Lok Sabha Election 2024

ভাবমূর্তি ফেরাতে মহিলাদের সামনে রেখে ‘গান্ধীগিরি’ তৃণমূলের

দিনকয়েক আগে নিউ টাউনের শহরাঞ্চলে প্রচারে গিয়ে বারাসতের তৃণমূল প্রার্থী কাকলি ঘোষদস্তিদার নাগরিকদের কাছে ক্ষমা চেয়ে ঘোষণা করেন, পঞ্চায়েত ভোটের সেই সন্ত্রাসের ছবি লোকসভা ভোটে দেখা যাবে না।

Advertisement
প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ মে ২০২৪ ০৬:৫১

—প্রতীকী চিত্র।

গত বারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে পুলিশের গার্ডরেল ফেলে বুথের রাস্তা আটকে ভোট লুটের অভিযোগ উঠেছিল নিউ টাউনে। এ বার লোকসভা ভোট এগিয়ে আসতেই শাসকদলের নেতা-কর্মীদের সেই তাণ্ডবের স্মৃতি ফের ভাসতে শুরু করেছে নিউ টাউনের শহরাঞ্চলের বাসিন্দাদের মনে। ভাবমূর্তি ফেরাতে দলের উপরমহল এ বার স্থানীয় নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন, নিউ টাউনের শহরাঞ্চলে ‘গান্ধীগিরি’ দেখাতে হবে। এমনকি, পঞ্চায়েত নির্বাচনে যাঁরা ভোট করেছিলেন, সেই নেতা-কর্মীদেরও বদলে দেওয়া হয়েছে। অবশ্য আগামী ১ জুন, ভোটের দিন শাসকদলের সেই গান্ধীগিরি বজায় থাকবে কি না, তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন বাসিন্দারা।

Advertisement

দিনকয়েক আগে নিউ টাউনের শহরাঞ্চলে প্রচারে গিয়ে বারাসতের তৃণমূল প্রার্থী কাকলি ঘোষদস্তিদার নাগরিকদের কাছে ক্ষমা চেয়ে ঘোষণা করেন, পঞ্চায়েত ভোটের সেই সন্ত্রাসের ছবি লোকসভা ভোটে দেখা যাবে না। তিনি বলেন, ‘‘ওই ভোটের পরে আমাকে অনেকে ফোন করেছিলেন। তাঁদের কথা শুনে বুঝেছিলাম যে, তাঁরা দুঃখ পেয়েছেন। আমি তাঁদের কাছে ক্ষমা চেয়েছি। এ বার ওই জায়গায় ভোটের হাল ধরেছেন মহিলারা।’’

কিন্তু এই বোধোদয় এক বছর পরে হল কেন? তখনই কেন দুঃখপ্রকাশ করেননি? আপনি তো তখন সাংসদ? কাকলির সাফাই, ‘‘ওই ভোটে আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। আমি পরে টিভিতে দেখে সবটা জানতে পারি। আমাকে নিউ টাউনের মানুষ ফোন করে নিজেদের দুঃখের কথা জানিয়েছিলেন। ওই রকম আর ঘটবে না বলে আমি ওঁদের কথা দিয়ে এসেছি।’’

গত বছর পঞ্চায়েত নির্বাচনে জ্যাংড়া-হাতিয়াড়া পঞ্চায়েতের অধীন নিউ টাউনের শহর এলাকার প্রধান ভোট কেন্দ্র এ পি জে আব্দুল কালাম কলেজের রাস্তা পুলিশের গার্ডরেল ফেলে চার দিক দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছিল। বুথের ধারেকাছেও ঘেঁষতে দেওয়া হয়নি ভোটারদের। বয়স্ক নাগরিকেরাও ভোট দিতে গিয়ে চড়-থাপ্পড় খান, নিগ্রহের মুখে পড়েন। নিউ টাউনকে পঞ্চায়েতের অধীনে রাখার বিরুদ্ধে প্রতিবাদের নামে ভোট বয়কটের প্ল্যাকার্ড ঝুলিয়ে আদতে ভোট লুটের অভিযোগ ওঠে শাসকদলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। রাজারহাট-গোপালপুর এলাকার এক যুব নেতার নেতৃত্বে বিধাননগর পুর এলাকার একটি বিরাট অংশের তৃণমূল নেতারা সেই কাণ্ড ঘটিয়েছিলেন বলে অভিযোগ ওঠে। সেই ভোটের পরে নিউ টাউনের মতো শহুরে এলাকার বাসিন্দারা শাসকদলের ওই দুর্ব্যবহারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে একাধিক সভা করেছিলেন।

পঞ্চায়েত ভোটের পরে দলের ভাবমূর্তি ফেরাতে এ বার নিউ টাউনে নেতৃত্ব বদলে সামনের সারিতে রাখা হয়েছে মহিলাদের। তাঁরাই বিভিন্ন অ্যাকশন এরিয়া ঘুরে প্রচার করছেন। সেই সামনের সারিতে আছেন রাজারহাট-নিউ টাউন ব্লকের সভানেত্রী অনামিকা সাহা ও জ্যাংড়া-হাতিয়াড়া পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যা পরভিন সাবেরা। উত্তর ২৪ পরগনার জেলা পরিষদের সদস্য তথা রাজারহাট-নিউ টাউনের যুব তৃণমূল সভাপতি মহম্মদ আফতাবউদ্দিন বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত ভোটের সময়ে আমরা ছিলাম না। এটা ঠিকই যে, কিছু সমস্যা হয়েছিল। তা নিয়ে মানুষ দুঃখ পেয়েছেন। যে কারণে এ বার ওই সব এলাকায় মহিলাদের দিয়ে ভোট পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আমরা প্রচারে বলেছি, নির্ভয়ে ভোট দিতে আসুন। যাকে ইচ্ছে ভোট দিন।’’

পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূলের একতরফা জয়ের পরেই আদালতে মামলা করেছিল সিপিএম। নিউ টাউনে দলের নেতা সপ্তর্ষি দেব বলেন, ‘‘এটা নতুন নাটক তৃণমূলের। পঞ্চায়েত নির্বাচনে সাধারণ নাগরিকদের সঙ্গে ওই ব্যবহার করার পরে এখন গান্ধীগিরির নাটক না করলে ভোট চাইতে আসার যে মুখ নেই, তা বুঝেছে তৃণমূল। সে বার যাঁরা বুথের রাস্তা বন্ধ করে মানুষকে ধমক-চমক দিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে বহু মহিলাও ছিলেন। আমরা প্রচারে গিয়ে পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূলের দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্যের কথা মনে করিয়ে দিয়ে মানুষকে সচেতন করছি। তবে এ বারে এমনিতেই পঞ্চায়েতের মতো কিছু করার সুযোগ থাকবে না।’’

আরও পড়ুন
Advertisement