গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
আবাস যোজনা এবং ১০০ দিনের কাজের প্রকল্প নিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বঞ্চনার অভিযোগে অনেক দিন ধরেই বিজেপির বিরুদ্ধে তোপ দেগে চলেছে তৃণমূল। দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপিকে এ নিয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশেরও দাবি জানান।
এই পরিস্থিতিতে সত্যিই শ্বেতপত্র প্রকাশ করেছে বিজেপি। গোটা দেশের কোন রাজ্যের কোন লোকসভা এলাকায় নরেন্দ্র মোদী সরকার কোন প্রকল্পে কী কী কাজ করেছে, তা অনলাইনের মাধ্যমে সামনে আনা হয়েছে। ‘শ্বেতপত্র ডট ইন’ নামে একটি পোর্টাল তৈরি করা হয়েছে। তাতে ধাপে ধাপে এগোলে বিজেপির দাবি করা তথ্যের ভিডিয়ো এবং পরিসংখ্যান পাওয়া যাচ্ছে।
শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবিতে সব চেয়ে সরব তৃণমূলের সেনাপতি অভিষেক। তিনি দাবি করেন, ২০২১ সালে নীলবাড়ির লড়াইয়ে হেরে যাওয়ার পর থেকেই রাজ্যের আবাস যোজনা এবং ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পের জন্য এক পয়সাও বরাদ্দ করেনি কেন্দ্র। এ নিয়ে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে শ্বেতপত্র প্রকাশের চ্যালেঞ্জও ছোড়েন অভিষেক। গত ১৪ মার্চ এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে অভিষেক লিখেছেন, ‘‘মিথ্যাচার করার জন্য কেন্দ্রের বিজেপি সরকার জনগণের টাকা নষ্ট করছে। আমি বিজেপি নেতৃত্বকে আমার সঙ্গে মুখোমুখি তর্কে বসার চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছি। ২০২১ সালে রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে পরাজয়ের পর থেকে আবাস যোজনা এবং ১০০ দিনের কাজের মতো প্রকল্পগুলিতে এক পয়সাও বরাদ্দ করেনি কেন্দ্র। আমি যে ভুল, তা প্রমাণ করার জন্য বিজেপিকে শ্বেতপত্র প্রকাশ করার চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছি।’’
এর পরে অনেক বিতর্ক হয়েছে। ২৮ মার্চ অভিষেক ফের নিজের এক্স হ্যান্ডলে লেখেন, “প্রায় দু’সপ্তাহ, ৩৫০ ঘণ্টা হয়ে গেল। কিন্তু বিজেপি এখনও আবাস এবং ১০০ দিনের কাজ নিয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশে আমার চ্যালেঞ্জ গ্রহণে এগিয়ে এল না।” সেই সময়ে রাজ্য বিজেপির পক্ষেও অভিষেককে জবাব দেওয়া হয়। অভিষেকের শ্বেতপত্রের চ্যালেঞ্জ প্রসঙ্গে পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় দলের মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, “আমি যদি বলি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শ্বেতপত্র প্রকাশ করে জমা দিন, দেবেন মুখ্যমন্ত্রী? অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় প্রধানমন্ত্রীকে চ্যালেঞ্জ করছেন শ্বেতপত্র প্রকাশ করার জন্য। এ কথা তো রাজ্য সরকারের সচিবেরা কেন্দ্র সরকারকে বলতে পারলেন না! আদালতে বলতে পারলেন না।”
তবে সে সব বিতর্ককে অতীত করে অনলাইনে শ্বেতপত্র প্রকাশ করল বিজেপি। যদিও তাতে রাজ্যকে কোন খাতে কোন বছরে কত টাকা দেওয়া হয়েছে তা আলাদা করে বলা হয়নি। প্রতিটি লোকসভা আসন ধরে ধরে সেখানে কোন কেন্দ্রীয় প্রকল্পে কী কাজ হয়েছে বা কত জন তার সুবিধা পেয়েছেন তার হিসাব পেশ করা হয়েছে বিজেপির তরফে। পোর্টালে কেন্দ্রীয় সরকারের কাজের সঠিক পরিসংখ্যান রয়েছে বলেও দাবি করা হয়েছে।
‘শ্বেতপত্র ডট ইন’ পোর্টাল খুললে সত্যিই একটি সাদা পাতা দেখা যাচ্ছে। বাঁ দিকে নীল রঙে লেখা ‘হোয়াইট পেপার’ আর ডান দিকের একেবারে উপরে ভাষা পছন্দের ‘অপশন’। আর মাঝখানে সাদার উপরে কালো দিয়ে লেখা ‘অল ইন্ডিয়া’। এর নীচে রাজ্য পছন্দ করার সুযোগ। ‘ড্রপডাউন’-এ গেলেই একেবারে নীচে পশ্চিমবঙ্গ। সেখানে ক্লিক করলে লোকসভা আসন পছন্দ করার সুযোগ।
যে হেতু ‘শ্বেতপত্র’ প্রকাশের দাবিতে অভিষেক সব চেয়ে বেশি সরব, তাই সেই আসনটিই বেছে নেয় আনন্দবাজার অনলাইন। সেখানে ভিডিয়ো এবং নানা প্রকল্প অনুযায়ী তথ্য-চিত্র। সেখানে প্রতিটি ভাগে গেলে গ্রাফিকের মাধ্যমে দেখানো হয়েছে মোদী জমানায় কোন ক্ষেত্রে কেমন উন্নয়ন হয়েছে। একটি ড্যাশবোর্ডও রয়েছে। যেখানে গেলে একসঙ্গে সব প্রকল্পের তথ্য দেখা যাচ্ছে। দাবি করা হয়েছে, ২০১৯ থেকে ২০২৩ সালে ডায়মন্ড হারবার এলাকায় জল জীবন মিশন প্রকল্পে ৪৫,৪৯৫ নলবাহিত পানীয় জলের কল হয়েছে। ১৪টি জনৌষধি কেন্দ্র থেকে স্বচ্ছ ভারত মিশন প্রকল্পে ২০১৪ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ৬৬,৪৯২টি শৌচাগার নির্মিত হয়েছে। মোট ১৭টি প্রকল্পের যে হিসাব দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার কথাও রয়েছে। মোদীর কালে বাংলার ওই লোকসভা আসন এলাকায় ৫৫,২৮১টি বাড়ি তৈরি হয়েছে বলেও দাবি করা হয়েছে। তৈরি হয়েছে ১০৯ কিলোমিটার প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনার রাস্তা। তবে অভিষেক ১০০ দিনের কাজ বাবদ রাজ্যের পাওনা নিয়ে যে প্রশ্ন তুলেছেন, তার উত্তর নেই এই পোর্টালে।