পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রামে ভোটপ্রচারে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: ফেসবুক।
কোন দফতর কী ভাবে চাকরি দেয়, সেটা সেই দফতরের ব্যাপার। সে বিষয়ে তিনি নাক গলান না। পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রামের সভা থেকে এমনটাই মন্তব্য করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানিয়েছেন, ২৬ হাজার চাকরি বাতিল নিয়ে কলকাতা হাই কোর্ট যে রায় দিয়েছে, তাতে তাঁর খারাপ লেগেছে। এত শিক্ষক এবং অশিক্ষক কর্মীর চাকরি চলে যাওয়ায় বাংলায় এ বার স্কুল বন্ধ করে দিতে হবে কি না, সেই প্রশ্নও তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
বুধবার আউশগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ের ফুটবল ময়দানে বোলপুরের তৃণমূল প্রার্থী অসিত কুমার মালের সমর্থনে জনসভা করেন মমতা। সেখানেই তাঁর ভাষণে উঠে আসে এসএসসি সংক্রান্ত হাই কোর্টের সোমবারের রায়ের প্রসঙ্গ। আদালতের এই সিদ্ধান্তের নেপথ্যেও বিজেপির চক্রান্ত রয়েছে বলে দাবি করেছেন তিনি।
মমতা বলেন, ‘‘কোন দফতর কী ভাবে চাকরি দেয়, সেটা সেই দফতরের ব্যাপার। আমি তার মধ্যে ঢুকি না। কিন্তু ২৬ হাজার শিক্ষককে চাকরি থেকে সরিয়ে দেওয়া হল। আবার বলা হয়েছে, সুদ-সহ বেতনও ফেরত দিতে হবে। এতে আমার খারাপ লেগেছে।’’ অনেকে বলছেন, দফতরের কাজের খবর রাখেন না বলে এসএসসির নিয়োগ ‘দুর্নীতি’ থেকে যেন কিছুটা হলেও নিজের দূরত্ব রচনা করতে চাইলেন মমতা। তিনি বুঝিয়ে দিলেন, কোথাও কোনও দুর্নীতি যদি হয়েও থাকে, তাঁর অজ্ঞাতে হয়েছে। তবে এত জনের চাকরি বাতিলের সিদ্ধান্তকেও তিনি সমর্থন করেন না বলে জানালেন।
এ প্রসঙ্গে বিজেপিকে দুষে মমতা আরও বলেন, ‘‘যে সব বিজেপি নেতা এ ভাবে চাকরি খাচ্ছেন, তাঁদের জিজ্ঞেস করছি, সারা জীবন সরকারি চাকরি করার পর সেই বেতন ফেরত দিতে পারবেন তো? এই ২৬ হাজার ছেলেমেয়ে এখন কোথায় যাবে? বাংলায় কি সব স্কুল এ বার বন্ধ হয়ে যাবে? শিক্ষকের চাকরি কি আর হবে না এখানে?’’
তাঁর হাতে চাকরি থাকলেও আদালতে গিয়ে চাকরি দেওয়ার সিদ্ধান্ত আটকে যাচ্ছে বলে আক্ষেপ করেন মমতা। বলেন, ‘‘আমার হাতে এখনও ১০ লক্ষ চাকরি রয়েছে। সব সরকারি দফতরের চাকরি। কিন্তু আমি দিতে পারছি না। আদালতে গিয়ে সে সব আটকে যাচ্ছে।’’ এ প্রসঙ্গেই মমতার অভিযোগ, ‘‘হাই কোর্ট টাকা দিয়ে কিনে নিয়েছে বিজেপি। সুপ্রিম কোর্টের কথা আমি বলছি না। সেখানে এখনও আমরা বিচারপ্রার্থী। কিন্তু হাই কোর্টে বিজেপি চাইলেই শুধু বিচার হয়। ওরা যা চায়, হয়ে যায়। আর কেউ বিচার পায় না।’’ নাম না করে শুভেন্দু অধিকারীকেও কটাক্ষ করেন মমতা। বলেন, ‘‘সবচেয়ে বড় গদ্দার যে, তার বিরুদ্ধে খুনের মামলা থাকলেও কোনও বিচার হয় না। তার জেল হয় না।’’
মমতা জানান, তিনি আইনের ছাত্রী ছিলেন। চাইলে এখনও তিনি আইনজীবীর পোশাক পরে আদালতে গিয়ে দাঁড়াতে পারেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমি আইনের ছাত্রী ছিলাম। এখনও বার কাউন্সিলের সদস্য আমি। যে কোনও দিন কোর্টে গিয়ে দাঁড়াতে পারি। কোনও বিচারপতিকে নিয়ে আমি কথা বলতে চাই না। তবে বিচার নিয়ে কথা বলার অধিকার আমার আছে। কেউ অন্যায় করে থাকলে স্ক্রুটিনি করা যেত। তাঁকে পরামর্শ দেওয়া যেত। কিন্তু তা না করে ২৬ হাজার চাকরি খেয়ে নেওয়া হল? এটা কি মগের মুলুক?’’
যাঁদের চাকরি গিয়েছে, তাঁদের বিজেপির বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন মমতা। বলেছেন, ‘‘শিক্ষক-শিক্ষিকারা কেউ বিজেপিকে একটি ভোটও দেবেন না। ওরা চাকরি খেয়ে নিচ্ছে। ওরা যত তাড়াতাড়ি বিদায় নেয়, ততই মঙ্গল।’’
উল্লেখ্য, এসএসসি ‘দুর্নীতি’ মামলায় সোমবার ২০১৬ সালের নিয়োগের প্রক্রিয়া বাতিল ঘোষণা করে কলকাতা হাই কোর্ট। বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি মহম্মদ শব্বর রশিদির বেঞ্চ জানায়, ২৫,৭৫৩ জনের চাকরি বাতিল করা হচ্ছে। যাঁরা মেয়াদ-উত্তীর্ণ প্যানেল থেকে চাকরি পেয়েছেন, যাঁরা সাদা খাতা জমা দিয়ে চাকরি পেয়েছেন, তাঁদের বছরে ১২ শতাংশ সুদ-সহ বেতন ফেরত দিতে হবে। তার জন্য চার সপ্তাহ সময় দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি আদালত জানিয়েছে, এসএসসি মামলায় নতুন করে নিয়োগ করতে হবে। তদন্ত চালিয়ে যাবে সিবিআই। প্রয়োজনে সন্দেহভাজনদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা যাবে। এমনকি, রাজ্য মন্ত্রিসভার বিরুদ্ধেও সিবিআইকে তদন্ত চালিয়ে যেতে বলেছে আদালত। সেই রায় প্রসঙ্গেই বুধবার বিজেপিকে আক্রমণ করলেন মমতা।