(বাঁ দিকে) অধীর চৌধুরী, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর বিবাদ সর্বজনবিদিত। বিজেপি বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র শরিক হলেও, কখনওই একাসনে বসতে দেখা যায়নি লোকসভা দলনেতা অধীর ও তৃণমূলনেত্রী মমতাকে। আর সেই তিক্ততটা কোন পর্যায়ে, তা বুধবার মালদহে সরকারি অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকে বুঝিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। বোঝালেন, জোট হলেও এ রাজ্যে তিনি অধীরকে কখনওই বহরমপুর লোকসভা আসনটি ছেড়ে দিতেন না। তবে কোনও ক্ষেত্রেই অধীরের নাম মুখে আনেননি তিনি।
মমতা বলেন, ‘‘আমাকে সিপিএম অনেক মেরেছে। মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে। তা সত্ত্বেও মনে রাখবেন আপনাদের আর্শীবাদে, দোয়ায় আমি বেঁচে আছি। সেই সিপিএমকে আমি কোনওদিনও ক্ষমা করব না। সিপিএমের সঙ্গে যাঁরা ঘর করে তাঁরা বিজেপির সঙ্গেও ঘর করে, আমি ওদের ক্ষমা করি না। ওরা বিজেপির সঙ্গে জোট করে। আমি পঞ্চায়েত ভোটের সময় দেখেছি।’’ এর পরেই তিনি আরও বলেন, ‘‘আমি কংগ্রেসকে বললাম, তোমাদের একটাও এমএলএ নেই, দু’টি এমপি আছে। একটা মালদহে। আরও একটা রয়েছে। আমি মালদহের দুটো আসন ছেড়ে দিচ্ছি। আমরা জিতিয়ে দেব। বলল না, আমার অনেক চাই। আমি বললাম তোমায় আমি একটাও দেব না। তুমি আগে সিপিএমের সঙ্গ ছাড়ো। সিপিএম তোমার নেতা। সিপিএম আমাদের ওপর কী অত্যাচার করেছে!’’ এ ক্ষেত্রে কংগ্রেসের অতিরিক্ত আসনের চাহিদা ও সিপিএম প্রীতির কারণেই যে তাদের সঙ্গে জোট করছেন না তা-ও স্পষ্ট ভাষায় বুঝিয়ে দিয়েছেন মমতা। জোট হলে, মালদহ উত্তর ও দক্ষিণ লোকসভা আসন যে তিনি কংগ্রেসকে ছেড়ে দিতেন, তাও সাফ জানান।
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বহরমপুর ও মালদহ দক্ষিণ আসনে জয় পায় কংগ্রেস। বহরমপুর আসনে পঞ্চম বারের জন্য জয়ী হন অধীর, আর মালদহ দক্ষিণ আসনে জেতেন সাংসদ আবু হাসেম খান চৌধুরী। তাঁকে আসন ছাড়তে রাজি হলেও, বহরমপুরের পাঁচ বারের সাংসদ হলেও তাঁকে আসন ছাড়তে রাজি ছিলেন না মমতা। গত লোকসভা নির্বাচনে সিপিএমের সমর্থন পেয়েই ওই আসনে জয় পান অধীর। ২০২৪ সালের নির্বাচনে অধীর যে বহরমপুর আসনে আবারও সিপিএমের সমর্থন পাবেন, তা বুঝেই তাঁকে সমর্থন দিতে নারাজ মমতা। এমনটাই মত বাংলার রাজনীতির কারবারিদের একাংশের। তা ছাড়া বহরমপুর লোকসভার অধীন সাতটি বিধানসভা আসনের মধ্যে ছ’টি বর্তমানে তৃণমূলের দখলে, বহরমপুর বিধানসভায় আবার জয়ী হয়েছে বিজেপি। তাই এমন একটি আসন অধীরকে ছেড়ে না দেওয়ার পক্ষপাতী তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব। তাই জোটের যাবতীয় সম্ভাবনা খারিজ করে দিয়ে তার কারণও ব্যাখ্যা করে দিয়েছেন মমতা।
মঙ্গলবার জোট সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে অধীর বলেছেন, ‘‘এই জোটের প্রক্রিয়ার মধ্যে আমি নেই! তৃণমূলকে, বিজেপিকে হারিয়ে জিতেছি। আগামী দিন কংগ্রেস আমাকে যখন লড়তে বলবে, আমি এ ভাবেই লড়ব। বাকি জোটের কী কথা, না কথা, কার সঙ্গে জোট হবে, না হবে— এই ব্যাপারে অধীর চৌধুরী অবগত নয়। কারণ, এটা আমার বিষয় নয়!’’ জোট নিয়ে আলোচনা শুরু হওয়ার পর থেকেই তৃণমূলের প্রতি আক্রমণাত্মক অধীর। তিনি আবার মুখ্যমন্ত্রীকেই তাঁর বিরুদ্ধে প্রার্থী হওয়ার চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন। তাঁর এমন মন্তব্যের কারণেই মমতা ছাড়াও তৃণমূলের অন্য নেতারাও তাঁকে আসন ছাড়ার পক্ষপাতী ছিলেন না। সোমবার সংবাদমাধ্যমের এক প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে সেই ইঙ্গিতই করেছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। আর বুধবার কংগ্রেসের একদা ঘাঁটি মালদহে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী যখন ‘ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা’ করছেন, তখনই ইন্ডিয়া জোট থেকে নিজেদের পৃথক করে লোকসভা ভোটে লড়াই করার বার্তা আরও স্পষ্ট করে দিলেন তৃণমূলনেত্রী।