Lok Sabha Election 2024

কোন ফুলে মজল মন, উত্তর আজ

ভোট ঘোষণার পরে টানা প্রায় আড়াই মাসের লড়াই শেষ। আজ, মঙ্গলবার লোকসভা ভোটের ফলাফল। ঘাম-রক্ত ঝরানো ভোটের পরে সব দলই তাকিয়ে সে দিকে। রাজনৈতিক ভাবে সচেতন রাজ্যবাসীর আগ্রহও তুঙ্গে।

Advertisement
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০২৪ ০৫:১০
—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

সন্দেশখালি

Advertisement

জানুয়ারির ৫ তারিখ ভোর থেকে অশান্তি শুরু হয়েছিল। তার রেশ এখনও চলছে সন্দেশখালিতে। সে দিন ভোরে তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহানের বাড়িতে তল্লাশিতে যায় ইডির দল। সঙ্গে ছিল কেন্দ্রীয় বাহিনী। শাহজাহানের সাঙ্গোপাঙ্গ এবং গ্রামবাসীদের একাংশের বাধার মুখে পড়ে ফিরত হয় তাঁদের। জখম হন সরকারি কর্মী এবং বাহিনীর জওয়ানেরা। তারপর থেকে জল গড়িয়েছে নানা খাতে। সন্দেশখালির আন্দোলনের অন্যতম মুখ রেখা পাত্রকে বিজেপি প্রার্থী হিসাবে দাঁড় করানো যার মধ্যে ছিল বড় চমক। একের পর এক ভিডিয়ো-অডিয়ো কাণ্ড ঘিরে বার বার উত্তপ্ত হয়েছে আঞ্চলিক রাজনীতি। যার প্রভাব ছড়িয়েছে গোটা রাজ্যের ভোট-প্রচারে। শাসক-বিরোধী সব দলের মুখেই সন্দেশখালি প্রসঙ্গ উঠে এসেছে বার বার। এই আবহেই ভোটের ফল। গোটা রাজ্যের নজর থাকবে বসিরহাট তথা সন্দেশখালির দিকে। বসিরহাটে তৃণমূল প্রার্থী হয়েছেন নুরুল ইসলাম। আগে বসিরহাটের সাংসদ ছিলেন তিনি। নানা ঘটনায় তাঁকে ঘিরে বিতর্ক দানা বাঁধে। পরে বসিরহাট থেকে সরিয়ে তাঁকে জঙ্গিপুরে প্রার্থী করেছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে পরাজিত হয়ে পরে হাড়োয়ার বিধায়ক হন নুরুল। সন্দেশখালির প্রাক্তন বিধায়ক নিরাপদ সর্দারকে সামনে রেখে বসিরহাটে জোর টক্কর দেওয়ার আশায় বামেরাও। সন্দেশখালি পর্বে নিরাপদকে গ্রেফতার করে রাজ্য পুলিশ। পরে আদালতের নির্দেশে ছাড়া পান তিনি। ওই ঘটনার পর থেকে বামেদের ভোট প্রচারে নিরাপদের গুরুত্ব বাড়ে।

বারাসত

বারাসত কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী কাকলি ঘোষ দস্তিদার পর পর চার বার জয়ী হতে পারেন কিনা, তা নিয়ে কৌতূহল আছে রাজনৈতিক মহলে। বারাসত কেন্দ্রের বৈশিষ্ট্য হল, দেগঙ্গা, কদম্বগছির মতো শহর ঘেঁষা গ্রামীণ এলাকার পাশাপাশি নিউটাউন, রাজারহাট, সল্টলেকের মতো ঝাঁ চকচকে এলাকার শহুরে মানুষও এই কেন্দ্রের ভোটার। শহর-গ্রামের মন কোন দিকে ঝোঁকে, তা জানা যাবে আজ। বিজেপি প্রার্থী স্বপন মজুমদারের নাম এই কেন্দ্রে ঘোষণা হওয়ার পরে জলঘোলা কম হয়নি। দলের অন্দরেও তাঁকে নিয়ে অনেকের আপত্তি ছিল। তবে প্রচারে সব পক্ষকে পাশে পেয়েছেন বলে স্বপনের দাবি। ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থী সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় বারাসত পুর এলাকার ভূমিপুত্র। বামেদের ভোট সর্বত্রই বাড়বে বলে শুরু থেকেই আশাবাদী ছিলেন তিনি। প্রচারে তেমন ঝড় তুলতে না পারলেও আইএসএফ প্রার্থী তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় নজর কেড়েছেন ভোটের দিন। বিশেষ করে অশোকনগরে তৃণমূলের সঙ্গে তাঁর দল যেমন কড়া টক্কর দিয়েছে, সেখানে তাপসের কুশলী নেতৃত্ব অনেকেরই চোখে পড়েছে।

বনগাঁ

বনগাঁ কেন্দ্রে লড়াই মূলত দ্বিমুখী। বিজেপির শান্তনু ঠাকুর এবং তৃণমূলের বিশ্বজিৎ দাস। লড়াইয়ের কেন্দ্রবিন্দু আবার আবর্তিত হয়েছে সিএএ-কে ঘিরে। ভোটের আগে সিএএ শুধু চালুই হয়নি, সেই মতো দেশজুড়ে হাতেগোনা হলেও কিছু মানুষ আবেদনের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব পেয়ে গিয়েছেন। মতুয়া অধ্যুষিত এই কেন্দ্রে জনসমর্থন যে দিকেই গড়াক, তা যে সিএএ-কেন্দ্রীক হবে— তা মানেন সব পক্ষ।

ব্যারাকপুর

দলবদলের নিরিখে বার বারই নজর কেড়েছে ব্যারাকপুরের বিজেপি প্রার্থী অর্জুন সিংহের অবস্থান। তৃণমূল তাঁকে টিকিট না দেওয়ায় অর্জুন ফিরে গিয়েছেন বিজেপিতে। দলবদলের এ হেন নজির ভোটারদের কাছে অর্জুনের বিশ্বাসযোগ্যতাকে কতটা প্রমাণ করতে পারল, জানা যাবে আজ। তৃণমূল প্রার্থী পার্থ ভৌমিক বরাবরই তৃণমূলের উপরের সারির নেতানেত্রীদের স্নেহধন্য। ভোটের দিন তাঁর আত্মবিশ্বাসী ভাবভঙ্গী, চাপমুক্ত হাসি দেখে অনেকেরই অনুমান, এই কেন্দ্রে শেষ হাসি তিনি হাসবেন— ধরেই রেখেছেন পার্থ। এক সময়ে লালদুর্গ ব্যারাকপুরে বামেরা ভরসা রেখেছে অভিনেতা প্রার্থী দেবদূত ঘোষের উপরে। শিক্ষিত তরুণ ভোটারের উপরে এ বার রাজ্যজুড়ে ভরসা বামেদের। দেবদূতের ভাবমূর্তি এখানে জাদু দেখাতে পারে কিনা, তা দেখার আগ্রহ আছে নানা মহলে

জয়নগর

জয়নগর এক সময়ে এসইউসি-র শক্তঘাঁটি হলেও ইদানীং ততটা ঝাঁঝ দেখা যায়নি তাদের প্রচারে। বরং গত দু’বারের সাংসদ তৃণমূলের প্রতিমা মণ্ডল বরাবরই আত্মবিশ্বাসী। পুর ও গ্রামীণ এলাকা মিলে বহু অপ্রাপ্তি আছে ভোটারদের। রাজনৈতিক সংঘর্ষের দীর্ঘ ইতিহাস আছে এই এলাকায়। লোকসভা ভোটের ফলে প্রতিমা হ্যাটট্রিক করেন কিনা, জানা যাবে আজই। আরএসপির সমরেন্দ্রনাথ মণ্ডল এখানে বামেদের পুরনো গৌরব ফিরিয়ে আনতে পারেন কিনা, সেটাও দেখার। লড়াইয়ে তিনি প্রবল ভাবে আছেন বলে আত্মবিশ্বাসী বিজেপি প্রার্থী অশোক কাণ্ডারীও।

মথুরাপুর

মথুরাপুরে এক সময়ে তৃণমূলের দাপট থাকলেও গত কয়েক বছরে পদ্ম ফুটেছে ভালই। দু’পক্ষের কড়া টক্কর হবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা। নদীমাতৃক এই এলাকার বহু অংশ পিছিয়ে পড়া। গত কয়েক বছরে ঝড়বৃষ্টি, প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে প্রচুর। নদীবাঁধ কংক্রিটের হোক, এ দাবিও প্রাচীন। সব দিক মাথায় রেখে ভোটারদের মন কোন দিকে ঝোঁকে, তা বোঝা যাবে ৪ জুন। বিজেপির অশোক পুরকাইতকে সামনে রেখে এখানে লড়েছে বিজেপি। সিপিএমের প্রার্থী শরৎচন্দ্র হালদার। তৃণমূল প্রার্থী বাপি হালদার মনোনয়ন জমা দেওয়ার পরে তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ দায়ের হয়েছিল থানায়। ইভিএমে তার কোনও প্রভাব পড়ে কিনা, তা-ও জানা যাবে আজ।

ডায়মন্ড হারবার

ডায়মন্ড হারবার রাজ্যের ৪২টি লোকসভা আসনের মধ্যে তৃণমূলের সব থেকে ‘সহজ আসন’ বলে বার বারই নাম উঠে এসেছে ডায়মন্ড হারবারের। এখানকার দু’বারের সাংসদ তথা দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ৪ লক্ষ ভোটের মার্জিন বেঁধে দিয়েছেন কর্মী-সমর্থকদের সামনে। উন্নয়নের ‘ডায়মন্ড হারবার মডেল’ সারা দেশে চর্চার বিষয় বলে তাঁর দাবি। ভোটারদের মন তাতে কতটা ভোলে, সেটাই দেখার। বিরোধীদের আবার দাবি, সন্ত্রাস-হুমকির জেরেই এই এলাকায় তৃণমূলের রমরমা। সে কথা বলাইবাহুল্য মানতে নারাজ তৃণমূল নেতৃ্ত্ব। এ বার ভোটেও শাসক দলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস, কারচুপির অভিযোগ উঠেছে ভুরি ভুরি। পুরো কেন্দ্রের নির্বাচন বাতিলের দাবি তুলেছিল বামেরা। তৃণমূলের সঙ্গে জোর টক্কর দেওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী বিজেপি প্রার্থী অভিজিৎ দাস। প্রার্থী ঘোষণা নিয়ে বিজেপির ‘অস্বাভাবিক দেরি’ এই কেন্দ্রে আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছিল। ভোটের দিন পুরো এলাকা জুড়ে বাম প্রার্থী প্রতীক উর রহমানের তৎপরতাও নজর টেনেছে।

যাদবপুর

যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্রও গ্রাম-শহরে ভাগাভাগি। তবে এই কেন্দ্রে বরাবরই রাজনৈতিক আলোচনা আবর্তিত হয় ভাঙড়কে ঘিরে। এখানে রাজনৈতিক সঙ্ঘাতের ইতিহাস দীর্ঘ। গত পঞ্চায়েত ভোটের সময়ে সাত জন প্রাণ হারান। এক সময়ে জমিরক্ষা কমিটির সঙ্গে তৃণমূলের সঙ্ঘাত সে সময়ে শাসক দলের সঙ্গে আইএসএফের রেষারেষিতে বদলে গিয়েছিল। এই কেন্দ্রে প্রার্থী বদল করেছে তৃণমূল। অভিনেত্রী মিমি চক্রবর্তীকে সরিয়ে আর এক অভিনেত্রী তথা যুব তৃণমূল নেত্রী সায়নী ঘোষের উপরে ভরসা রেখেছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। তাঁকে কড়া টক্কর দিতে প্রস্তুত সিপিএমের তরুণ মুখ সৃজন ভট্টাচার্য। বিজেপির অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায়ও প্রচারে প্রচুর গা ঘামিয়েছেন। সংখ্যালঘু অধ্যুষিত ভাঙড়ের ভোটার তাঁর পাশে কতটা থাকে, তা নিয়ে কৌতূহল আছে রাজনৈতিক মহলে।

বেশ কয়েকটি বুথফেরত সমীক্ষায় রাজ্যে বিজেপির ফলাফল উল্লেখযোগ্য রকমের ভাল। ভোট বাড়ার ইঙ্গিত আছে বাম-কংগ্রেসের ঝুলিতেও। যদিও সেই সব সমীক্ষাকে আমল দিতে নারাজ তৃণমূল শিবির। সমস্ত জল্পনার অবসান ঘটতে চলেছে আজই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও পড়ুন
Advertisement