মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি ফেসবুক।
আমডাঙায় তৃণমূল প্রার্থী পার্থ ভৌমিকের সমর্থনে প্রচারে এসে মমতা একযোগে রাজ্যপাল এবং সন্দেশখালি ইস্যুতে মোদীকে নিশানা করেছেন। ‘সন্দেশখালির স্টিং অপারেশন’ নিয়ে একাধিক ভিডিয়ো প্রকাশ্য এসেছে। সেই ভিডিয়োকে হাতিয়ার করে বিজেপিকে আক্রমণ করছে বাংলার শাসকদল তৃণমূল। রবিবার বাংলায় প্রচারে এসে ব্যারাকপুরের সভা থেকে মোদী বলেন, ‘‘সন্দেশখালিতে কী চলছে, সারা দেশ তা দেখতে পাচ্ছে। সেখানকার অত্যাচারী নেতাদের তৃণমূলের পুলিশ বাঁচিয়েছে। এখন আবার ওখানে নতুন খেলা শুরু করেছে। তৃণমূলের গুন্ডারা সন্দেশখালির মা-বোনেদের ভয় দেখাচ্ছে। কারণ, ওখানে অত্যাচারীর নাম শাহজাহান শেখ। ওঁকে ক্লিনচিট দিতে চায় তৃণমূল।’’ আমডাঙার সভাকে মোদীর কথার পাল্টা জবাব দিতে গিয়ে তৃণমূল নেত্রী বলেন, ‘‘সন্দেশখালি নিয়ে এখনও মিথ্যাচার করছেন মোদী।’’ এর পরই রাজ্যপাল ইস্যু নিয়েও প্রধানমন্ত্রীকে নিশানা করেছেন মমতা। রাজ্যপালকে মোদীর ‘প্রতিনিধি’ বলেছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে মমতার প্রশ্ন, ‘‘আপনার উচিত ছিল না তাঁকে পদত্যাগ করিয়ে সরিয়ে নেওয়ার?’’
আমডাঙায় মমতা বলেন, ‘‘বাংলায় ৪৩ লক্ষ বাড়ি আমরা করেছি। নাম দেয় শুধু ওনার (নরেন্দ্র মোদী), কিন্তু সেখানে তো আমাদেরও শেয়ার রয়েছে। এ বার বলছে ওখানে নাকি দুর্নীতি হয়েছে। বাড়িগুলো তৈরি করে কে? পঞ্চায়েত। তোমাদেরও তো পঞ্চায়েত রয়েছে, সিপিএমের তো পঞ্চায়েত রয়েছে। পঞ্চায়েত শুধু কি তৃণমূলের একার রয়েছে? এখনও পর্যন্ত দুর্নীতি প্রমাণ করতে পারোনি। মিথ্যে কথা বলে বেড়াচ্ছে।’’
মমতা বলেন, ‘‘তিন দফার নির্বাচন হয়েছে। প্রথমটায় এ পাশ, পরেরটায় ও পাশ, আর তার পরেরটা ধপাস।’’
মমতার কথায়, ‘‘কুৎসা করে, অপপ্রচার করছে। আজকে মোদী দেশ, জাতি, ধর্ম, মায়ের সম্মান বিক্রি করে দিয়েছে। ১০০ দিনের টাকা লুট করেছে। বাংলার বাড়ি বন্ধ করে দিয়েছেন। একটা ছেলে মেয়েকেও চাকরি দেননি। মানুষখেকো বাঘ শুনেছেন, চাকরিখেকো বাঘ শুনেছেন? বিজেপি হচ্ছে চাকরিখেকো বাঘ।’’
মমতা বলেন, ‘‘তিন বছর কাজ করিয়ে টাকা দিলেন না। তখন আপনার টাকা ছিল না পকেটে? আর এখন বিজ্ঞাপন দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চোর বলতে হচ্ছে আপনাকে। আপনি যত ইচ্ছে বলে যান, আমার গায়ে ফোস্কা পড়বে না।’’
সন্দেশখালি ইস্যুতে মোদীকে তোপ মমতার। তিনি বলেন, ‘‘এখনও সন্দেশখালি নিয়ে মিথ্যে কথা বলে যাচ্ছেন। সন্দেশ তো আপনার জন্য অপেক্ষা করছে। সন্দেশ হচ্ছে, দেশের খবর কী? মোদী হারছেন, মোদী বিদায় নিচ্ছেন।’’
মমতা বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধি রাজভবনে লাটুসাহেব। মেয়েরা যেতে পারছে না ভয়ে। আমি সাংবিধানিক সঙ্কটে পড়ে গিয়েছি। কারণ আমার প্রয়োজন থাকলে রাস্তায় কথা বলতে হবে। কিন্তু রাজভবনে ঢুকতে পারছি না। এই রাজ্যপালের যে সব কীর্তি-কেলেঙ্কারি প্রকাশ পাচ্ছে, সেই কারণে। কী প্রধানমন্ত্রী, আপনার উচিত ছিল না তাঁকে পদত্যাগ করিয়ে সরিয়ে নেওয়ার।’’
মমতা বলেন, ‘‘সন্দেশখালির মা-বোনেদের সম্মান কী ভাবে নষ্ট করেছেন, লজ্জা করে না?’’
মমতা বলেন, ‘‘মোদী নাকি ব্যারাকপুর থেকে কিছু গ্যারান্টি দিয়েছেন শুনলাম। বলেছেন, ক্যা মতুয়াদের করতেই হবে। গায়ের জোরে হবে না। আপনার লজ্জা করে না, আপনি মতুয়াদের অধিকার কাড়তে এসেছেন? মতুয়া ভাই-বোনদের গায়ে হাত দিলে আমার গায়ে হাত দেওয়া হবে।’’
রবিবার আমডাঙার সাধনপুর উলুডাঙা তুলসিরাম উচ্চ বিদ্যালয়ের খেলার মাঠে জনসভা করছেন মমতা। নির্বাচনে প্রার্থী ঘোষণার পর থেকেই দলীয় প্রার্থীদের সমর্থনে একের পর এক সভা করছেন। কোথাও কোথাও আবার রোড-শোও করছেন তিনি।
রবিবার জোড়া সভা করবেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলের সর্বময় নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রথম সভা আমডাঙায়। ব্যারাকপুরের তৃণমূল প্রার্থী পার্থ ভৌমিকের সমর্থনে সভা করছেন মমতা।