চিকিৎসক প্রণত টুডু। নিজস্ব চিত্র
চাকরিতে ইস্তফা দিয়েও শেষ দিনে হাসপাতালে রোগীদের পরিষেবা দিলেন ঝাড়গ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের রেডিয়োলজি বিভাগের চিকিৎসক প্রণত টুডু। জেলায় খবর ভাসছে, জনজাতি সংরক্ষিত ঝাড়গ্রাম আসনে তিনিই নাকি বিজেপির প্রার্থী! গেরুয়া শিবিরের অন্দরের খবরও এমনই। ওই আসনে সাঁওতালি সাহিত্যিক কালীপদ সরেনকে (পাঠকমহলে খেরওয়াল সরেন নামে পরিচিত) প্রার্থী করেছে তৃণমূল। তাঁকে নিয়ে প্রচারও শুরু করে দিয়েছে শাসকদল। বিজেপি এখনও এই আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেনি।
গতবার এই আসনে বিজেপি প্রার্থী করেছিল কুনার হেমব্রমকে। তিনি জিতেও ছিলেন। তবে এবার অবশ্য লোকসভা ভোটের আগে দলত্যাগ করেছেন তিনি। ফলে এবার এখানে কে প্রার্থী হবেন তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে নানা জল্পনা চলছে। প্রার্থীর নাম ফাঁকা রেখেই দেওয়াল লিখন করছে বিজেপি। তবে গেরুয়া শিবিরের লোকজনই বলছেন, প্রার্থীর নাম ছাড়া প্রচার তেমন জমছে না। সূত্রের খবর, মঙ্গলবার বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বের তরফে জেলা নেতৃত্বকে জানানো হয়েছে, ঝাড়গ্রাম আসনে প্রণত টুডুকেই প্রার্থী করা হচ্ছে। ঘটনাচক্রে এরপরই মঙ্গলবার হাসপাতালের মেডিক্যাল সুপারের কাছে ইস্তফাপত্র জমা দেন প্রণত। তবে মঙ্গলবারও রোগীদের পরিষেবা দিলেন তিনি।
মঙ্গলবার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক রোগীর অ্যাপেনডিক্সে জমা পূঁজ বের করার প্রয়োজন হয়। বেলপাহাড়ির দলদলি গ্রামের বছর বাহান্নোর থারামোহন টুডু বেশ কয়েকদিন ধরে পেটে যন্ত্রণার উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি। অ্যাপেনডিক্সে সংক্রণের দরুণ পূঁজ জমে গিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে অস্ত্রোপচার করাটা ঝুঁকিবহুল। হাসপাতালের শল্য চিকিৎসক সৈকত রানা জানান, রোগীর অ্যাপেনডিক্সে জমে থাকা পূঁজ বের করাটা জরুরি ছিল। না হলে সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা ছিল। বিষয়টি জানার পরই রেডিয়োলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অনিন্দ্য বন্দ্যোপাধ্যায় ও প্রণত টুডু মিলে ওই রোগীর পেটে ছোট ছিদ্র করে আলট্রাসোনোগ্রাফির মাধ্যমে পিগটেল ক্যাথিটার দিয়ে পূঁজ বের করেন। রোগী এখন সুস্থ আছেন। ওই দিন রেডিয়োলজি বিভাগে অন্যান্য দিনের মতো পরিষেবা দানের কাজও করেন প্রণত। ঝাড়গ্রাম মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষা সুস্মিতা ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘প্রণত টুডুর ইস্তফাপত্র স্বাস্থ্য ভবনে পাঠানো হবে।’’
তাহলে প্রণত টুডুই কি বিজেপি প্রার্থী? এ বিষয়ে গেরুয়া শিবিরের জেলা নেতারা মুখে কুলুপ এঁটেছেন। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলার এক বিজেপি নেতা বলছেন, ‘‘একাধিক প্রার্থীর নাম বিবেচনায় ছিল। প্রণতবাবু যদি সরকারি চিকিৎসক পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে থাকেন তাহলে হয়তো তিনিই প্রার্থী হচ্ছেন।’’ বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য সুখময় শতপথী বলছেন, ‘‘শীর্ষ নেতৃত্ব প্রার্থীর নাম ঘোষণা করবেন। কে প্রার্থী হবেন সেটা জানার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। এটুকু বলতে পারি খুব ভাল প্রার্থী দেওয়া হচ্ছে।’’
প্রণতের আদিবাড়ি ঝাড়গ্রাম লোকসভার অন্তর্গত পশ্চিম মেদিনীপুরের গোয়ালতোড় থানার দোবাটি গ্রামে। কর্মসূত্রে ঝাড়গ্রাম শহরে থাকেন তিনি। গত ১২ বছর তিনি ঝাড়গ্রাম হাসপাতালের রেডিয়োলজি বিভাগে ছিলেন। সক্রিয় রাজনীতি না করলেও গত কয়েক মাস বিজেপির জেলা কার্যালয়ে বিভিন্ন কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছিলেন প্রণত। বিভিন্ন সমাজসেবা মূলক কাজের সঙ্গেও যুক্ত তিনি। বিভিন্ন গ্রামে স্বাস্থ্য শিবির, জঙ্গলমহলের মণীষীদের জন্মজয়ন্তী পালন, ভাষা প্রসারের মত নানা কাজে ইতিপূর্বে প্রণতকে দেখা গিয়েছে। প্রণত বলছেন, "সরকারি চিকিৎসকের পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছি। এর বেশি এখনই কিছু বলার মত সময় আসেনি।’’
তৃণমূল অবশ্য প্রণত টুডুকে আলাদা করে গুরুত্ব দিতে নারাজ। জেলা তৃণমূলের সভাপতি দুলাল মুর্মু বলছেন, ‘‘চিকিৎসক, গায়ক, নায়ক যাকে খুশি বিজেপি প্রার্থী করতে পারে। তবে রাজ্য সরকারের নিবিড় উন্নয়ন ও পরিষেবায় উপকৃত জঙ্গলমহলের ভোটাররা তৃণমূল প্রার্থীকেই বিপুল ভোটে জয়ী করবেন।’’