Lok Sabha Election 2024

‘নাগরিক বলে ভোট দেব আমরা, এর বেশি আর কিছু আশা করি না’

গ্রামেগঞ্জে ছড়িয়ে নানা পেশার অসংখ্য মানুষ। জীবন-জীবিকা অনেকেরই মসৃণ নয়। বহু ঘাত-প্রতিঘাতে প্রতি দিন বেঁচে থাকার লড়াইয়ে টিঁকে থাকতে হয়। ভোট নিয়ে কী ভাবছেন তাঁরা, খোঁজ নিল আনন্দবাজার 

Advertisement
সমরেশ মণ্ডল
কাকদ্বীপ শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০২৪ ০৮:০৯
জাল সারাই করছেন মৎস্যজীবীরা।

জাল সারাই করছেন মৎস্যজীবীরা। নিজস্ব চিত্র।

ভোট-পর্ব শুরু হয়ে গিয়েছে। ওঁদের বিশেষ হেলদোল নেই।

Advertisement

ওঁরা ধরেই নিয়েছেন, ভোট এলে বাড়ির কাছে নেতা-মন্ত্রী-প্রার্থীরা আসবেন। নানা প্রতিশ্রুতি মিলবে। কিন্তু ভোট মিটলেও তাঁদের সমস্যা মিটবে না। তাই ভোট নিয়ে বিশেষ মাথাব্যথা নেই সুন্দরবনের কাকদ্বীপ, নামখানা এবং পাথরপ্রতিমার বহু মৎস্যজীবীর।

কাকদ্বীপের সুজয় দাস, তপন দাসের মতো মৎস্যজীবীদের কথায়, “ভোট নিয়ে ভাবনাচিন্তা করা বোকামি ছাড়া কিছু না! খাটতে না গেলে সংসার চলবে কী করে? কেউ তো খেতে দেবে না দু’মুঠো ভাত। দেশের নাগরিক, তাই ভোট দেব। এর বেশি কিছু না।”

চাষিদের কাছ থেকে সরকার আলু এবং ধান কেনে। চাষিরা যাতে ফড়েদের পাল্লায় না পড়েন, সেই কারণে সরকার সহায়ক মূল্যও দেয়। কিন্তু অভিযোগ, উপকূলবর্তী এলাকার মৎস্যজীবীদের জন্য প্রশাসন ভাবছে না। প্রতি ব্লকে কৃষক বাজার তৈরি হলেও তাঁদের জন্য নেই কোনও মৎস্য বাজার। প্রশাসনের ‘উদাসনীতা’য় ক্ষুব্ধ ওই মৎস্যজীবীরা। মৎস্যজীবী সুভাষ দাস, বিনয় দাস, সঞ্জয় মণ্ডলদের দাবি, “ভোট এলে নেতাদের আমাদের কথা মনে পড়ে। কিন্তু সারা বছর আমাদের সমস্যার কথা কেউ ভাবে না। ভোটের সময় নানা প্রতিশ্রুতি দেন নেতারা। কিন্তু ভোট মিটলে সমস্যার কথা বলতে গিয়ে পায়ের জুতো ছিঁড়ে যায়। সমস্যা মেটে না।”

গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে গিয়ে আর ফেরেননি অনেক মৎস্যজীবী। তাঁদের স্ত্রী-রা সুন্দরবন এলাকায় ‘সমুদ্র-বিধবা’ নামে পরিচিত। আবহাওয়া পূর্বাভাসের প্রযুক্তি ও ব্যবস্থা আগের চেয়ে অনেক ভাল হয়েছে। তবু সুন্দরবনের ব্লকগুলিতে ‘সমুদ্র-বিধবা’দের সংখ্যা কমার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না, দাবি মৎস্যজীবীদের সংগঠনগুলির। গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে গিয়ে অনেকে ঝড়ঝঞ্ঝার মধ্যে পড়ে প্রাণ হারান। কিন্তু তাঁদের উদ্ধারের জন্য রাজ্য বা কেন্দ্র সরকারের কোনও ব্যবস্থা নেই বলে অভিযোগ। আরও অভিযোগ, কোনও মৎস্যজীবীর সমুদ্রে মাছ ধরতে গিয়ে স্বাভাবিক মৃত্যু হলে পরিবার কিছুই পায় না।

সমুদ্রে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে বা দুর্ঘটনায় বকখালির রুম্পা, চন্দা, পিয়ালিরা তাঁদের মৎস্যজীবী-স্বামীদের হারিয়েছেন। কেউ ক্ষতিপূরণ হিসেবে এক লক্ষ টাকা পেয়েছেন। কেউ সেটুকুও পাননি। অভিযোগ, সমুদ্রে মৃত মৎস্যজীবীর পরিচয়পত্র না থাকলে সরকারি সাহায্য পেতে সমস্যা হয়।

অনেক ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী জানান, তাঁদের নিজস্ব পুকুর নেই, ফলে মাছ চাষ করা সম্ভব নয়। পুকুর ঠিকা নেওয়ার মতো পুঁজিও নেই। মৎস্য দফতর থেকে ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত মৎস্যজীবী ক্রেডিট কার্ডে ঋণ পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু সমস্যা হল, রাজনৈতিক চক্রান্তে ও দফতরের গাফিলতিতে প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও মৎস্যজীবীরা অনেক সময়ে সেই কার্ড পান না। তাঁদের দাবি, যারাই ভোটে জিতুক, মৎস্যজীবীদের সুরক্ষা, দুর্ঘটনার ভাতা, মৎস্য বাজারের দিকে নজর দিক।

নামখানার মৎস্যজীবী বাদল দাস বলেন, “ক্ষুদ্র মৎস্যজীবীদের কথা সরকার ভাবে না। ১৫ এপ্রিল থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত ৬১ দিন সমুদ্রে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা থাকে। এই দু’মাস আর্থিক সঙ্কটের কথা ভেবে সরকার ভাতার ব্যবস্থা করলেও প্রকৃত মৎস্যজীবীরা নানা কারণে বঞ্চিত হচ্ছেন। সরকারের এই বিষয়টি নজর দেওয়া উচিত।”

ওয়েস্টবেঙ্গল ইউনাইটেড ফিশারম্যান অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সম্পাদক বিজন মাইতি বলেন, “অনেকে সমুদ্রে মাছ ধরতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন। কিন্তু পরিচয়পত্র যথাযথ দাখিল না হওয়ায় সহায়তা পাননি। এখন ডিজ়েলে ভর্তুকি দেওয়া হয় না। বন্দরগুলোর নাব্যতা কমছে। ফলে, খরচ বাড়ছে। অথচ, অনেক মৎস্যজীবী নানা ভাবে বঞ্চিত হচ্ছেন।”

আরও পড়ুন
Advertisement