গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
নাটকের নাম: ‘দিল্লিবাড়ির লড়াই’। কিন্তু সেই নাটকে দ্বৈত চরিত্র করতে হবে দিল্লির অনেক সিপিএম নেতাকে। ‘ঈশ্বরের আপন দেশ’ কেরলে প্রচারে গিয়ে মাইক ধরেই কংগ্রেসের শাপশাপান্ত করতে হবে। আর বিহার, বাংলা, রাজস্থানের মতো রাজ্যে দলের হয়ে প্রচারে গিয়ে কংগ্রেস সম্পর্কে ভাল ভাল কথা বলতে হবে! আপাতত তারই মহড়ায় ব্যস্ত তাঁরা। কিন্তু তা নিয়ে ঘরোয়া আলোচনায় ‘বিড়ম্বনা’র কথাও গোপন করছেন না একেজি ভবনের (সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির দফতর) নেতারা। তবে তাঁরা নিজেরা নিজেদের সান্ত্বনা দিতে এ-ও বলছেন, কংগ্রেসের নেতাদেরও একই কাজ করতে হবে। অর্থাৎ, তাঁরা ‘একা’ নন।
সর্বভারতীয় সিপিএমের এক প্রথম সারির নেতার কথায়, ‘‘কেরলে রাজনীতির যে বাস্তবতা, তাতে ওখানে আমাকে প্রচারে গিয়ে মাইক হাতে নিয়েই কংগ্রেসকে আক্রমণ করতে হবে! এর অন্যথা করা যাবে না। কারণ, গোল গোল কথা বললে নিচুতলার কমরেডরা খেপে যাবেন। আবার সেই আমাকেই পরের দিন বাংলায় প্রচারে যেতে হলে সেখানকার মঞ্চে ঠিক উল্টো কথা বলতে হবে। কী মুশকিল বলুন দেখি!’’ রসিকতা করে ওই নেতা আরও বলেন, ‘‘আমায় এক ডাক্তার বন্ধু সতর্ক করে দিয়েছেন। বলেছেন, ভুল করে কেরলে সভা করতে গিয়ে আবার বাংলার স্ক্রিপ্ট পড়ে ফেলিস না! কিংবা বাংলায় গিয়ে কেরলের!’’
কেরল ব্যতিক্রম। সেখানে সিপিএম শাসকদল। প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস। বিজেপি এখনও সে ভাবে ছাপ ফেলতে পারেনি। তা বাদ দিয়ে তামিলনাড়ু, বাংলা, রাজস্থান, বিহার, ত্রিপুরায় সিপিএম রয়েছে কংগ্রেসের সঙ্গে জোটে। যে রাজস্থানে গত নভেম্বরেও সিপিএম লড়েছিল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে, সেখানেও জোট হয়েছে। শুধু জোট নয়। সর্বভারতীয় কংগ্রেস যে রাজস্থানের প্রার্থিতালিকা ঘোষণা করেছিল, তাতে ৩৯ নম্বর কলামে লেখা ছিল ‘সিকার কেন্দ্র সিপিএমের জন্য ছাড়া হল’। সিকারে সিপিএম প্রার্থী হিসাবে লড়ছেন রাজ্য সম্পাদক অমরা রাম। যাঁর সমর্থনে গত ২৬ মার্চ একসঙ্গে জনসভা করেছিলেন সিপিএমের পলিটব্যুরোর সদস্য বৃন্দা কারাট এবং রাজস্থানে কংগ্রেসের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অশোক গহলৌত। আবার এই বৃন্দাই কেরলের ওয়েনাড়ে সিপিআই প্রার্থী অ্যানি রাজার (সিপিআইয়ের সাধারণ সম্পাদক ডি রাজার স্ত্রী) হয়ে প্রচার করতে গিয়ে রাহুল গান্ধীকে তুলোধনা করবেন। কিংবা গহলৌত বিঁধবেন সিপিএমের টমাস আইজ়্যাক, শৈলজা টিচারদের।
২০১৬ সাল থেকে বাংলায় সিপিএম এবং কংগ্রেসের ‘বন্ধুত্ব’ শুরু হয়েছিল। মাঝে ছাড়াছাড়ি হলেও এখন আবার এই রাজ্যে মহম্মদ সেলিম, অধীর চৌধুরীরা ‘বন্ধুত্বপূর্ণ এবং সহযোগিতামূলক’ সমঝোতার পথে অনেকটা এগিয়ে গিয়েছেন। আনন্দবাজার অনলাইনের সক্ষাৎকার ভিত্তিক অনুষ্ঠান ‘দিল্লিবাড়ির লড়াই: মুখোমুখি’তে সেলিম আবার তাঁর সঙ্গে অধীরের রসায়নকে ‘জুটি’ বলে অভিহিত করেছেন। সেলিম সিপিএমের পলিটব্যুরোর সদস্য। তিনি যদি কেরলে যান? তা হলে তাঁকেও মাইক ধরে অধীরের দলকে তুলোধনা করতে হবে।
পরিস্থিতি বুঝে তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ কটাক্ষ করছেন সিপিএম এবং কংগ্রেসকে। তাঁর কথায়, ‘‘এটাই হল দেউলিয়া রাজনীতির পরিণতি! সিপিএম, কংগ্রেস নেতাদের এখন অভিনেতা সাজতে হচ্ছে। সংলাপ মুখস্থ করতে হচ্ছে। তবে বাংলায় তাঁরা যে সংলাপই বলুন, সিনেমা ফ্লপ হবে। লোক হলে যাবে না।’’