Lok Sabha Election 2024

সব বুথে এখনও নির্বাচনী কমিটিই হল না বিজেপির

লোকসভা ভোটে বিধানসভাভিত্তিক কোন দলের কী অবস্থা? প্রচারে কারা কোন বিষয়কে তুলে ধরছে? আজ, শ্যামপুর বিধানসভা কেন্দ্র।

Advertisement
নুরুল আবসার
শ্যামপুর শেষ আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০২৪ ০৮:৩৫
—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

উন্নয়নের নিরিখে উলুবেড়িয়া লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত সাতটি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে শ্যামপুর, এমন দাবি এলাকাবাসীর অনেকেরই। কিন্তু তা নিয়ে বিরোধী দলগুলির বিশেষ প্রচার নেই তৃণমূলের এই ‘গড়ে’। মূলত তৃণমূলের বিরুদ্ধে সামগ্রিক দুর্নীতি এবং সন্দেশখালি-কাণ্ড নিয়েই তাদের প্রচার চলছে।

Advertisement

অথচ, এলাকাবাসীর ক্ষোভ কম নয়। গাদিয়াড়ায় নতুন বাস স্ট্যান্ড তৈরি হলেও বাসের রুট বাড়েনি। সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টার পরে শ্যামপুর থেকে বাগনান ফেরার বাস পাওয়া যায় না। ঝুমঝুমি ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অন্তর্বিভাগ চালু হয়নি। ফলে, গুরুতর অসুস্থ বা প্রসূতিদের নিয়ে যেতে হয় উলুবেড়িয়া শরৎচন্দ্র মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। ঘরে ঘরে পানীয় জলের সংযোগ দেওয়ার কাজও সর্বত্র হয়নি। বহু গ্রামে জলের জন্য নলকূপই প্রধান অবলম্বন। এই গরমে বহু নলকূপই বিকল হচ্ছে।

২০০১ সাল থেকে এই বিধানসভা কেন্দ্রে জিতে আসছেন তৃণমূলের কালীপদ মণ্ডল। তবে, দল চালানোর আসল কান্ডারী শ্যামপুর ২ পঞ্চায়েতের সহ-সভাপতি নদেবাসী জানা। নিজের অফিসে বসে প্রবীণ এই নেতা দাবি করছেন, পরিষেবায় যেটুকু খামতি রয়েছে, তা নিয়ে এলাকাবাসীর ক্ষোভ ভোটের বাক্সে প্রতিফলিত হবে না। সব সমস্যার সমাধান করা হবে। তাঁর কথায়, ‘‘লোকসভায় ভোটের ব্যবধান বাড়ানো নিয়েই আমরা ভাবছি। শুধু জেতাটা উদ্দেশ্য নয়।’’

এলাকার জেলা পরিষদ সদস্য তথা জনস্বাস্থ্য বিভাগের কর্মাধ্যক্ষ জুলফিকার মোল্লা বলেন, ‘‘ঝুমঝুমিতে অন্তর্বিভাগ চালু করার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছে। জল জীবন মিশন প্রকল্পে প্রতিটি বাড়িতে পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার কাজ দ্রুত গতিতে চলছে।’’

শ্যামপুর মূলত কৃষিপ্রধান এলাকা। জেলার ‘শস্য ভান্ডার’ হিসাবেও পরিচিত। শিল্প বলতে প্রধানত ইটভাটা। প্রায় দেড়শো ইট ভাটা আছে এখানে। লক্ষাধিক পরিবারের রুটিরুজি ভাটার সঙ্গে জড়িত। আর আছে গাদিয়াড়া পর্যটনকেন্দ্র। সম্প্রতি দামোদরের চর দখল করে রিসর্ট এবং ইটভাটা তৈরির অভিযোগকে কেন্দ্র করে তেতে ওঠে এলাকা। এইসব অপকর্মে তৃণমূলের জড়িত থাকার অভিযোগ তুলেছে বিরোধীরা। বিধায়কের দাবি, বেআইনি যদি কিছু হয়ে থাকে, তা দেখার কথা পুলিশ ও প্রশাসনের। তৃণমূলের কেউ এ সবের সঙ্গে জড়িত নয়।

২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্রে তৃণমূল বিজেপির থেকে এগিয়েছিল প্রায় ৩১ হাজার ভোটে। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্রে তৃণমূলের জয়ের ব্যবধান ছিল লোকসভার মতোই। শ্যামপুর ১ ব্লকের ছ’টি এবং শ্যামপুর ২ ব্লকের আটটি— মোট ১৪টি পঞ্চায়েত নিয়ে এই বিধানসভাকেন্দ্র। সব পঞ্চায়েত রয়েছে তৃণমূলের দখলে। এই বিধানসভায় ২৬% শতাংশ সংখ্যালঘু ভোটের সিংহভাগ তারাই পাবে বলেও দাবি করছে শাসকদল।

নিজেদের সাংগঠনিক দুর্বলতার কথা মানছেন অনেক বিজেপি নেতাই। ২০১৬ পর্যন্ত এখানে তৃণমূলের প্রধান বিরোধী ছিল বামেরা। ২০১৯ সাল থেকে সেই জায়গা নেয় বিজেপি। কিন্তু এতদিনেও এখানে তারাও তৃণমূলকে চ্যালেঞ্জ জানানোর জায়গায় যে আসেনি, তা একান্ত আলোচনায় স্বীকার করেছেন দলের অনেক নেতাই।

বিজেপির একটি সূত্রের খবর, এখানকার সব বুথে দলের নির্বাচন কমিটিও এখনও পর্যন্ত গড়া যায়নি। বিজেপি নেতা রমেশ সাধুখাঁর অবশ্য দাবি, "আমাদের সংগঠন যথেষ্ট শক্তিশালী। যে সব জায়গায় বুথ কমিটি হয়নি, শীঘ্রই হয়ে যাবে।" প্রার্থী অরুণ উদয় পাল চৌধুরী প্রচারে খামতি রাখছেন না। তিনি বলেন, ‘‘মানুষ আমাদের পাশে আছেন।’’

বাম-কংগ্রেস জোটের প্রচারে আবার শামিল হচ্ছে না ফরওয়ার্ড ব্লক। দলের নেতা অসিতবরণ সাউ বলেন, "নির্বাচনের সময় ঘরে বসে থাকতে আমাদের ভাল লাগছে না। কিন্তু দল না বললে মাঠে নামি কী করে?’’ কংগ্রেস প্রার্থী আজহার মল্লিক অবশ্য সিপিএমকে সঙ্গে নিয়ে একাধিক কর্মসূচি করছেন। তিনি আশা করছেন, ‘‘আমাদের ফল ভাল হবে।’’ আইএসএফ প্রার্থী মফিকুল ইসলামও সাধ্যমতো প্রচার করছেন। কিন্তু কোনও বিরোধী দলের প্রচারেই বিশেষ জোর দেখতে পাচ্ছেন না এলাকাবাসী।

তৃণমূল নেতা নদেবাসী বলছেন, ‘‘শ্যামপুর আর তৃণমূল যে সমার্থক, তা এলাকার সবাই জানেন। সেটা নির্বাচনের ফলে আবার প্রমাণ হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও পড়ুন
Advertisement