বৃহস্পতির বারবেলায় ‘মুকুট’হীন বিজেপি, দলের বিধায়ক মমতার মিছিলে, যোগের মধ্যেই বিয়োগ

২০১৯ সালে মুকুটমণি লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির প্রার্থী হবে বলে ঠিক হয়েছিল। তখন তিনি সরকারি হাসপাতালে চাকরি করতেন। রাজ্য সরকার অনুমতি না দেওয়ায় প্রার্থী হতে পারেননি।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ মার্চ ২০২৪ ১৫:০৪
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মুকুটমণি অধিকারী।  বৃহস্পতিবার।

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মুকুটমণি অধিকারী। বৃহস্পতিবার। — নিজস্ব চিত্র।

পদ্ম-শিবিরে বৃহস্পতিবারই যোগ দিয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। তা নিয়ে উচ্ছ্বাসের মধ্যেই বিজেপিতে ‘বিয়োগ-বেদনা’। দলের মতুয়া বিধায়ক মুকুটমণি অধিকারীকে দেখা গেল তৃণমূলের মিছিলে। রানাঘাট দক্ষিণের ওই চিকিৎসক বিধায়কের হাতে জাতীয় স্তরের দায়িত্বও রয়েছে। জাতীয় কার্যকারিণী কমিটির কনিষ্ঠতম সদস্য তিনি। এ বার তিনি কি তবে শাসক শিবিরে চলে গেলেন?

Advertisement

জবাব দিয়েছেন মুকুট নিজেই। ধর্মতলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যের সভামঞ্চে তৃণমূলের পতাকা হাতে নেওয়ার আগে তিনি বললেন, ‘‘গত পাঁচ বছর ধরে যে বঞ্চনার শিকার হয়েছেন নদিয়ার মানুষ, যেভাবে সেখানে কোনও পরিষেবা দেওয়া হয়নি, তার সুবিচার করতেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের আশীর্বাদধন্য হয়ে আমি তৃণমূলে যোগ দিচ্ছি। যাতে নদিয়াবাসীকে রাজনৈতিক হিংসামুক্ত পরিবেশ দিতে পারি। পরিষেবা দিতে পারি। বঞ্চনার ইতিহাস মেটাতে পারি।’’

এ ব্যাপারে বিজেপি পরিষদীয় দলের দাবি, বধূ নির্যাতনে অভিযুক্ত মুকুটমণি অধিকারী। সেই অভিযোগে জেল হাজত থেকে বাচঁতে দলবদল করেছেন তিনি। যদিও বিজেপির অন্য একটি সূত্র জানাচ্ছে, দিল্লি গিয়ে লোকসভায় নিজের টিকিটের জন্য দরবার করে এসেছিলেন। কিন্তু সেই চেষ্টা বিফল হওয়ায় তৃণমূলে যোগদান করেছেন। রানাঘাট লোকসভায় তাঁকে তৃণমূলের প্রার্থী করা হতে পারে।

বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও এ নিয়ে একটি টুইট করেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘‘মহিলা দিবসের মিছিলে ভাইপোর পাশে কে হাঁটছে দেখুন! তিনি রানাঘাট দক্ষিণের বিধায়ক মুকুটমণি অধিকারী। গার্হস্থ্য হিংসায় অভিযুক্ত। বিয়ের ১১ দিনের মাথায় ওঁর স্ত্রী অভিযোগ করেছিলেন। হঠাৎ করে তাঁকে তৃণমূল মহিলাদের সম্মান জানানোর মিছিলের পোস্টার বয় করে দিল।’’ এই এক্সের সঙ্গে তিনি মুকুটমণির বিরুদ্ধে করা সেই সময়ের এফআইআরের প্রতিলিপিও পোস্ট করেছিলেন।

মুকুটমণির বিরুদ্ধে তদন্তশেষে যে চার্জশিট আদালতে জমা পড়ে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তার একটি প্রতিলিপিও এক্সে পোস্ট করেন শুভেন্দু।

শুভেন্দুর এই জোড়া এক্স পোস্টের পর পাল্টা পোস্ট করেন রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। এক্স হ্যান্ডলে মুকুটমণির একটি ছবি পোস্ট তিনি লেখেন, ‘‘মাত্র পাঁচ বছর আগে তিনি প্রধানমন্ত্রীর সভামঞ্চে বসেছিলেন। বিজেপি কেন গত ২০ মাসে তাঁকে দল থেকে এই মামলার জন্য বহিষ্কার করেনি? এখন কেন হঠাৎ দোষারোপ করা হচ্ছে? কারণ, তিনি জমিদারদের প্রত্যাখ্যান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন?

শুক্রবার নারী দিবস। সেই উপলক্ষে বৃহস্পতিবার পদযাত্রা করেন মমতা। সঙ্গে ছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই মিছিলেই অভিষেকের পাশে হাঁটেন রানাঘাট দক্ষিণের বিজেপি বিধায়ক মুকুটমণি।

বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৯ সালে মুকুটমণি লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির প্রার্থী হবেন বলে ঠিক হয়েছিল। তখন তিনি সরকারি হাসপাতালে চাকরি করতেন। কিন্তু রাজ্য সরকার অনুমতি না দেওয়ায় প্রার্থী হতে পারেননি। এর পরে তিনি চাকরি ছেড়ে বিধানসভা ভোটে প্রার্থী হন। রানাঘাট দক্ষিণ থেকে জেতেন। রানাঘাটে এ বারও তিনি বিজেপির লোকসভা ভোটের প্রার্থী হবেন বলে মনে করেছিল তাঁর শিবির। কিন্তু বিজেপির তরফে আবার জগন্নাথ সরকারকেই টিকিট দেওয়া হয়। রানাঘাটের রাজনীতিতে জগন্নাথ আর মুকুটমণির ঝগড়া সর্বজনবিদিত। প্রার্থী হতে না পেরে তিনি তৃণমূল যোগদান করছেন বলেই বিজেপি পরিষদীয় দলের দাবি।

উল্লেখ্য, গত বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি ৭৭ আসনে জিতলেও পরে উপনির্বাচনে তিনটি আসন হারতে হয়। এ ছাড়াও পাঁচ বিধায়ক বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে গিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে এক জন সৌমেন রায়কে সদ্যই দলে ফিরিয়েছে বিজেপি। এরই মধ্যে তৃণমূলের বিধায়ক তাপস রায় বুধবার বিজেপিতে গিয়েছেন। এ বার মুকুটমণি তৃণমূলমুখী। লোকসভা নির্বাচনের আগে যোগ-বিয়োগ পর্বের নতুন অধ্যায় চলছে রাজ্যে।

আরও পড়ুন
Advertisement