বিজেপির ইস্তাহার হাতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। রবিবার সকালে। ছবি: পিটিআই।
আরও এক বার দুর্নীতি নিয়ে কঠোর পদক্ষেপ করার কথা বললেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বিজেপির ইস্তাহারেও প্রতিশ্রুতি দেওয়া হল, প্রশ্নপত্র ফাঁস এবং নিয়োগের পরীক্ষায় অনিয়ম রুখতে কঠোর আইন প্রয়োগ করা হবে। ইস্তাহার প্রকাশের দিন হিসাবে বাংলার পয়লা বৈশাখকে বেছে নেওয়ার নেপথ্যে বাংলাকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়াই বিজেপির লক্ষ্য কি না, তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছিল। মোদী অবশ্য এক বার বাংলার নববর্ষ এবং অসমের বিহু উৎসবের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে ‘শুভ দিন’ কথাটি উচ্চারণ করেন। এর বাইরে আলাদা করে তাঁর মুখে বাংলা আসেনি। তবে অনেকেই মনে করছেন, বাংলায় নিয়োগ ‘দুর্নীতি’ নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে চর্চা এখনও থামেনি, সেই আবহে এই বিষয়ে কঠোর আইন প্রয়োগ করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া আদতে বাংলার শাসকদল তৃণমূলকেই প্রকারান্তরে ‘বার্তা’ দেওয়া।
ইস্তাহার প্রকাশের পর বক্তব্য রাখতে উঠে মোদী নিজের ‘গ্যারান্টি’র কথা উল্লেখ করে বলেন, “দুর্নীতিগ্রস্তদের বিরুদ্ধে এই ধরনের কঠোর পদক্ষেপ করা জারি থাকবে। দুর্নীতি করলে জেলে থাকতে হবে।” বিজেপির লোকসভা ভোটের ইস্তাহারেও লেখা হয়েছে, “সারা দেশে চাকরিতে নিয়োগ সংক্রান্ত পরীক্ষায় অনিয়ম রুখতে আমরা ইতিমধ্যেই কঠোর আইন এনেছি। আমরা ভবিষ্যতে এই আইন কঠোর ভাবে প্রয়োগ করব। যুব সম্প্রদায়ের ভবিষ্যৎ যাঁরা নষ্ট করেছেন, তাঁদের কঠোর শাস্তির বিষয়টি সুনিশ্চিত করা হবে।” প্রসঙ্গত, গত রবিবারই জলপাইগুড়ি জেলার ধূপগুড়ির জনসভা থেকে বাংলায় একাধিক ‘দুর্নীতি’র প্রসঙ্গ তুলে তদন্তে গতি আনার ‘গ্যারান্টি’ দিয়েছিলেন মোদী। তিনি বলেছিলেন, ‘‘আমি গ্যারান্টি দিচ্ছি, ৪ জুনের পর দুর্নীতিগ্রস্তদের বিরুদ্ধে তদন্ত আরও জোরদার হবে।’’ বিজেপির ইস্তাহারেও যেন সেই প্রতিশ্রুতিই শোনা গেল।
প্রথম দফায় লোকসভা ভোট হবে আগামী শুক্রবার। তার চার দিন আগে ইস্তাহার প্রকাশ করল বিজেপি। তাদের ‘সঙ্কল্পপত্রে’ ‘মোদীর গ্যারান্টি’র উপরেই জোর দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে জানানো হয়েছে, মোদী দলের ইস্তাহারে মহিলা, যুব সম্প্রদায়, কৃষক এবং গরিব মানুষকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। হিন্দিতে এই চারটি শ্রেণির আদ্যক্ষরকে জুড়লে হয় ‘জ্ঞান’। দলের ইস্তাহার প্রকাশ হওয়ার পর বক্তব্য রাখতে উঠে মোদী বলেন, “মোদীর গ্যারান্টি এই যে, বিনামূল্যে রেশন বণ্টনের প্রকল্প আগামী ৫ বছরের জন্য চালু থাকবে।” বিজেপি ক্ষমতায় ফিরলে পাইপলাইনের মাধ্যমে বাড়ি বাড়ি গ্যাস এবং পানীয় জল পৌঁছে যাবে বলেও জানান তিনি।
তা ছাড়াও বিজেপির ইস্তাহারে দেওয়া প্রতিশ্রুতি উদ্ধৃত করে মোদী জানান, দল তৃতীয় বারের জন্য কেন্দ্রে ক্ষমতায় এলে ‘আয়ুষ্মান ভারত’ প্রকল্পের আওতায় সত্তরোর্ধ্ব সমস্ত মানুষ পাঁচ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনামূল্যে চিকিৎসা পাবেন। তিনি এ-ও জানান যে, ‘প্রধানমন্ত্রী সূর্য ঘর ফ্রি ইলেকট্রিসিটি স্কিম’ প্রকল্পে বিনামূল্যে বিদ্যুৎ পরিষেবা পাওয়ার পাশাপাশি বিদ্যুৎ বিক্রির সুযোগও থাকবে। মুদ্রা যোজনা প্রকল্পে ঋণ নেওয়ার সর্বোচ্চ সীমা ১০ লক্ষ থেকে বাড়িয়ে ২০ লক্ষ টাকা করার কথা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন মোদী। এই প্রকল্পে কোটি কোটি দেশবাসীকে উদ্যোগপতি করেছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
বন্দে ভারত নিয়েও বড় ঘোষণা করেছেন মোদী। বলেছেন, “বন্দে ভারত স্লিপার, বন্দে ভারত চেয়ারকার এবং বন্দে ভারত মেট্রো দেশের প্রতিটি কোণায় ছড়িয়ে দেবে বিজেপি।” আমদাবাদ-মুম্বই বুলেট ট্রেনের কাজও পূর্ণ উদ্যমে চলছে বলে জানান তিনি। রবিবার দেশবাসীর উদ্দেশে মোদীর ‘গ্যারান্টি’, উত্তর ভারত, দক্ষিণ ভারত এবং পূর্ব ভারতে একটি করে বুলেট ট্রেন চলবে। তার সমীক্ষার কাজও শুরু হয়ে গিয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।
বিজেপির প্রতিশ্রুতিতে আলাদা করে গুরুত্ব পেয়েছে মহিলা এবং কৃষকদের কথা। কৃষকদের ন্যায্য সহায়ক মূল্য (এমএসপি)-র আইনি নিরাপত্তা, তাঁদের ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে যুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি। আবাস যোজনা প্রকল্পে দেশে আরও তিন কোটি পাকা বাড়ি তৈরির প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন তিনি।
বিজেপির ‘সঙ্কল্পপত্রে’ এক দেশ এক ভোট, অভিন্ন দেওয়ানি বিধি, ২০৩৬ সালে অলিম্পিক্স আয়োজনের জন্য দরপত্র আহ্বানের কথা বলা হলেও মোদীর ভাষণে গুরুত্ব পেয়েছে জনমুখী প্রকল্প সংক্রান্ত গবেষণাই। ২০২৫ সালকে ‘জনজাতি গৌরব বর্ষ’ হিসাবে পালন করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। দেশের জনজাতি ভোটের কথা মাথায় রেখে এই সিদ্ধান্ত বলে মনে করা হচ্ছে।