা গেল প্রচারে।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
হরিহরপাড়া (মুর্শিদাবাদ) শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০২৪ ১৬:২৩
Md Salim

মধুর সঙ্গে প্রচারে মহম্মদ সেলিম। —নিজস্ব চিত্র।

মুর্শিদাবাদের বামকর্মীদের স্মৃতিতে এখনও টাটকা ‘নির্বাচনী অত্যাচার’। ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে দলীয় কর্মীদের উপর সন্ত্রাস এবং অত্যাচারের অভিযোগ এনেছিল বামেরা। সিপিএমের অভিযোগ ছিল, মুর্শিদাবাদের ওই ‘আক্রমণের’ নেতৃত্বে ছিলেন মোশারফ হোসেন। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে সেই মোশারফ ওরফে মধুকে নিয়ে প্রচারে নামলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক তথা মুর্শিদাবাদে বামেদের প্রার্থী মহম্মদ সেলিম। হরিহরপাড়ায় সেলিমের হয়ে মোশারফকে প্রচার করতে দেখে ক্ষুণ্ণ বাম কর্মীদের অনেকেই। যদিও তা মানতে নারাজ সেলিম।

Advertisement

হরিহরপাড়া বিধানসভা এলাকার রাজনীতিতে এক সময় ‘বেতাজ বাদশা’ ছিলেন মধু। জেলা পরিষদের প্রাক্তন সভাধিপতি মধুর অত্যাচারে ঘরছাড়া হয়েছিলেন বহু বামকর্মী, এমনও অভিযোগও ছিল। তাঁদের দলীয় প্রার্থীর প্রচারে কংগ্রেস থেকে তৃণমূল হয়ে আবার কংগ্রেসে ফেরত মধুকে দেখে তাই হতাশ বাম কর্মী এবং সমর্থকদের একাংশ। সিপিএমের একটি সূত্রে খবর, এ নিয়ে স্থানীয় নেতৃত্বের কাছে অভিযোগও জানিয়েছেন তাঁরা। তবে সেলিমের দাবি, ‘‘বাম-কংগ্রেস জোট মানুষ সাদরে গ্রহণ করেছেন। দলীয় কর্মীদের এ নিয়ে কোনও মাথাব্যথা নেই।’’ তাঁর দাবি, সংবাদমাধ্যম ‘অতি উৎসাহ’ দেখাচ্ছে এ নিয়ে। রবিবার ‘বিতর্কিত’ মোশারফ ওরফে মধুকে নিয়ে চুটিয়ে ভোটের প্রচার করেছেন তিনি।

২০১৩ সালে কংগ্রেসের টিকিটে নওদা থেকে জিতে জেলা পরিষদ সদস্য হন মোশারফ। সে বার জেলা পরিষদে বোর্ড গঠন করে কংগ্রেস। তবে ২০১৬ সালে মোশারফ কংগ্রেস সদস্যদের নিয়ে যোদ দেন তৃণমূলে। ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটে জেলা পরিষদ দখল করে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল। সেই বছর নওদা থেকে জেলা পরিষদ আসনে জয়ী হন মোশারফ। সেই সময় তাঁর বিরুদ্ধে পঞ্চায়েত নির্বাচনে ব্যাপক সন্ত্রাস চালানোর অভিযোগ তুলেছিল সিপিএম। ২০১৮ সালে তৃণমূলের মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদের সভাধিপতি হন মোশারফ। কিন্তু গত বিধানসভা ভোটের দোরগোড়ায় এসে শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে তাঁর তৎকালীন দল তৃণমূলের দূরত্ব বৃদ্ধি পায়। তখন জেলার তৃণমূল নেতাদের সঙ্গেও দূরত্ব বৃদ্ধি পায় শুভেন্দু-ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত মোশারফেরও। ২০২০ সালের ১৯ ডিসেম্বর শুভেন্দু যোগ দেন বিজেপিতে। ২০২১ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি মোশারফ তৃণমূল ছেড়ে ফিরে যান তাঁর পুরনো দল কংগ্রেসে। যদিও তার আগেই মোশারফকে বহিষ্কার করেছিল তৃণমূল।

তবে কংগ্রেসের যোগ দেওয়ার পরেও তৃণমূলের জেলা পরিষদ সভাধিপতির আসন আঁকড়ে ছিলেন মোশারফ। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২১ সালের মে মাস পর্যন্ত তিনি ওই পদে ছিলেন। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে কংগ্রেসের টিকিটে নওদা থেকে ভোটে দাঁড়ান মোশারফ। তখনও তাঁকে সমর্থন করে জোট শরিক বামফ্রন্ট। তবে স্থানীয় সিপিএম নেতৃত্ব বিদ্রোহ ঘোষণা করে সেই সময়। তার ফলে মোশারফের বিরুদ্ধে নির্দল প্রার্থী হন তৎকালীন সিপিআইএমের জেলা কমিটির সদস্য শমীক মণ্ডল। এ জন্য অবশ্য দলীয় শাস্তির মুখে পড়েন তিনি। যায় পদও। মোশারফ এবং শমীক দু’জনেই ভোটে পরাজিত হন।

সেই মোশারফকে নিয়ে হরিহরপাড়ায় ভোটপ্রচারে যেতেই সেলিমের হয়ে গলা ফাটাতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। যা নিয়ে কটাক্ষ করেছেন মুর্শিদাবাদের তৃণমূল প্রার্থী আবু তাহের খান। তিনি বলেন, ‘‘এই রকম লোক সেলিমের সঙ্গে থাকলে আগে যে ক'টা ভোট ছিল, সেটাও আর থাকবে না।’’ মুর্শিদাবাদের বহরমপুর তৃণমূলের সাংগঠনিক জেলার সভাপতি তথা বিধায়ক অপূর্ব সরকারের দাবি, ‘‘তৃণমূলের জামা পরে দুর্নীতি করেছেন মোশারফ। তার পর নিজেকে বাঁচাতে চলে গিয়েছেন কংগ্রেসে।’’ আর বিজেপির মুর্শিদাবাদ সাংগঠনিক জেলা সভাপতি শাখারভ সরকার বলেন, ‘‘যাঁর জন্য বামকর্মীরা এখনও ঘরছাড়া, যাঁর কারণে মিথ্যা মামলায় ফেঁসে রয়েছেন বলে অনেক বামকর্মী অভিযোগ করেন, তাঁদের প্রতি ন্যূনতম সহানুভূতি নেই ওই দলের শীর্ষ নেতৃত্বের! আসলে সিপিএম কর্মীদের আবেগকে বলি দিয়েও ভোটে জয়ী হতে চাইছে।’’ এ নিয়ে মোশারফ কোনও মন্তব্য করেননি। আর সেলিমের দাবি, বাম-কংগ্রেস জোটকে আম ভোটার ‘সাদরে গ্রহণ’ করেছেন।

আরও পড়ুন
Advertisement