Viral Kaka

‘কালীঘাটের কাকু’র পরে কেশপুরের ‘কাকা’! হিরণকে ভাষা জুগিয়ে বাংলার নয়া ‘খুল্লতাত’ দেবের বুকে

রাজ্য রাজনীতি আগেই ‘কাকাবাবু’ দেখেছে। বাংলা সাহিত্যও ‘কাকাবাবু’কে পেয়েছে। সাম্প্রতিক রাজনীতিতেও পর পর দুই ‘খুল্লতাত’ আলোচনায়। এক জন ‘কাকু’, অন্য জন ‘কাকা’।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২১ মে ২০২৪ ১৮:০৪
After Kalighater Kaku, Kaka from Keshpur becomes famous for giving answer to Hiran Chatterjee

(বাঁ দিকে) দেবের সঙ্গে এবং (ডান দিকে) হিরণের পাশে হপনম মান্ডি। ছবি: এক্স থেকে।

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কলমে ‘কাকাবাবু’ চরিত্র রাজা রায়চৌধুরীর জন্মের আগেই রাজ্য রাজনীতি পেয়েছিল ‘কাকাবাবু’ নামে খ্যাত এক রাজনীতিককে। তিনি ছিলেন ভারতে প্রতিষ্ঠাতা মুজফ্‌ফর আহমেদ। সে কালের বাম রাজনীতির লোকজনেরা তাঁকে ‘কাকাবাবু’ নামেই সম্বোধন করেন। এর পরে বাংলার রাজনীতি আরও এক ‘কাকা’ পায়। কারও রক্ত সম্বন্ধীয় ‘খুল্লতাত’ না হলেও নকশাল নেতা অসীম চট্টোপাধ্যায় তো সকলেরই ‘কাকা’।

Advertisement

তবে রাজ্য রাজনীতিতে ইদানীং সবচেয়ে আলোচিত ‘খুল্লতাত’ হলেন ‘কালীঘাটের কাকু’। শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের বাড়ি কালীঘাটে। কিন্তু তাঁকে কে ‘কালীঘাটের কাকু’ ডাকতেন তা নিয়ে স্পষ্ট উত্তর নেই। একই অভিযোগে ধৃত তাপস মণ্ডল দাবি করেছিলেন, হুগলি থেকে গ্রেফতার হওয়া তৃণমূলের প্রাক্তন যুব নেতা কুন্তল ঘোষ নাকি সুজয়কৃষ্ণকে ‘কালীঘাটের কাকু’ বলে ডাকতেন। ব্যস। এ কথা রটে যাওয়ার পরে সুজয়কৃষ্ণ গোটা বাংলার কাছেই ‘কালীঘাটের কাকু’ হয়ে গিয়েছেন।

এ বার প্রচারের আলোয় কেশপুরের এক ‘কাকা’। ঘাটাল লোকসভা আসনে যুযুধান দুই অভিনেতার সঙ্গে তাঁর নাম জড়িয়ে গিয়েছে। বিজেপির হিরণ চট্টোপাধ্যায় সম্প্রতি কেশপুরে গিয়েছিলেন দলীয় এক কর্মীর বাড়িতে। সেখানেই আবির্ভাব হয় ‘কাকা’র। তাঁর বলা কথা নিয়ে সমাজমাধ্যমে হাসি-তামাশা চলছিল। ‘ভাইরাল’ সেই ‘কাকা’কে মঙ্গলবার কাছে টেনে নিয়ে নতুন করে ‘ভাইরাল’ করলেন তৃণমূল প্রার্থী দেব। এই সূত্রে মনে পড়তে পারে করোনাকালেও এমনই এক ‘কাকু’ ভাইরাল হয়ে গিয়েছিলেন। লকডাউনের মধ্যেও লুকিয়ে চা খেতে গিয়েছিলেন অনেকেই। কিন্তু এক মেয়ের মোবাইল ক্যামেরায় ধরা পড়ে গিয়েছিলেন তিনি। সরল প্রশ্ন করেছিলেন, ‘‘আমরা কি চা খাব না? খাব না আমরা চা?’’ তার পরে তাঁকে নিয়ে লকডাউনের ঘরবন্দি জীবনে অনেক মজার উপকরণ মিলেছিল। বিস্তর ‘কমেন্ট’ বিতর্কও হয়েছিল।

এ বারের ‘কাকা’র কাহিনিটা গোড়া থেকে জানতে হবে। ২০১৬ সালে রহস্যজনক ভাবে নিখোঁজ হয়ে যান পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশপুরের বিশ্বনাথপুর এলাকার এক বিজেপি কর্মী। বিনয় মান্ডি নামে ওই বিজেপি কর্মীর খোঁজ নেই এখনও। কেশপুর ঘাটাল লোকসভারই অন্তর্গত। বিজেপির হিরণ প্রচারে বেরিয়ে বিশ্বনাথপুর এলাকায় গিয়ে নিখোঁজ বিনয়ের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করেন। কথাবার্তা বলে বেরিয়ে আসার সময়ে সংবাদমাধ্যমের সামনে পড়েন হিরণ। কেশপুরের বর্তমান অবস্থার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে মুখের ভাষা হারিয়ে ফেলেছিলেন বিজেপি প্রার্থী। তিনি বলেন, ‘‘আমি জানি না কোন ভাষায় বলব, আমার মুখের ভাষা হারিয়ে ফেলেছি।’’ হিরণের মুখে এমন কথা বার হতেই পাশে দাঁড়িয়ে থাকা এক মুখ দাড়ি-গোঁফের এক মধ্যবয়স্ক বলে ওঠেন, ‘‘বাংলা কথাই বলো না।’’

ব্যস! তার পর থেকেই সেই ‘‘বাংলা কথাই বলো না’’ ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। সরাসরি না হলেও তৃণমূল কর্মী, সমর্থকেরাও হিরণকে হেয় করতে ওই ভিডিয়ো ব্যবহার করতে শুরু করেন। তখনও পর্যন্ত জানা ছিল না কে এই ব্যক্তি। মঙ্গলবার আবার তিনি ভাইরাল। সে বার ছিল হিরণের সঙ্গে ভিডিয়ো। এ বার নায়ক প্রার্থী দেবের সঙ্গে স্থিরচিত্র। যে চিত্র দেব নিজেই সমাজমাধ্যমে পোস্ট করে মজার ‘ক্যাপশন’ও দিয়েছেন। লিখেছেন, ‘‘সবাই আমার ফ্যান। আমি কাকার ফ্যান।’’ দেব যে মজা করার জন্যই এই পোস্ট করেছেন তা তাঁর লেখা ক্যাপশনের ‘ইমোজি’রাই বলে দিচ্ছে। এ বার সেই ছবি নিয়েও শুরু হয়েছে তুমুল চর্চা। ছড়িয়ে পড়ছে দেব-ভক্ত থেকে তৃণমূল-ভক্তদের মোবাইলে মোবাইলে।

কেশপুরে খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে, এই ব্যক্তি হলেন নিখোঁজ সেই বিজেপি কর্মী বিনয়ের প্রতিবেশী। নাম হপনম মান্ডি। কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গেই তিনি যুক্ত নন। সে দিন ভিড় দেখে হিরণের কাছাকাছি এসেছিলেন। আর মঙ্গলবারও সেই ভিড়ই তাঁকে দেবের কাছে টেনে আনে। ছবি তোলা হয় দেবেরই উদ্যোগে।

ছবি ভাইরাল হওয়া হপনম মান্ডির বড় পরিচয় তিনি খুবই দরিদ্র। দুই নায়ক রাজনীতিকের কাছাকাছি এলেও হপ একেবারেই ছাপোষা মানুষ। দিন আনা দিন খাওয়া জীবন। গ্রাম বাংলায় এমন অনেক ‘কাকা’র মধ্যেই তিনি একজন। তবে কেশপুরের এই ‘কাকা’ প্রতিবন্ধীও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও পড়ুন
Advertisement