লকেট চট্ট্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
তিনি কি তাঁর নিজের আসন হুগলি থেকেই আবার প্রার্থী হবেন লোকসভা নির্বাচনে? এমন প্রশ্ন রয়েছে বিজেপির অন্দরে। যদিও হুগলি বিজেপি নেতৃত্বের অনেকেই চান না লকেট আবার প্রার্থী হোন। তাঁকে পাশের আসন শ্রীরামপুরে নিয়ে যাওয়া হবে কি না ভাবনার মধ্যেই পোস্টার পড়তে শুরু করেছে ওই আসনের বিভিন্ন এলাকায়। মনে করা হচ্ছে, দলেরই একাংশ রয়েছেন এই বিরোধিতার নেপথ্যে। এরই মধ্যে স্বয়ং লকেট জানিয়ে দিলেন আর কেউ নয়, তিনিই ২০১৯ সালের মতো ২০২৪-এর ভোটে হুগলি থেকে প্রার্থী হচ্ছেন।
বিজেপিতে প্রার্থীর নাম রাজ্য নেতৃত্বও ঘোষণা করেন না। প্রার্থিতালিকা তৈরি করে দলের সংসদীয় কমিটি। এর পরে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের পক্ষে তা ঘোষণা করে দেওয়া হয়। কিন্তু সেই সব রীতির বাইরে গিয়ে লকেট স্বয়ং জানিয়ে দিলেন তিনিই দ্বিতীয় বার প্রার্থী হচ্ছেন এই আসনে। লকেট বলেন, ‘‘দ্বিতীয় বারের জন্য হুগলি থেকে নিশ্চয়ই লড়ব।’’
বৃহস্পতিবারই রাজ্য বিজেপির নির্বাচন পরিচালন কমিটির প্রথম বৈঠক। কলকাতায় আসছেন দলের কেন্দ্রীয় নেতা সুনীল বনসল। সেই বৈঠকে যোগ দিতে রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার-সহ যাঁরা নির্বাচন কমিটিতে রয়েছেন তাঁদের কলকাতায় আসতে বলা হয়েছে। লকেটও সেই কমিটির সদস্য। দিল্লি থেকে রাজ্যে ফিরে বৃহস্পতিবার নিজের লোকসভা এলাকাতেই সাংবাদিক বৈঠক করেন তিনি। সেখানেই তাঁর আসন নিয়ে তৈরি হওয়া বিতর্কের জবাব দেন হুগলির সাংসদ। তাঁকে নিয়ে জল্পনার দায় তৃণমূলের ঘাড়ে চাপিয়ে তিনি বলেন, ‘‘তৃণমূল লকেট চট্টোপাধ্যায়ের নামে জুজু দেখছে। কোনও সময় বিজেপির নাম করে শ্রীরামপুরে পোস্টার দিচ্ছে। কখনও দেখবেন আরামবাগে দিচ্ছে। এর পরে দেখবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কেন্দ্র দক্ষিণ কলকাতায় পড়বে, কখনও দেখবেন ডায়মন্ড হারবারে পড়বে।’’ এর পরেই অক্ষয় কুমারের ‘হলিডে’ ছবির ডায়লগ মিলিয়ে বলেন, ‘‘আমি একটা কথাই বলব, ইয়ে ডর মুঝে আচ্ছা লাগা।’’
প্রসঙ্গত, লকেট ২০১৯ সালে ৮০ হাজারের বেশি ভোটে তৃণমূলকে হারিয়ে জিতেছিলেন। তবে ২০২১ সালে নীলবাড়ির লড়াইয়ে পরাজিত হন এই লোকসভা এলাকারই চুঁচুড়া বিধানসভা আসনে দাঁড়িয়ে। প্রায় সাড়ে ১৮ হাজার ভোটে জিতেছিলেন তৃণমূলের অসিত মজুমদার। লোকসভা ভোটে অবশ্যে এই আসনে অনেকটা এগিয়ে ছিল বিজেপি। নীলবাড়ির লড়াইয়ে হেরে যাওয়া লকেটকে বিজেপি আসন্ন দিল্লিবাড়ির লড়াইয়ে প্রার্থী করবে কি না সে প্রশ্ন অনেক আগে থেকেই রয়েছে ওই এলাকায়। অনেকেরই বক্তব্য, নিজের আসনে পর্যাপ্ত সময় দেননি সাংসদ। এলাকার উন্নয়ন নিয়ে বিজেপি কর্মীদের মধ্যেই লকেটের বিরুদ্ধে ক্ষোভ সামনে এসেছে অনেক বার। এই পরিস্থিতিতে জেলা নেতৃত্বের তরফে রাজ্যের কাছে প্রার্থী বদলের আবেদনও জমা পড়ে বলে বিজেপি সূত্রেই জানা গিয়েছে। রাজ্যের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক লকেটকে নিয়ে রাজ্য নেতৃত্বের মধ্যে অনেকেই ক্ষুব্ধ। একটা সময়ে দলের বিরুদ্ধ গোষ্ঠীকে মদত দেওয়ার অভিযোগও উঠেছিল। এমনকি, লকেট দলবদল করতে পারেন এমন জল্পনাও তৈরি হয়েছিল। তবে প্রতি ক্ষেত্রেই তেমন সম্ভাবনার কথা উড়িয়ে দিয়েছেন লকেট।
তবে নতুন করে তাঁকে নিয়ে বিতর্ক দানা বাঁধার মধ্যেই বৃহস্পতিবার হুগলি জেলা বিজেপির দফতরে সাংবাদিক বৈঠক করলেন লকেট। সেখানেই তিনি বলেন, ‘‘দ্বিতীয় বারের জন্য হুগলি থেকে নিশ্চয়ই লড়ব। সবটাই আমাদের পার্লামেন্টারি বোর্ড ঠিক করে। আমরা যাঁরা সাংসদ হয়েছিলাম তাঁরা দ্বিতীয় বারের জন্য আবার সংসদে পৌঁছব। আবার নতুন আসন থেকেও সাংসদেরা জিতে লোকসভায় পৌঁছবেন।
নীলবাড়ির লড়াইয়ে তাঁর পরাজয় নিয়ে প্রশ্নেরও জবাব দিয়েছেন লকেট। তিনি বলেন, ‘‘২০২১ সালের ভোটের পর থেকে ২০২৪ সালের পরিস্থিতি অনেক পাল্টেছে। তৃণমূলের বিভিন্ন ক্ষেত্রের দুর্নীতি সামনে এসেছে। নেতা-মন্ত্রীরা জেলে গিয়েছে। শিক্ষা,পুরসভা,রেশন একশো দিনের কাজে কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে। গরিব মানুষের টাকা তৃণমূল লুট করেছে। তাই পশ্চিমবঙ্গের মানুষ আর তৃণমূলকে চাইছে না।’’
লকেট তাঁর বিরুদ্ধে প্রচারের দায় তৃণমূলের উপরে চাপালেও তাঁর অনুগামীরাও বলছেন, বিজেপির একাংশই এ সব করছেন। লকেটকে নিয়ে সব চেয়ে বেশি ক্ষোভ আদি সপ্তগ্রাম এলাকায়। সেটা লকেটও জানেন। তাই নিজের নাম নিজে ঘোষণা করে দেওয়ার মধ্যে আসলে নিজের দলকেই লকেট বার্তা দিয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে।