Lok Sabha Election 2024

‘সুজাতাকে ছেড়ে গিয়েছে, কী করে বিয়ে করেছিল কে জানে’! প্রার্থীকে আগলে দিদির ভূমিকায় দিদি

বিষ্ণুপুরের প্রার্থী সুজাতা মণ্ডলের সমর্থনে জনসভা ছিল মমতার। সেখানে সৌমিত্র, সুজাতার প্রসঙ্গে ‘পারিবারিক’ রূপ দেখা গেল মুখ্যমন্ত্রীর। রাজনীতির ‘দিদি’ আক্ষরিক অর্থেই হয়ে উঠলেন ‘দিদি’।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০২৪ ১৭:৪১
(বাঁ দিক থেকে) সুজাতা মণ্ডল, সৌমিত্র খাঁ এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

(বাঁ দিক থেকে) সুজাতা মণ্ডল, সৌমিত্র খাঁ এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।

দুই দলের দুই যুযুধান প্রার্থী। একে অপরকে দেখলেই তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠেন যেন! রাজনীতির মঞ্চ থেকে লাগাতার পরস্পরকে আক্রমণ করে চলেছেন দু’জনেই। কিন্তু বিষ্ণুপুরের তৃণমূল এবং বিজেপি প্রার্থীর মধ্যে একসময়ে অন্য সম্পর্ক ছিল। তাঁরা স্বামী-স্ত্রী ছিলেন। সুজাতা মণ্ডলের সমর্থনে প্রচার করতে গিয়ে তাই প্রার্থীকে যেন আগলে রাখলেন ‘দিদি’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজনীতির ময়দানে যাঁকে সকলে ‘দিদি’ বলে চেনেন, বিষ্ণুপুরের মঞ্চে সৌমিত্র খাঁয়ের প্রসঙ্গে আক্ষরিক অর্থেই তিনি ‘দিদি’ হয়ে উঠলেন। পারিবারিক সম্পর্ক এবং স্নেহের ছোঁয়া পাওয়া গেল তাঁর ভাষণে।

Advertisement

শনিবার বিষ্ণুপুরের প্রার্থী সুজাতার সমর্থনে বিষ্ণুপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে সভা করেন মমতা। সেখানেই আসে বিজেপি প্রার্থী তথা সুজাতার প্রাক্তন স্বামী সৌমিত্রের প্রসঙ্গ। মমতা বলেন, ‘‘ওই ছেলেটার নাম আমি নিতে চাই না। কী করে সুজাতা ওকে বিয়ে করেছিল, ভগবান জানে। অবশ্য, কেউ কাউকে ভালবাসলে সেটা তার ব্যাপার। সে সব নিয়ে আমি মাথা ঘামাই না।’’ মমতা আরও বলেন, ‘‘আমার কাছে অনেক ছবি আছে। কিন্তু সুজাতা যা ঝগড়ুটে! আমি ছবি দেখালে ও হয়তো ভোট ছেড়ে দিয়ে আগে ছুটবে ঝগড়া করতে। সুজাতার কাছে যা ছবি আছে, তার চেয়ে বেশি ছবি আমার কাছে আছে।’’ নিজের দলের প্রার্থীকে ‘ঝগড়ুটে’ আখ্যা দিয়েও কিন্তু দিদির মতোই আগলেছেন মমতা। একাধিক বার ইঙ্গিত করেছেন, সৌমিত্রের অন্য ‘সঙ্গী’দের দিকে। যদিও অন্য সম্পর্ক নিয়ে খোলাখুলি তিনি কিছু বলেননি।

সৌমিত্রকে আক্রমণ করে মমতা বলেন, ‘‘এরা নাকি নেতা! নেতা নয়, আসলে ন্যাতা। ন্যাতার সম্মানও ওর থেকে বেশি। ন্যাতা পরিষ্কার করে তা দিয়ে ঘর পরিষ্কার করা যায়। একে দিয়ে কী করবেন?’’

মঞ্চে দাঁড়িয়ে সৌমিত্রের বেআইনি সম্পত্তির খতিয়ানও দেন মমতা। সুজাতার কাছেই জানতে চান, তাঁর প্রাক্তন স্বামীর নামে কতগুলি বাড়ি আছে। বলেন, ‘‘এখানে যে প্রার্থী, তার ক’টা বাড়ি আছে? কত সম্পত্তি আছে?’’ সুজাতার দিকে ঘুরে গিয়ে প্রশ্নটি করেন মুখ্যমন্ত্রী। উত্তর শুনে জনতার উদ্দেশে বলেন, ‘‘প্রার্থীর প্রাক্তন স্ত্রী বলছে, ছ’টা বাড়ি আছে। ও তো ওখন অফিশিয়াল বৌ নয়। এখন আরও কয়েক জন আছে। ক’টা আছে, আমি জানি না।’’

সুজাতার মুখেই এর পর মাইক ধরেন মমতা। প্রার্থী বলতে থাকেন, ‘‘আমার প্রাক্তন স্বামী সম্প্রতি দুর্গাপুরে দু’কোটি টাকার বাড়ি কিনেছেন। অগাধ সম্পত্তি রয়েছে তাঁর। বিষ্ণুপুর এবং বাঁকুড়ায় তাঁর জমি আছে। সবই বেআইনি।’’

ভাষণের শেষে সুজাতাকে মঞ্চে নিজের পাশে ডেকে নেন মমতা। তাঁর হাত ধরে বলে ওঠেন, ‘‘আমাদের প্রার্থী সুজাতা একটু গোবলুগাবলা। ওর বরটা স্মার্ট বেশি, তাই ওকে ছেড়ে পালিয়েছে। অন্য আরও কতগুলোকে ধরেছে, আমার সে সব বলা উচিত নয়। তবে আমার কাছে ছবি আছে। চ্যালেঞ্জ করলে আমি ছবি দেখিয়ে দিতে পারি। আপনারা ওঁকে ভোট দেবেন।’’

উল্লেখ্য, বাংলার রাজনীতিতে সৌমিত্র-সুজাতার বিচ্ছেদ এক স্মরণীয় অধ্যায় হয়ে আছে। দু’জনেই একসময়ে বিজেপিতে ছিলেন। স্বামীর হয়ে ঘুরে ঘুরে প্রচার করতেন সুজাতা। তবে ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে তিনি বিজেপি ছাড়েন। সাংবাদিক বৈঠক করে কান্নাকাটি করতে দেখা গিয়েছিল স্বামী-স্ত্রী দু’জনকেই। সুজাতা এর পর তৃণমূলে যোগ দেন। স্বামী-স্ত্রী একে অপরকে অবাধে রাজনৈতিক এবং পারিবারিক আক্রমণ করতে থাকেন। ২০২৩ সালে তাঁদের আনুষ্ঠানিক বিবাহবিচ্ছেদ হয়। লোকসভা নির্বাচনে বিষ্ণুপুরে সৌমিত্রের বিরুদ্ধে তাঁর প্রাক্তন স্ত্রীকেই টিকিট দিয়েছে তৃণমূল।

আরও পড়ুন
Advertisement